Bhagabangola Election ঋত্বিক দেবনাথ, বহরমপুরঃ ‘চন্দ্রবিন্দু’ বলেছিল, ‘অঙ্ক কি কঠিন’ । সেই গানেই ছিল, ‘বাবা গান্ধী, জোরসে প্রাণদি, কাঁদছে ঠানদি, কিন্তু চোখে গ্লিসারিন, দাদা অংক কি কঠিন’। অর্থাৎ গান্ধীর নামে প্রাণ দিচ্ছেন মানুষ। পাশে কাঁদছেন ঠাকুমা। কিন্তু সেই কান্না আসল নয়। গ্লিসারিন ব্যবহৃত সেই কান্না। এই আসল নকলের মাঝে হিসেব মেলানো বড়ই কঠিন।
বঙ্গ রাজনীতিতেও জোটের অঙ্কটাও বোঝা বড়ই কঠিন। কখনও বিমান বসু বলছেন, তাঁরা জোট নয় সমঝোতার রাজনীতি করছেন। সেই সমঝোতাই সামিল হওয়া কংগ্রেস এবং ISF বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে। এটা আসলে জোট ভোট। যার জট ক্রমশ্য বাড়ছে। প্রশ্ন এখানেই জোটের অঙ্ক কী শেষ পর্যন্ত মিলবে ? কারণ ২০২১ সালে তৈরি হওয়া জোটে। প্রথম থেকেই জট দেখা দিয়েছিল। কখনও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির ISF-কে নিয়ে নানান সমস্যা। তো ২০২৪ সালের আসন্ন লোকসভা ভোটে ISF-এর রাস্তা জোটের সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এইসব সমীকরণ বুঝিয়ে দিচ্ছে। জোটের জট আরও বাড়ছে।
এবং সেই জট আরও বাড়াল ভগবানগোলা উপনির্বাচনের কংগ্রেসের প্রার্থীর মধ্যদিয়ে। ৭ই মে তৃতীয় দফা ভোটের দিন ভগবানগোলাতেও উপনির্বাচন হবে। এবং তার মধ্যেই কংগ্রেস এবং বামেদের মধ্যে প্রার্থী নিয়ে শুরু হয়েছিল চাপানউতোর। কে প্রার্থী দেবে ? এবং কেন দেবে ? সেই সব ধোঁয়াশা কাটিয়ে ৭ই এপ্রিল জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তিনটি লোকসভার কংগ্রেস প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। এবং পাশাপাশি ভগবানগোলা উপনির্বাচনের কংগ্রেস প্রার্থী আঞ্জু বেগমকে প্রার্থী করা হয়। তিনি ভগবানগোলা -২-এর কংগ্রেসের ব্লকসভাপতি।
আঞ্জু বেগমের প্রার্থী হওয়ার খুশিতে সবে মেতেছিলেন কংগ্রেস সমর্থকেরা। কিন্তু সেই খুশি খুব বেশিক্ষন কংগ্রেস শিবিরে থাকল না। প্রার্থী ঘোষণার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য ও এবিটিএ-র বিদায়ী জেলা সম্পাদক দুলাল দত্ত তাঁর সোশ্যাল মিডিয়াতে কড়া ভাষায় লেখেন, “অবিলম্বে ভগবানগোলা বিধানসভা উপনির্বাচনে বামফ্রন্ট প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে হবে”। দুলাল দত্ত ভগবানগোলা আসনে অবিলম্বে সিপিআইএম প্রার্থীর দাবি করেছেন। তিনি এইদিন সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে লেখেন ‘কার স্বার্থ রক্ষা করতে কংগ্রেস ভগবানগোলা তে প্রার্থী ঘোষণা করল? যে আসন কোনভাবেই কংগ্রেসের প্রাপ্য নয়, সেই আসনে কেন কংগ্রেস প্রার্থী ঘোষণা করল?’
যদিও সোমবার মুর্শিদাবাদের সিপিআইএম-এর প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের হয়ে প্রচারে নেমে ছিলেন মিনাক্ষী মুখার্জী। তিনি এইদিন বলেন, ‘আমারা বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়ছি’। একইদিনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন ‘জোট ভাঙলে ভাঙবে। যা হয়েছে উপর থেকে হয়েছে। কোথায় কী হয়েছে জানি না আমি’।
উলেখ্য ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস এই আসনে সিপিআইএম-এর সঙ্গে জোট করে লড়াই করেছিল। তখন সিপিআইএম-এর কামাল হোসেন দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রয়াত বিজয়ী প্রার্থী ইদ্রিস আলির কাছে হেরে যান। সেই হার থেকে শিক্ষা নিয়ে কংগ্রেসের তড়িঘড়ি প্রার্থী ঘোষণা কীনা সেই নিয়েও রাজনৈতিক স্তরে তৈরি হয়েছে জল্পপ্না।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদিও জানানো হয়েছে, ভগবানগোলা উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীকেই সমর্থন করবে সিপি আই (এম) । মঙ্গলবার সিপিআই(এম) জেলা দপ্তর সত্য চন্দ্র ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথায় জানালেন সিপিআই(এম) পলিটব্যুরোর সদস্য রামচন্দ্র ডোম। তিনি জানান, “ এখানে বাম-কংগ্রেসকে নিয়ে ব্যাপক বিজেপি বিরোধী মঞ্চ। সেটি একটি ব্যাপক বোঝাপড়ার মধ্যে রয়েছে। মুর্শিদাবাদের মতন একটি জেলায় সার্বিক বোঝাপড়া সফল” । পাশাপাশি ভগবানগোলা কংগ্রেসের প্রার্থী নিয়ে তিনি এইদিন বলেন, “ আজকে যে ব্যাপক লড়াইইয়ের মঞ্চ তৈরি হয়েছে। তারফলে কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হোক। সেটা কোন পক্ষই চাইবে না। এই লড়াইয়ে সামান্য খোঁটাখুঁটি হবে, সেটা মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে” ।
দিন দুয়েক ধরে সিপিআই(এম )মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির অন্দরে যে টালবাহানা ও অসন্তোষ চলছিল তা নিরসনের জন্য এদিন সকালে বহরমপুরে সিপিআইএম মুর্শিদাবাদ জেলা কার্যালয় সত্যচন্দ্র ভবনে দফায় দফায় সিপিআই(এম) বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন পলিটব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম ও শ্রীদিপ ভট্টাচার্য।
জোট নিয়ে জট খালি মুর্শিদাবাদেই দেখা যায় নি। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস নিজেদের প্রার্থী দিয়েছিল। সেই নিয়েও তৈরি হয় নানান জল্পনা কারণ। সেখানে ইতিমধ্যেই সিপিআই নিজেদের প্রার্থী দিয়ে রেখেছিল। তারপর আবার কেন কংগ্রেস প্রার্থী দিল। সেই ক্ষোভে ফেটে পরে ওই লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআইএম নেতারা। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। কংগ্রেসে ঘাটাল কেন্দ্রে নিজেদের প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখল।
বর্তমান সিট সমঝোতার হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে ২৯টি আসনে আসনে প্রার্থী দিয়েছে বামেরা এবং কংগ্রেসের ১৩ টি আসনে প্রার্থী। যদিও দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি আসনে কেউই প্রার্থী দেয় নি। পাশপাশি কোচবিহার এবং পুরুলিয়াতেও জোট নিয়ে জটিলতা দেখা গিয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন। পশ্চিমবঙ্গে জোটের নামে পিঠ বাঁচানোর চেষ্টা করছে কংগ্রেস। কারণ বঙ্গে যেখানেই চোখ যাচ্ছে সিপিআইএম প্রার্থীদের দেখা যাচ্ছে। এবং সিটের সমীকরণ একই কথা বলছে। সিটের হিসেবে এগিয়ে বামেরা। এইমত পরিস্থিতিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী খালি নিজের পিঠ বাঁচাচ্ছেন কিনা। সেটা নিয়েও তৈরি হচ্ছে নানান চাপানউতোর।