ভূত চতুর্দশীতে ১৪ শাকে আটকাতে পারে বহুরকমের রোগ ! নিয়মের আড়ালে লুকিয়ে স্বাস্থ্যের উপকারিতা।

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ আজকের রাত পোহালেই কালীপুজো। কার্তিক মাসের অমাবস্যার রাতে দেবীলক্ষ্মীর যেমন পুজো করা হয়, তেমনি শ্যামারও আরাধনা করা হয়ে থাকে। শাক্ত বাঙালিরা কালীভক্ত। তাই এদিন তন্ত্রমতে, কালী পুজোর বিশেষ তাত্‍পর্য রয়েছে। পুরাণ মতে, দেবী কালীর ভয়ঙ্কর রূপকেই আরাধনা করা হয়। অশুভ শক্তিকে বিনাস করতে তিনি নিজেই সর্বোচ্চ শক্তির প্রকাশ করেছিলেন। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করাই হল কালী পুজোর মূল উদ্দেশ্য।

কিন্তু কালী পুজোর ঠিক একদিন আগেই পালিত হয় ভূত চতুর্দশী। এবং এইদিন খাওয়া হয় ১৪ রকমের শাক এবং চোদ্দ পুরুষের উদেশ্যে জ্বালানো হয় ১৪টি প্রদীপও। এই প্রথার যেমন পৌরাণিক বা ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে তেমনই ১৪ শাকের গুনও কিন্তু মারাত্মক। সমস্ত বাড়িতেই প্রায় আজকের দিনে ভাতের সাথে এই চোদ্দ শাক ভাজা খাওয়া হয়। বাড়ির মা-ঠাকুমারা এখনও এই ১৪ শাক রান্না করে থাকেন। বিশেষজ্ঞেরা বলে থাকেন, প্রকৃতপক্ষে, নিয়মরীতির আড়ালে পুষ্টিগুণের অভ্যাসই আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত করে দিয়েছেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা৷

আসুন জেনে নেওয়া যাক এই ১৪ শাকের মধ্যে কী কী পরেছে। সর্ষে, পালং, লাল নটে, গিমা, পুঁই, কলমি, পাট, মূলো, বেতো, হেলেঞ্চে, নটে, শুষনি, মেথি৷

  • হেলেঞ্চে শাক শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়৷ রক্তাল্পতা রোধেও এই শাক অত্যন্ত কার্যকরী৷ বেতো শাক যে কোনও রকমের ব্যথার উপশম করতে খুব কার্যকরী৷

    হেলেঞ্চে শাক।
  • ডায়াবেটিস অর্থাৎ, ব্লাড সুপারের রোগীদের জন্য অত্যন্ত কাজের হল মেথি শাক৷ মেথি শাক কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে, হার্ট ভাল রাখে, হজমের সমস্যাও দূর করে৷ নোটে শাক খাবারের অরুচি কটায়৷ এছাড়া, নোটে শাক ক্যালশিয়ামেরও ভরপুর ভাণ্ডার৷

    মেথি শাক।
  • লিভার ও হার্ট ভাল রাখতে কলমি শাকের জুড়ি মেলা ভার৷ অন্যদিকে, পুঁই শাকে থাকে রোগ প্রতিরোধকারী ভিটামিন সি৷ এছাড়া, ক্যালশিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক ও ম্যাগনেশিয়ামও থাকে পুঁই শাকে৷

    কলমি শাক।
  • পালং শাকও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে৷ তবে এই শাকে অতিরিক্ত মাত্রায় ম্যাগনেশিয়াম থাকায় কিডনিতে স্টোনের সমস্যা থাকলে খেতে বারণ করেন চিকিৎসকেরা৷ পালং শাকে বিভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাবনয়েড রয়েছে৷ অন্যদিকে, সরষে শাক শরীরের উপকারী কোলেস্টেরল বাড়ায়৷ হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে৷

    পালং শাক।
  • শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় লাল নটে শাক৷ যাঁদের রক্তাল্পতার মতো সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য এই শাক অত্যন্ত উপকারী৷ এছাড়াও, এই শাকে রয়েছে একাধিক অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন ই, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম৷ লাল শাকে ক্যানসার প্রতিরোধক উপাদানও উপস্থিত৷ গিমা শাক লিভারের স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সর্দিকাশি, কফে উপকার হয়৷ জ্বরের পরে খাবারে অরুচিও কাটে৷

    লাল শাক।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার জন্য পাটশাক খুই উপকারী৷ সর্দিকাশিতেও পাট শাক খেলে উপকার হয়৷ মূলোর শাক ভাজা খেলে বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে মনে করেন অনেকেই৷

    পাট শাক।

এই মরশুমে মানুষ খুব তাড়াতাড়ি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন জানালেন চিকিৎসকেরা। এবং তার ওপর ধীরে-ধীরে মানুষের শাক-সবজি খাওয়ার প্রবণতাও কমতে বসেছে। বিশেষত নতুন প্রজন্মের। এবং কোভিডের মতন মহামারির পরে শাক-সবজি খাওয়াটা যে কত দরকার সেই নিয়ে বার বার সাধারণ মানুষকে সচেতন করছেন চিকিৎসকেরা। শনিবার কালী পুজোর আগের দিন বহরমপুরের বিভিন্ন বাজারে সমস্ত ১৪ শাক মিলিয়ে ২৫ টাকায় ৫০০ গ্রাম পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও একটু বেশি, কোথাও একটু কম। ভাবতেই অবাক লাগে আজকের দিনে যেখানে বাজারে সমস্ত জিনিসে আগুন লেগে আছে। সেইমত পরিস্থিতিতে এত সস্তায় পুষ্টির ভাণ্ডার পাওয়া যাচ্ছে।