নিজস্ব সংবাদদাতা, সামশেরগঞ্জ : এক হিন্দু মহিলা মৌসুমি প্রামাণিক কে রক্ত দিয়ে সম্প্রীতির নজীর সৃষ্টি করলো মুর্শিদাবাদের এক মুসলিম যুবক মোহা: সিরাজদৌল্লা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যখন নানারকম ঘটনা ঘটিয়ে হিন্দু মুসলিম বিভাজনের চেষ্টা চলছে, ঠিক তখন ভিন ধর্মের এক হিন্দু মহিলাকে প্রাণে বাচাতে রক্ত দিতে এগিয়ে আসছে এক মুসলিম যুবক! এমনই এক সম্প্রীতির চিত্র ধরা পড়লো মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের রানিপুর গ্রামে। সন্তান প্রসবের কারণে মৌসুমি নামের ওই মহিলার ব্যপক রক্তপাত হয়। প্রয়োজন পড়ে রক্তের। গরিব মানুষ কিভাবে রক্তের ব্যবস্থা করবে সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছিলো মৌসুমির পরিবার। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার সেই খবর পেয়ে রাতে তাকে রক্তদান করতে এগিয়ে আসেন বছর ২৪ এর ওই মুসলিম যুবক। যুবকের বাড়ি সামশেরগঞ্জের খেজুরতলা। পরিবার সুত্রে জানা গেছে, সন্তান প্রসবের কারণে অসুস্থ হয়ে গত তিনদিন আগে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ভরতি করা হয় মহিলাকে। মহিলার শরীরে রক্ত না থাকায় বি পজিটিভ রক্তের ব্যবস্থা করতে বলেন ডাক্তাররা। রক্তের চিন্তায় খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন মৌসুমির স্বামী পেশায় নাপিত মিঠুন প্রামাণিক। তার বিপদের খবর পেয়ে এগিয়ে আসেন লাইফ সেভার অর্গানাইজেশন নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার সভাপতি উমার ফারুক তৎক্ষনাত তার সংস্থার সদস্য সিরাজদোল্লাকে রক্ত দিতে বলেন। সাথে সাথেই রাজি হয়ে যান সিরাজ। ছুটে যান বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই নিজের শরীর থেকে রক্ত দিতে মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ডোনেশন রুম গিয়ে ঘন্টা খানেক শুয়ে থেকে রক্ত দেন তিনি। সেই রক্ত নিজে গিয়ে ডাক্তার বাবুদের হাতে তুলে দেন ওই যুবক।এদিকে রক্তদান করার পর ওই যুবক সিরাজদোল্লা বলেন, ‘ আমি বছর তিনেক থেকে লাইফ সেভার অর্গানাইজেশন নামে একটি সামাজিক সংস্থার সাথে যুক্ত আছি। এই সংস্থা মানুষকে ফ্রিতে রক্ত পরিষেবা দিয়ে থাকে। আমার প্রতিবেশির রক্তের দরকার শুনেই আমি ওই মহিলাকে রক্ত দিয়ে সাহায্য করি। রক্তের সাথে ধর্মের সম্পর্ক নেই, বিপদের সময় হিন্দু মহিলাকে সাহায্য করতে পেয়ে আমি ভীষন আনন্দিত। অপরদিকে লাইফ সেভার অর্গানাইজেশনের সভাপতি উমার ফারুক জানান , আমরা ওই মহিলার রক্তের খবর জানতে পেরেই তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসি ,ইতিমধ্যেই তাকে এক প্যাকেট রক্ত দেওয়া হয়েছে, বাকি আরো যা রক্ত লাগে আমরাই তার ব্যবস্থা করবো। জাতভাই নয়, আমরা সকলেই মানুষ, বিপদ হয়েছে, আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি। এদিকে সংস্থার সাহায্য পেয়ে স্বভাবতই ব্যপক খুশি ঐ মহিলার পরিবার ও প্রতিবেশিরা।