নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ মাস তিনেক পর ফের মুর্শিদাবাদে তদন্ত করতে এলেন ইডি আধিকারিকরা। তবে এবার শিক্ষক নিয়োগ বা রেশন কান্ড নিয়ে নয়, এবার একশো দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করতে জেলায় আসেন তাঁরা। অন্যবারের সঙ্গে এবারের আর একটা তফাত ও আছে। এর আগে জেলায় যখন ইডি বা সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সির কর্তারা এসেছিলেন তখন শাসক দলের নেতাদের বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু এবার খোদ সরকারি আধিকারিকের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালাতে বহরমপুরে আসেন ইডি কর্তারা। এবার তাঁদের অভিযোগ, একশো দিনের কাজের টাকা নয়ছয় করার মামলা দায়ের হয়েছে মুর্শিদাবাদের দুই সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে। তাঁদের মধ্যে একজন প্রাক্তন পঞ্চায়েত কর্মী রথীন্দ্রনাথ দে ও অন্যজন মুর্শিদাবাদ জেলার MGNREGA-র বর্তমান নোডাল অফিসার সঞ্চয়ন পান।
সকাল সাতটা নাগাদ বহরমপুর বিষ্টুপুর কালীবাড়ির কাছে প্রথমে যে বাড়িতে ইডি আধিকারিকরা টোকা মারেন সেটি প্রাক্তন পঞ্চায়েত কর্মী রথীন্দ্রনাথ দের। দরজা খুলতেই নিজেদের পরিচয় দিয়ে একটি নোটিশ ধরিয়ে দেন ইডি কর্তারা। পরে তাঁর বাড়িতে প্রায় জনা দশেক ইডি আধিকারিক প্রবেশ করেন। তারপর থেকেই শুরু হয় টানা জিজ্ঞাসাবাদ। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বেলডাঙা-১ ব্লকের বিডিও বিরূপাক্ষ মিত্র, এই পঞ্চায়েত কর্মীর বিরুদ্ধে আর্থিক তছরূপের অভিযোগ তুলে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তখন রথীন্দ্র বেলডাঙা-১-এর সুজাপুর-কুমারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিসটেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন। সেই অভিযোগের তদন্ত শেষে চাকরি থেকে বহিস্কার করা হয় রথীন্দ্রকে, দাবি ইডি কর্তাদের। ২০২০ সালে মাঝপথে সেই মামলার তদন্ত থামিয়ে দেয় সিআইডি। এরপরেই ওই মামলা যায় ইডির কাছে। তারই প্রেক্ষিতে এদিন তদন্তে আসেন ইডি আধিকারিকরা। এদিন বিকেলে ইডি কর্তারা চলে যাওয়ার পর ওই পঞ্চায়েত কর্মীর বাবা রবীন্দ্রনাথ বলেন, ” ওরা বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে ছেলেকে জিজ্ঞাসা করতে এসেছিল। সেই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে চলে যান তাঁরা।” ইডি কর্তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তাঁরা।
রথীন্দ্রনাথের বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে একটি একতলা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন সঞ্চয়ন। তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা যোজনা বা মনরেগার নোডাল অফিসার। জেলায় দক্ষ অফিসার হিসেবে তাঁর সুনামও রয়েছে। মনরেগা ছাড়াও ন্যাজারত ডেপুটি কালেক্টরের দায়িত্বও আছে তাঁর কাঁধে। পঞ্চায়েত ডেভলপমেন্ট অফিসার থেকে পদোন্নতি হয়ে এই আধিকারিক ধনিয়াখালি ব্লকের বিডিওর দায়িত্ব নেন।পরে শ্যামপুর ১-এর বিডিও ছিলেন। ধনিয়াখালির বিডিও থাকাকালীন মনরেগায় ভুয়ো জব কার্ড তৈরি থেকে ভুয়ো অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেনের অভিযোগ ওঠে ওই আধিকারের বিরুদ্ধে। মামলাও হয়। সেই মামলার তদন্তে নেমে মঙ্গলবার সঞ্চয়নের মুখোমুখি হয়েছিলেন ইডি কর্তারা।
তবে তাঁকে বহরমপুরেই পাওয়া যাবে কি না সেই নিশ্চয়তা না থাকায় সঞ্চয়নের সল্টলেকের বিদ্যাসাগর আবাসনের দুটি ফ্লাটেও একইদিনে টোকা মারেন ইডি কর্তারা। শেষতক বহরমপুরে মধুপুরে তাঁর ভাড়া বাড়িতে তাঁকে টানা সাতঘন্টা জেরা করা হয় বলে সূত্রের দাবি। কিছু নথিপত্র প্রিন্ট করবার প্রয়োজন হওয়ায় একসময় তাঁর বাড়িতে বাইরে থেকে একটি প্রিন্টার নিয়ে যেতেও দেখা যায় কর্মীদের। তবে জেলা প্রশাসনের ওই কর্তা ইডি আধিকারিকরা বেড়িয়ে যাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দাবি করেন, “ইডির নিশ্চয়ই কিছু জিজ্ঞাসাবাদ ছিল। সে সব আমার কাছ থেকে ইডি কর্তারা জানতে চেয়েছিলেন। আমি সবকিছু বলেছি। সহযোগিতা করেছি।” কিন্তু কী বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ইডি কর্তারা তা অবশ্য জানাতে চাননি এই আধিকারিক। তবে এদিন জেলা প্রশাসনিক ভবনের দুই কার্যালয়েই তিনি যান নি বলেই প্রশাসন সূত্রে জানা যায়।