সাগরদিঘির শিক্ষা ! বিড়ি মালিকের হাত ছেড়ে শ্রমিকের কথা অধীরের মুখে ?

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নিজস্ব সংবাদদাতা, রঘুনাথগঞ্জঃ ভোট বড় বালাই। বিড়ি মালিকের সঙ্গে ঘর করার অভিজ্ঞতাও খুব করুণ। অগত্যা, মালিকদের হাত ছেড়ে এবার শ্রমিকদের দাবি নিয়ে পথে খোদ অধীর চৌধুরী। কংগ্রেসের জোট সঙ্গী বামেরা একসময় বলত, মালিকদের পার্টি। সেই পথেই বুধবার হেঁটেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তবে বিড়ি মালিক বাইরন বিশ্বাস অধীরের হাত ছাড়ায় কী প্রায়শ্চিত্ত করছেন অধীর। প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে।

বুধবার রঘুনাথগঞ্জে গিয়ে বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি তুলেছেন তিনি। এদিন সরকার নির্ধারিত ২৬৮ টাকা মজুরি প্রদান সহ বিড়ি শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে সরব ছিলেন অধীর। রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লকের সম্মতি নগর থেকে মহম্মদপুর হলুদমিল মোড় পর্যন্ত বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে ওইদিন মিছিলেও হেঁটেছেন তিনি। যা উস্কে দিয়েছে অন্য স্মৃতি।

২০২৩ সাল। ২৭ জানুয়ারি সাগরদিঘির উপনির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণায় চমক দেয় কংগ্রেস। সাগরিঘিতে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হয় বিড়ি মালিক বাইরন বিশ্বাসের। নির্বাচনের মাধ্যমেই রাজনীতিতে অভিষেক ঘটে ব্যবসায়ী বাইরনের। পারিবারিকভাবে বিড়ি ব্যবসায়ী বাইরন বিশ্বাসকে ভোটের ময়দানে নামিয়ে লাভ হয় কংগ্রেসেরও। ২৭ ফেব্রুয়ারি হয় সাগরদিঘি কেন্দ্রে উপনির্বাচন। ভোটের ফল প্রকাশিত হয় ২রা মার্চ ।

বিপুল ভোটে জেতেন রাজনীতিতে নতুন মুখ বাইরন। তাঁর হাত ধরে বিধানসভায় খাতা খোলে কংগ্রেস। বাইরন জেতায় উচ্ছ্বসিত ছিল কংগ্রেস। উচ্ছ্বাস ছিল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর গলাতেও। তবে তিন মাস যেতে না যেতেই, দল বদলান বিড়ি মালিক বাইরন। ২৯ মে বাইরন পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা তুলে নেন ।

রাজনীতির ময়দানে মুখ পোড়ে কংগ্রেসের। এবার তাই আর বিড়ি মালিক নয়। বিড়ি শ্রমিকদের হয়েই সরব অধীর রঞ্জন চৌধুরী। লোকসভার আগে বিড়ি শ্রমিকদের মজুরিকে ইস্যু করে ময়দানে নামলেন অধীর।

মিছিল শেষে এক জনসভায় বিড়ি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে  অধীর বলেন, “বিড়ি শ্রমিকরা হাজারটা বিড়ি বাঁধলে সাতশো থেকে আটশো টাকা আয় হয়। বিড়ির মতো মজার ব্যবসা আর নেই।” তিনি বলেন, “বিড়ি শ্রমিকরা মালিকদের জন্য নিজেদের প্রাণপাত করে বিড়ি মালিকদের হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক করে দিচ্ছেন কিন্তু বিনিময়ে কিছুই দিচ্ছে না।” তিনি প্রশ্ন করেন “সরকার কিসের জন্য আছে? কেন চুপ মা মাটি মানুষের সরকার? শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি, আইন তৈরি করে করা হয়েছে। সেই আইনে দেশের সব রাজ্য ঠিক করে দেওয়া মজুরি পায়।” তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান, জঙ্গিপুরের বিধায়ক জাকির হোসেনদের কটাক্ষও করেন। সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোকাবাবু বলে কটাক্ষ করে অধীর বলেন, ” খোকাবাবু এই সাগরদিঘিতে কবুল করে গেলেন ২৬৮টাকা মজুরি দেওয়া হবে। দিয়েছে সে টাকা। পারবে কি পারবে না একবারও বলেছে। মানুষের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করছে।”     তবে তৃণমূলের কটাক্ষ, বাইরনের বিশ্বাসঘাতকতা এখনও ভুলতে পারছেন না অধীর। তাই বিড়ি মালিকদের বিরুদ্ধে এবার তিনি রাস্তায়। লোকসভা ভোটের আগে জঙ্গিপুরের প্রায় ১১ লক্ষ বিড়ি শ্রমিকদের ভোটই এখন বড় টার্গেট কংগ্রেসের দাবি তৃণমূলের নবগ্রামের বিধায়ক কানাই মন্ডলের। তিনি বলেন, ” নির্বাচন এলে অধীর বাবুর অনেক কথা মনে পরে। কিন্তু রেলমন্ত্রী থাকাকালীন কোনও কাজ হয় নি। একইভাবে বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়, অধীর বাবুরা বলেছিলেন তারাপুরে বিড়ি শ্রমিকদের হাসপাতাল হবে। করেন নি। ক্ষমতায় থাকাকালীন কংগ্রেস কিছুই করেন নি। কিন্তু বর্তমান সাংসদ খলিলুর রহমান বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে কথা বলছেন লোকসভায়। বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর কথা হয়েছে সেই সময় জেলার একমাত্র ধাপ্পাবাজ লোক কোনও প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখতে পারেন না তিনি তখন বড় বড় কথা বলছেন। নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই দেখেন নি। “