মধ্যবঙ্গ নিউজ ডেস্কঃ মাটির প্রতিমার গহনা থেকে সাজ তৈরি করেন শিল্পী পিন্টু দাস। প্রায় ৫০ বছর ধরে উৎসবের সময়ে দেবীর গহনা তৈরি করে আসছেন এই শিল্পী। কালের নিয়মে পাল্টেছে সাজের ধরণ। নিজের কাজেরও ধরণেও এনেছেন অভিনবত্ব। প্রায় চল্লিশ পঞ্চাশ রকম আলাদা জিনিস জুড়ে এই গহনা বানান পিন্টু দাস। তার এই কাজে হাত লাগান তাঁর পুরো পরিবার। আষাঢ় মাস থেকে কাজের বায়না পান তারপরে হয় কাজ শুরু। আগে করতেন শুধু ডাকের সাজের কাজ। তবে আজ ডাকের সাজের কাজে পারিশ্রমিক কম, নাই সেরম অর্ডারও। তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এখন করেন বুলান সাজের কাজ।
পিন্টু দাসের কাছে যখন ডাকের সাজের কথা জানতে চাওয়া হয় তিনি জানান, “ডাকের সাজের জন্যে একটি নির্দিষ্ট সলমা পাওয়া যায়। যেটি এই মুহূর্তে দাম অনেক। এবং আমার মতন শিল্পীদের পক্ষে সেই কাঁচা মাল কিনে। তারপর বানানো এখন প্রায় অসাধ্য ব্যাপার। আগে অনেক করতাম এই কাজ। এখন প্রায় কুড়ি বছর হয়ে গেল ছেড়ে দিয়েছি। তাও একটা-দুটো অর্ডার আসলে করি।”
বুলান সাজ হল ডাকের সাজের চেয়ে জমকালো আবার তুলনামূলক সস্তা গয়না বিশেষ। যা ঠিক থাকে প্রায় ৪ মাস। কাগজের ওপর এক বিশেষ ধরণের সুতো দিয়ে নকশা করে। সেই নকশার ওপর হয় বিভিন্ন পুথি, কাঁচ, রাংতা দিয়ে কারুকার্য। পিন্টুর ছেলে সহ পুরো পরিবার এই চার, পাঁচ মাস টানা হাত লাগান এই কাজে। পুজোর দিন পনেরো আগে শুরু হয় ডেলিভারির তোরজোর। বাক্সে বাক্সে পিন্টুর তৈরি গহনা পৌছে যায় জেলা তলা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। এই মুহূর্তে কর্মব্যস্ত কারিগর পিন্টু দাস ও তাঁর পরিবার। কাজের খাটনি, পারিশ্রমিক ও অভিজ্ঞতা নিয়ে কী জানালেন খোদ শিল্পী।
মজুরির কথা উঠলে পিন্টু দাস জানান, “এই কাজ আজ দীর্ঘদিন ধরে করে আসছি আমি। প্রায় বছর ছয় তখন থেকে শুরু আমার এই কাজ। কিন্তু সত্যি বলতে এখন সব জিনিষের দাম, এক লাফে বেড়ে গিয়েছে। যার ফলে কম কাঁচামাল কিনতে হয়। এবং তার ওপর মজুরি সেইভাবে পাওয়াও যায়না। যার ফলে খুব সমস্যার সৃষ্টি হয়।”
এইভাবেই চলে ফি বছরের রোজনামচা। আজকাল মেসিনে তৈরি হয় এসব গহনা। কিনতে পাওয়া যায় রেডিমেড দোকানে। তাই দর পড়েছে এই হাতের কাজের শিল্পীদের। তবুও হাতের কাজের মধ্যে কার অভিনবত্ব নিয়ে আজও ‘ছাতি চওড়া’ মাটির ঠাকুরের গহনা তৈরির শিল্পী, বছর ষাটের পিণ্টু দাসের।