অধীরের নিশানায় মমতা, একাধিক ইস্যুতে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রীকে

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তোপ দাগলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জীকে ‘খোকাবাবু’ বলে কটাক্ষ করেন অধীর। তিনি বলেন, “খোকাবাবুকে পিছন থেকে অক্সিজেন দেবার জন্য উড়ে এসেছেন দিদি। খোকাবাবু মানেই মমতা আর মমতা মানেই খোকাবাবু।” রাজ্যের একাধিক জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে এদিন মমতাকে বিঁধেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে এদিন ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ করেন অধীর। তিনি বলেন, “হিম্মত থাকলে আমার সাথে আলোচনায় বসুন! আপনার সব ঢপ আমি খুলে দিচ্ছি। মুর্শিদাবাদের মানুষকে বোকা বানাবেন না।”

শুক্রবার বহরমপুরে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে সাগরদিঘির নির্বাচন পরবর্তী অবস্থা থেকে শুরু করে গরুপাচার কেলেঙ্কারি, ও সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতি করছে তৃণমূল সরকার, এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ক্ষোভে উগরে দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তিনি বলেন, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রী যে হারে মিথ্যাচার করেছেন তাতে বাংলার মানুষ আর তাঁকে বিশ্বাস করে না।” মুখ্যমন্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে “মিথ্যাশ্রী মমতা ব্যানার্জি” করতে বলেন অধীর। তিনি আরও বলেন, “ সাগরদীঘির ফলাফলের পর ভয় পেয়েছেন মমতা। তাই তড়িঘড়ি ভাইপোকে পাঠিয়েছেন এই জেলায়। ভাইপোকে পাঠিয়েও শান্তি পাননি, তাই নিজেও উড়ে এসেছেন মুর্শিদাবাদে।”

শুক্রবার মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রবেশ করেছে ‘তৃণমূলের নবজোয়ার যাত্রা’। এই যাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অভিষেক ব্যানার্জি। এই যাত্রাকে কটাক্ষ করে অধীর বলেন, “নবজোয়ার না নবভাটা চলছে তৃনমূলে”। ভোটের আগে অভিষেক ব্যানার্জির এই নবজোয়ার যাত্রাকে ‘পোস্ট সাগরদিঘি সিনড্রোম’ বলে কটাক্ষ করেন অধীর। এদিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আরও বলেন, “খোকাবাবুকে এনে ভাবছেন মুর্শিদাবাদ দখল করবেন কিন্তু মুর্শিদাবাদ, মালদা, দিনাজপুর আপনার হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। সাগরদিঘি থেকে তাড়িয়েছি এবার আপনাকে বাংলা থেকেও তাড়িয়ে ছাড়ব।”

পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের একাধিক দুর্নীতি নিয়েও এদিন সোচ্চার ছিলেন লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা। রাজ্যের গরুপাচার কেলেঙ্কারি নিয়ে অধীর বলেন, “সব পাচার চোখের সামনে দিনের আলোয় হয়েছে। গরু কী আর বর্ডার চেনে? সে একা একা হেঁটে বর্ডারে গেছে? বিএসএফ থেকে শুরু করে দিদির পুলিশ সবাই লরিতে করে গোবলয় অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশ, বিহার, গুজরাট, মহারাষ্ট্র থেকে এনএইচ ৩৪ ধরে পাহারা দিয়ে গরুকে জল, খড় খাওয়াতে খাওয়াতে নিয়ে ওদেশে পাচার করেছে। এখন উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে কী লাভ?” তিনি আরও বলেন, “গরুকে বর্ডারে নিয়ে যাচ্ছে দিদির লোকরা। দিদির পুলিশ, ডিএম, এসপি সবার সামনে দিয়ে হচ্ছে গরুপাচার। গরু বোঝাই ট্রাক থেকে সবাই রেভিনিউ নিচ্ছে। রাজনাথ সিংহ যখন গৃহমন্ত্রী ছিলেন তখন সব চেয়ে বেশি গরু পাচার হয়েছে। কিন্তু দিদি রাজনাথ সিং-এর বিরুদ্ধে কোনো দিন মুখ খোলেননি। রাজনাথ সিং ও কোনওদিন দিন দিদির বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন না। তৃণমূল বিজেপি আঁতাত এখানে স্পষ্ট।”

ওয়াকফ বোর্ড ও সংখ্যালঘু ভোটার নিয়ে বৃহস্পতিবার মালদায় প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওয়াকফ বোর্ড ঠিক মতো চলছে না। অনেক জমি পড়ে আছে। সেখানে উচ্ছেদ না করে অনেক পরিকল্পনা আছে যেগুলি বাস্তবায়িত করতে হবে। তার প্রত্যুত্তরে ও সংখ্যালঘু ভোটাভোটি প্রসঙ্গে শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে অধীর বলেন, “দিদির এখন সংখ্যালঘুদের নিয়ে খুব চিন্তা! দিদি সব দিকে আছে। দিদি জয় শ্রী রামও করবে আবার আল্লা হু আকবরও করবে। দিদি জাতে মাতাল তালে ঠিক। একদিকে প্রলোভন আর ভীতি প্রদর্শন করে রাজনীতি করছে তৃণমূল। ভোটের আগে এসব হবে ভোটের পর সবাই ভুলে যাবে।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আরও বলেন, “এনআরসি একটি অসংবিধানিক বস্তু, যা শুধুমাত্র নির্বাচনের হাতিয়ার। মুখ্যমন্ত্রী ভোটের আগে এই এনআরসি নিয়ে রাজনীতি করছে। হিন্দুরা নাচানাচি করবেন না মুসলমানরা ভয় পাবেন না।” এদিন বিজেপি’র উদ্দেশ্যেও অধীর প্রশ্ন তোলেন, এনআরসি যদি সত্যিই নাগরিক আইন হয়ে থাকে তাহলে দেশের বিজেপি শাসিত ১৮ টি রাজ্যে এখনও কেন এনআরসি লাঘু হল না?