Yoga:” যোগ এ রোগ মুক্তি ” মুখোমুখি সাগর ঘোষ

Published By: Madhyabanga News | Published On:

চন্দনা দত্ত । বহরমপুর: যোগ প্রশিক্ষক সাগর ঘোষ যিনি রাজা নামেই শহরে বেশি পরিচিত । শহর বহরমপুরে যোগ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘ যোগায়ন ‘ এর কর্ণধার সাগর ঘোষ , একাধারে বেশ কয়েক বারের যোগ চ্যাম্পিয়ন । অসংখ্য মেডেল , স্মারক আর ট্রফিতে যাঁর ড্রইংরুম একেবারে ঠাসা । তবে এসব কিছুর আগে যে কাজ টি সাগর ঘোষ করতে সমর্থ হয়েছেন তা হল , ‘ যোগাসন ‘ এই বিষয়টিকে অত্যন্ত সহজ সরল ভাবে বহু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া । যাকে বলা যেতে পারে ‘ যোগ ‘ এর সর্বজনগ্রাহ্যতা । ঘরে ঘরে প্রতি ঘরে অলিতে-গলিতে যোগা কে পৌঁছে দেওয়াতে যোগায়ন এর কর্ণধার সাগর ঘোষের অবদান রয়েছেই ।
করোনা পরবর্তীতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা তে মানুষ যেন আরো বেশি করে যোগাভ্যাসে আসক্ত হয়েছেন । তবে এর কারণ হিসেবে অবশ্য উঠে আসে একটি ক্যাপশন, ” যোগ এ রোগ মুক্তি । ” অসংখ্য রোগ ব্যাধি থেকে বাঁচতে নিয়মিত যোগাসন করতেই হবে । এ বিষয়ে মুখোমুখি সাগর ঘোষ নিজেই জানালেন নিয়মিত যোগাভ্যাসের গুনাগুন নিয়ে , তাঁর সাথে নেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ।

প্রশ্ন ; ” যোগ এ রোগমুক্তি ” কথাটি একটি আপ্তবাক্য যেন এখন । কথাটি কি একশভাগ প্রযোজ্য দেহ-মনের সার্বিক সুস্থতার ক্ষেত্রে ?

সাগর ; সামগ্রিক অর্থে পারফেক্ট তো অবশ্যই । দেহ মাত্রেই রোগ হবে । জীব শ্রেষ্ঠ মানুষ । তাই অসংখ্য রোগব্যাধিতে অহরহ মানুষ আক্রান্ত হন । নিয়মিত যোগাভ্যাস এই রোগ-ব্যাধিকে অনেকগুণ কমিয়ে দেয় । গৃহী সাংসারিক মানুষের শরীরের সুস্থতা অবশ্যই বাড়বে নিয়মিত যোগাভ্যাসে । বর্হিমেরুদন্ড অর্ন্তমেরুদন্ড হবে শক্তিশালী । দেহ-মন সম্পূর্ণ সুস্থ হবে নিয়মিত যোগ চর্চায় ।

প্রশ্ন ; যোগাভ্যাস কি সব বয়সের মানুষ করতে পারেন ?

সাগর ; হ্যাঁ পারেন । একেবারে শুরুতে সাড়ে তিন থেকে চার বছর বয়সী শিশু থেকে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা ও করতে পারেন যোগাভ্যাস । তবে বিভিন্ন বয়সের জন্য যোগের ধরন এবং মাত্রা ভিন্ন ধরনের । বয়স এবং শরীরের ধরন অনুযায়ী যোগের মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়ে থাকে ।

চলছে যোগাসনের প্রশিক্ষণ

প্রশ্ন ; যোগ অনুশীলনের জন্য প্রতিদিনের রুটিন ঠিক কেমন হওয়া উচিত ?

সাগর ; ৷ ২৪ ঘন্টায় ২৪ মিনিট যোগ চর্চা করা উচিত । তবে যারা অতিরিক্ত ব্যস্ত মানুষ তারা কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ মিনিট সময় করতে পারেন যোগাভ্যাস । তাতেই কিছুটা কাজ হবে । যোগ চর্চার আদর্শ সময় হল , যে যখন ঘুম থেকে ওঠেন সেই সময়টাতে । এই সময় ন্যূনতম মিনিট পনেরো যোগাভ্যাস করে নিতে হবে । এর ফলে সারাদিন শরীর চার্জে থাকবে ।

প্রশ্ন ; যোগ গুরুমুখী বিদ্যা । সঠিক গুরু নির্বাচন করব কি উপায়ে ?

সাগর ; গুরু অর্থাৎ টিচার এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ জীবনে । আর এই নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঠিক বেঠিক চিনে নেওয়াটাও খুব কঠিন । তাই যোগের ক্ষেত্রে যেভাবে পারা যায় সহজ পদ্ধতিতে অভ্যাসের চেষ্টা করতে হবে । কোন জটিলতার দিকে কেউ যেন না যান । কিছু করতে না পারলেও অন্তত হাত-পা নাড়াবেন তাতেও কিছু উপকার হবে । যোগীদের যোগ চর্চা এখন গৃহীর মত করে করা হয় ।

প্রশ্ন ; যোগচর্চার প্রয়োজনে সঠিক গুরু পাওয়া না গেলে ডিজিটাল ওয়েতে কি যোগাভ্যাস করা যায় ?

সাগর ; হ্যাঁ ডিজিটাল প্লাটফর্মে প্রদর্শিত যোগ৷ ফলো করতেই পারি আমরা । তবে আবারও বলছি সহজ সরল পদ্ধতি গুলি করা যেতে পারে । কোন জটিল কঠিন পদ্ধতি না করাই ভালো । সর্বোপরি আপন শরীরের ক্ষমতা বুঝে অভ্যাস করতে হবে যোগ৷ । জোর করে কিছু করা যাবে না ।

প্রশ্ন ; মেডিটেশন অর্থাৎ ধ্যান কি যোগের অঙ্গ ?

সাগর ; হ্যাঁ ধ্যান হল অষ্টাঙ্গ যোগের সপ্তম ধাপ । পরের ধাপ হলো সমাধি । যেটি মুনি-ঋষিরা প্রাচীন যুগে করতেন । তবে এখন সংসারী মানুষ রা অবশ্যই করবেন ধ্যান দিনের কোন একটি দিনের কোন একটি সময়ে । মনের একাগ্রতা বাড়াতে লেখাপড়া করা ছোটরাও করবে ধ্যান । এমনকি অভিভাবক হিসেবে বাবা-মাও করবেন ধ্যান অর্থাৎ মেডিটেশন । সুস্থ দেহ মনের জন্য যোগ এবং ধ্যান দুইই অভ্যাস করা প্রয়োজন ।

প্রশ্ন ; বর্তমান যুগ যেন মেডিকেশনের যুগ । মুঠো মুঠো ওষুধ খাচ্ছেন মানুষ প্রতিদিন । নিয়মিত যোগাভ্যাস মেডিকেশন কে কমাতে পারবে ?

সাগর ; যোগাভ্যাস এ দেহে হরমোনের ভারসাম্য ফিরে আসে । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে । তাই এই দুটি বিষয় অবশ্যই মানুষের ওষুধ খাওয়ার পরিমাণ কম করবে ।

প্রশ্ন ; যোগচর্চা একটি প্রাচীনতম বিষয় । তবে বর্তমানে কি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যোগ চর্চা কে আধুনিক করা হয়েছে ? অর্থাৎ যোগ চর্চার আধুনিকীকরণ হয়েছে কী বর্তমানে ?

সাগর ; হ্যাঁ যোগের আধুনিকীকরণ অবশ্যই হয়েছে । পেশাদারী যোগ প্রশিক্ষক যাঁরা , তাঁরা এখন প্যাকেজ যোগ প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন অল্প সময়ে বেশি লাভের জন্য । কারণ মানুষের এখন ব্যস্ত সিডিউল । তাই মানুষের জন্য এখন আমরা ২৪ ঘন্টায় ২৪ মিনিট যোগা করতে বলে আধুনিক যুগের প্যাকেজ ফলো করি বা করাই । অনেক আসনের ভঙ্গিমার সরলীকরণ করা হয়েছে এই প্যাকেজে । সবটাই মানুষের সুবিধার কথা ভেবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে করা হয়েছে ।

জিম কালচারকে টেক্কা দিচ্ছে যোগাসন

প্রশ্ন ; জিম কালচার তো ভালোভাবেই সাড়া ফেলেছে । অল্পবয়সীরা বেশ আগ্রহী জিম কালচারে । জিমের সাথে যোগের কোনো বিরোধ আছে বলে কি মনে হয় ?

সাগর ; যে কোন প্রকার শরীরচর্চাই ভালো । তবে যে শরীরচর্চা সারা জীবন ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারা যাবে , সে চর্চা হলো যোগচর্চা । জিম চর্চা কখনোই তা নয় । মানসিক স্থিতি বজায় রাখে যোগ । অস্থির মনে কিছু ইনস্ট্যান্ট পেতে হলে জিমচর্চা করা যেতে পারে । বর্তমান যুগে জিম চর্চায় কিছু কিছু মানুষ মাতলেও জিম চর্চা ব্যয়বহুল । সকলের পক্ষে করে ওঠা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না । তবে যাঁরা প্লেয়ার বা যাঁরা অ্যাথলিট , কিছু ক্ষেত্রে অভিনেতারা নিজেদের কাজের তাগিদে জিম চর্চা করতে পারেন । আসলে জীবন তো ১০০ মিটার দৌড় নয় । জীবন হলো ম্যারাথন দৌড় । এই দৌড়ে আজীবন সাথ দেবে যোগচর্চা ।