World Wetlands Day বিশ্ব জলাভূমি দিবস: প্রকৃতি রক্ষার সংকল্পে বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ

Published By: Imagine Desk | Published On:

World Wetlands Day আজ ২ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব জলাভূমি দিবস। জলাভূমির গুরুত্ব, সংরক্ষণ এবং পরিবেশের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৭১ সালে ইরানের রামসার Ramsar, Iran শহরে এক ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা “রামসার কনভেনশন Ramsar Convention on Wetlands  নামে পরিচিত। এরপর ১৯৯৭ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্ব জলাভূমি দিবস পালিত হচ্ছে।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে জলাভূমির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। জলাভূমি ধ্বংসের ফলে জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, মৎস্যচাষ এবং মানুষের জীবন-জীবিকা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে জলাভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

World Wetlands Day  জলাভূমি: প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলাভূমি শুধু জল ধরে রাখার জায়গা নয়, এটি বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করে। জলাভূমির গুরুত্ব অনেক ক্ষেত্রেই অমূল্য—

🔹 প্রাকৃতিক জলাধার: জলাভূমি বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে এবং ভূগর্ভস্থ জলস্তরকে পুনরুজ্জীবিত করে।
🔹 বন্যা নিয়ন্ত্রণ: জলাভূমি অতিরিক্ত জল শোষণ করে বন্যার প্রকোপ কমায়।
🔹 জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল: বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় বহু প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রধান আশ্রয়স্থল জলাভূমি।
🔹 জলবায়ু পরিবর্তন রোধ: জলাভূমি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
🔹 স্থানীয়দের জীবিকা: মৎস্যজীবী, কৃষক, পর্যটন ব্যবসায়ীসহ অনেকের জীবিকা জলাভূমির ওপর নির্ভরশীল।

World Wetlands Day  বাংলার জলাভূমি সংকট

পশ্চিমবঙ্গের জলাভূমিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পূর্ব কলকাতা জলাভূমি, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বন, বিভিন্ন জেলার বিল, হাওর, এবং ছোট ছোট জলাশয়। একসময় বাংলার বিস্তীর্ণ অংশে জলাভূমির বিস্তার থাকলেও, নগরায়ন, কৃষিকাজের জন্য জলাভূমি ভরাট, এবং অপরিকল্পিত নির্মাণের ফলে বহু জলাভূমি আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।

পরিবেশ আন্দোলন কর্মী অরুণ সেন এই সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,
“জলাভূমি ধ্বংস মানেই আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস। জলাভূমি শুধু জল ধরে রাখে না, এটি আমাদের জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষা করে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমায়, এবং জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। বাংলার বহু জলাভূমি ইতিমধ্যেই হারিয়ে গেছে, যদি এখনই পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো।”

World Wetlands Day এ বছরের বিশ্ব জলাভূমি দিবসের প্রতিপাদ্য

প্রতি বছর বিশ্ব জলাভূমি দিবস একটি বিশেষ থিমকে কেন্দ্র করে পালিত হয়। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় “জলাভূমি ও মানুষের কল্যাণ”, যা জলাভূমির সংরক্ষণ এবং মানবকল্যাণের মধ্যে সম্পর্ক তুলে ধরেছে।

World Wetlands Day কী করা উচিত?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলাভূমি রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে—

🔹 জলাভূমি দখল ও ভরাট বন্ধ করা: জলাভূমি রক্ষার জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।
🔹 প্রাকৃতিক পুনর্বাসন: ধ্বংসপ্রাপ্ত জলাভূমিগুলিকে পুনরুদ্ধার করতে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবিদদের উদ্যোগ নিতে হবে।
🔹 স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ: জলাভূমি সংরক্ষণে স্থানীয় বাসিন্দাদের যুক্ত করা এবং তাদের জীবিকা নিশ্চিত করা দরকার।
🔹 নদী ও জলাশয়ের সংযোগ পুনরুদ্ধার: জলাভূমি ও নদীর মধ্যকার স্বাভাবিক সংযোগ ফিরিয়ে আনতে হবে।
🔹 প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষের মধ্যে জলাভূমির গুরুত্ব বোঝাতে স্কুল, কলেজ ও গণমাধ্যমে প্রচার চালানো দরকার।

জলাভূমি বাঁচানোর সংকল্প

বিশ্বব্যাপী জলাভূমি রক্ষায় সচেতনতা বাড়ছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। পরিবেশবিদরা মনে করেন, জলাভূমি সংরক্ষণ শুধুমাত্র পরিবেশ রক্ষার জন্য নয়, এটি মানুষের সুস্থতার জন্যও অপরিহার্য।

পরিবেশ আন্দোলন কর্মী অরুণ সেন বলেন,
“জলাভূমি সংরক্ষণ শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সকলের দায়িত্ব। প্রতিটি নাগরিককেই এগিয়ে আসতে হবে। জলাভূমি ধ্বংস হলে আমরা ভবিষ্যতে ভয়াবহ জলসংকটের মুখে পড়বো। তাই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করাই হবে আগামী প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।”

World Wetlands Day  শেষ কথা

বিশ্ব জলাভূমি দিবস উপলক্ষে বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, জলাভূমি সংরক্ষণ এখন আর বিলাসিতা নয়, এটি টিকে থাকার লড়াই। জলাভূমির গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষ যত বেশি সচেতন হবে, তত বেশি সম্ভাবনা থাকবে এই অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করার। বিশ্বজুড়ে জলাভূমি রক্ষার আন্দোলন আজ জরুরি হয়ে উঠেছে। সময় থাকতে প্রকৃতিকে রক্ষা করা—এটাই আমাদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব।

📍 আপনিও কীভাবে জলাভূমি সংরক্ষণে অংশ নিতে পারেন? আপনার মতামত আমাদের জানান!