মাসুদ আলি, ঋত্বিক দেবনাথঃ ঘটনা যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে শাহরুখ খান অভিনিত সিনেমা ‘রায়িজ'(Raees) । যেখানে দেখানো হয়েছিল শিশুদের হাত দিয়ে পাচার হচ্ছে মাদক। এবং পুলিশ বুঝতেও পারছে না। কেউ ভাবতেও পারছে না একটি নাবালোকের পিঠের ব্যাগে থাকতে মাদক। সেই পদ্ধতিতেই জালনোট পাচার চলছিল মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জে। মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের নতুন ডাকবাংলা সংলগ্ন এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে অভিযান চালিয়ে জালনোট সহ এক নাবালককে আটক করে পুলিশ। এটি যেন এক অভিনব কায়দায় টাকা পাচার করার ফন্দি হয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে কমবয়সীদের হাতে তাদের স্কুলের ব্যাগ হোক কিংবা ঝোলা তার মধ্যে জাল নোট রেখে পাচার করা যায় ।
এবং ঠিক একইভাবে ২০২৩ সালের জুন মাসে পশ্চিমবঙ্গের বাউরিয়া থেকে ৩ লক্ষ্য টাকার জাল নোট সহ গ্রেফতার করা হয় দু’জন কমবয়সীদের যাদের মধ্যে একজন ১৯ বছরের শেখ সামির এবং ২২ বছরের শেখ আরিফ। এই জাল নোট বানানোর সমস্যা গোড়া থেকে নির্মূল করার যুক্তি দেখিয়ে বিজেপি সরকার ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর পুরনো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে দেয়। কিন্তু এই সমস্ত মানি লন্ডারিং আটকানো যায়নি বলেই মনে করছেন পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা ।
‘ফার্জি’ সিনেমাতেও দেখানো হয়েছিল জাল নোটের চোরা কারবার। দেখানো হয় কিভাবে দুই বন্ধু টাকার অভাবে এবং নিজেদের জীবন আরও সহজ করতে দিনরাত এক করে জাল নোট বানায়। এবং যেমন তেমন নয়, একদম নিখুঁত পদ্ধতিতে জাল নোট বানানো সম্ভব সেটাই মূলরস হিসেবে উঠে আসে এই গল্পে।
প্রশ্ন উঠছে এখানেই, আদেও কী এইভাবে নোট জাল করা সম্ভব? উত্তরে অনেকে অনেককিছুই বলবে। কিন্তু আজ বাস্তবতাকে দেখলে বোঝা যাবে হ্যাঁ! জাল নোট নিখুঁত পদ্ধতিতে করা সম্ভব। আজ নয় বহু আগের থেকেই এই জাল নোট বানানো এবং ভারতের বাজারে তা চালানোর প্রবনতা একাংশের মধ্যে প্রচণ্ড। ২০২২ সালের অক্টোবরের ঘটনা যেখানে গুজরাটের সুরাতে একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে পুলিশ ২৫ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার করে। এবং পরবর্তীতে ৫ দিন ধরে তল্লাশির পর কেঁচো খুরতে কেউটে বেরিয়ে আসে। যার নামে অ্যাম্বুলেন্স অর্থাৎ সমস্ত গল্পের মাস্টার মাইন্ড বিকাশ জৈন তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় ৩১৭ কোটি টাকার জাল নোট। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই টাকা বিকাশ জৈন দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর, মুম্বায় এবং ভারতের অন্যান্য অংশে চালান করত।
সামশেরগঞ্জের ঘটনায় এইদিন পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে নাবালকের কাছ থেকে উদ্ধার করে ৫৬ হাজার টাকার জালনোট। ধৃতের কাছ থেকে উদ্ধার হয় ১১২টি ৫০০ টাকার জালনোট। এই নোট গুলি সে মালদার বৈষ্ণবনগর এলাকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। ধৃত নাবালক সামশেরগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা। ধৃতকে বুধবার বহরমপুরে জুভেনাইল কোর্টে পাঠায় পুলিশ।