দেবনীল সরকার, বহরমপুর:
খবরের কাগজের স্যুট! তা আবার হয় নাকি? হ্যাঁ হয়। রোজ সকালে যে খবরের কাগজ আপনার দোরগোড়ায় এসে পৌঁছায়। তা দিয়েই কোট-প্যান্ট বানালেন। কাঁধের পিছনের জন্য বানালেন বিরাট মাপের একটি কেপ। সাধারণত যেকোনও সুপারহিরোর কস্টিউমে নজর কাড়ে এই কেপ। খবরের কাগজের এই পোশাক পরে শহরের রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটলেন শিল্পী সুজিত মন্ডল।
শহর বহরমপুরে ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক আর্ট ফেয়ার। বিগত চার বছর ধরে শহরের শিল্পী সংগঠন প্যাপিলিও পেন্টার্স আয়োজন করে এই শিল্পের মেলার। সেখানে বরাবরই উঠে আসে কিছু এমন ছবি বা শিল্পরস যা সাধারণ মানুষকে দেখতে, ভাবতে বাধ্য করে।
এরকমই ছিল রবিবারের দুপুর। আর্ট ফেয়ার চত্বরে ওই খবরের কাগজের স্যুট পরে দেখা গেল সুজিতকে। মুখে সবুজ, কালো, সাদা রঙে আঁকা ফিলিস্তিনের পতাকা। হাতে একটা মোটা খাতা। যাতে লেখা ইয়াসমিন, মারিয়া, নাবিল, হামদান, মুসা’দের নাম। যারা প্রত্যেকেই ফিলিস্তিনি শিশু। প্রত্যেকেরই বয়স এক বছরেরও কম। তারা কেউ আর এই পৃথিবীতে নেই। যুদ্ধের বলি হয়েছে ওরা সবাই। এরকমই দশহাজার শিশুর নাম লেখা, একটি খাতা হাতে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বেড়লেন সুজিত। পড়লেন ওই কাগজের পোশাক।
খালি পায়ে প্রথমে গ্যালারিতে, তারপরে মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরলেন। তারপরে সটান বেড়িয়ে পড়লেন শহরের রাস্তায়। রবীন্দ্রসদন, মোহন মোড় হয়ে উদাত্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন ওই একরত্তিদের নাম। শহরের রাজপথে এ যেন কোনও সুপারহিরো।
শহরের রাস্তায় এদিন ঝাঁকড়াচুলো সুজিতকে দেখতে মানুষ ভিড় করেছিল। সুজিত জানান, “সুস্থ থাকার জন্য, সুস্থ ভাবে বাঁচার জন্য শিল্প করি। যারা এই পৃথিবীতে এসে ছিল বাঁচবে বলে, মানুষে মানুষে হিংসা তাদের বাঁচতে দিল না। তাদের মধ্যে কত বড় হবার সম্ভবনা ছিল। সব এক নিমেষে শেষ করেছে যারা, শিল্পের এই লড়াই তাঁদের বিরুদ্ধে। আমাদের হাতে বন্দুক নেই। আছে রঙ, তুলি। তা দিয়ে যা করা যায় সেটাই করেছি। এর কোনও শেষ নেই। তবে যাঁরা চলে গেছে, আমরা মানুষ হয়েও ওদের বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি। সেটা যেন ভুলে না যায়। এটুকুই এই প্রোজেক্টের উদ্দেশ্য।”
ইতিপূর্বে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার ক্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল আর্ট ক্যাম্পে কাগজের পোশাক পরে পারফর্মিং আর্ট পরিবেশন করেছেন সুজিত। তিনি জানান, “বাংলাদেশেও প্রচুর শিল্প সচেতন মানুষ রয়েছে যাঁরা আমার এই প্রোজেক্টকে সমর্থন করেছে। মানুষ যেন হিংসার ইতিহাস ভুলে না যায়, এটুকুই দাবি।”