Suti চার মাস আগেও মুর্শিদাবাদের সুতি, সামসেরগঞ্জ দাঙ্গার আগুনে পুড়েছিল। একটানা অশান্তি আর গণ্ডগোলে জেরবার হয়েছিল এলাকার পর এলাকা, গ্রামের পর গ্রাম। উৎকণ্ঠা আর আতঙ্ক গ্রাস করেছিল বাসিন্দাদের। চারিদিকে পুলিশ, র্যাফ, কমব্যাট ফোর্সের টহল। কেন্দ্রীয় বাহিনিও মোতায়েন করতে হয়েছিল জায়গায় জায়গায়। দিন বদলেছে। পাল্টেছে সময়। একই বৃন্তে দুটি কুসুমের খেয়াল রেখে ফেলে আসা দিনের শঙ্কা ভুলেছেন স্থানীয়রা। উৎসব ঘিরে মিলে মিশে একাকার হয়েছে ধর্ম, বর্ণ, জাতি, বিদ্বেষ।
Suti সোমবার ভোর রাত থেকে সুতির আমুহা পঞ্চগ্রাম শ্মশান কালী মন্দির প্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছিল সম্প্রীতির এক অন্যন্য নজির। শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবারে শিব মন্দিরের পুজো ও শিবের মাথায় জল ঢালা উপলক্ষে ছিল হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা। বাঁকে করে জল বয়ে শিবের মাথায় জল ঢালতে আসা এই বিপুল পরিমাণ মানুষের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন এলাকার সংখ্যালঘু মানুষের প্রতিনিধিরা। কেউ ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত। কেউ শিব ভক্তদের জন্য খিচুড়ি রান্নায় ব্যস্ত। স্থানীয় বাসিন্দা আফতাব সেখ বলেন, ‘ হিন্দু মুসলিম বলে কিছু নেই। আমরা ভাই ভাই। কেউ রান্নায় ব্যস্ত , কেউ জল দিচ্ছে। উৎসবে সামিল সকলেই।’ দূর দূরান্ত থেকে আসা ভক্তদের তেষ্টা মেটাতে কেউ আবার হাতে তুলে দিচ্ছেন পানীয় জল, শরবৎ। সুষ্ঠভাবে ভক্তরা যাতে পূজার্চনায় সামিল হন, মহিলা থেকে শিশুদের কোনরকম যাতে কোন অসুবিধা না হয়! আফতাব, শরিফ সেখের মতো যুবকরা লাইন সামলানো থেকে ভক্ত অতিথিদের সেবায় ঝাঁপিয়ে পরেছিলেন ভোর থেকে।
Suti সুতির মহাতবপুরের বাসিন্দা শরিফ সেখ বলেন, ‘ ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। সকলে মিলেমিশে কাজ হয়। কোন রাজনৈতিক দলে আসি না। কোন বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম না এখানেই। সব ধর্মের মানুষ এখানে আসে। ‘
Suti আর এখানেও কার্যত রং ভুলে শাসক তৃণমূল থেকে বিরোধী বিজেপি নেতা নেতৃরাও সামিল হতে পিছু পা হন নি। সাত সকালেই পৌঁছে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা থেকে বিজেপি জেলা যুব সভাপতি কৌশিক দাস। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা বলেন, ‘ প্রত্যেক ধর্মের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা থাকা উচিৎ, সম্মান জানানো উচিৎ। বাংলা এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে আছে।’ জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির যুব সভাপতি কৌশিক দাস বলেন, ‘ হিন্দু মুসলিম উভয়ে একসাথে হাত মিলিয়েছে। এটাই হওয়া উচিৎ। এটাই থাকবে চিরকাল। সেটা আরও একবার নজিরবিহীন বার্তা দিল। মুর্শিদাবাদ সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে এভাবেই এগিয়ে চলুক।’
Suti অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা অর্থাৎ পঞ্চগ্রাম মহাশ্মশান মন্দির কমিটির সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ দীপক দাস দাবি করেন সম্প্রতি সুতি, সামসেরগঞ্জের দাঙ্গার গ্লানিকে পিছনে ফেলে রেখে আমুহার মানুষজন সম্প্রীতির নতুন নজির তৈরি করলেন। কোনভাবেই যাতে এলাকার সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট না হয় তার জন্য সমস্ত মানুষ শ্রাবণী উৎসবকে সামনে রেখে বার্তা দিলেন শুধু সম্প্রীতির নয়, সাম্প্রদায়িক মেল বন্ধনকে অটুট রাখার।