মধ্যবঙ্গ ওয়েব ডেস্কঃ ‘ডায়াবেটিস’ এই শব্দবন্ধের সাথে পরিচিত নন এরকম কেউ নেন। আজকের সমাজে এই রোগ প্রতি একশো জনের মধ্যে নব্বই জনের শরীরে বাসা বাঁধে। কঠিন অসুখ এই ডায়াবেটিস। এই রোগ শরীরে বাসা বাঁধলে আর সঠিক সময়ে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করলে শরীরে সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ একে একে হয়ে যেতে পারে বিকল। কিন্তু এই রোগের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। খুব উচ্চ শর্করা যুক্ত যে কোনও খাবার ও জীবনশৈলী পরিবর্তন করলে নিয়ন্ত্রণে আসে ডায়াবেটিস। ডায়াবিটিস হলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা। তাই ডায়েবেটিস ধরা পড়লে অনেকে কষ্ট করেই ভাত এড়িয়ে চলেন। কিন্তু ভাত ছাড়া বাঙালির দিনযাপন বড়ই কষ্টকর। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন ডায়াবিটিস হলেও ভাত খাওয়া যেতে পারে। একবার নয়, বারবার। তবে জানতে হবে সঠিক মাপ।
ছয়মাস আগে হটাৎ করেই ডায়াবেটিস ধরা পরে দীপান্বিতা ভৌমিক নামে বছর ২৫ এর এক যুবতীর। তিনি তো রীতিমতো আশঙ্কায়। ডাক্তার তাঁকে পরামর্শ দেন চিন্তা না করতে। ডায়াবেটিস আজকের যুগে খুবই সাধারণ একটি রোগ। সঠিক চিকিৎসায় যার নিরাময় সম্ভব। ছয়মাস ধরে খাবার দাবারে নিয়ন্ত্রণ ও সকালে হেঁটে এখন তিনি অনেক সুস্থ ও ডায়াবেটিসও অনেক নিয়ন্ত্রণে। ডাক্তারের কাছে দীপান্বিতার প্রশ্ন ছিল খুব মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে কী করবেন? ডায়াবেটিক হলে একেবারেই মিষ্টি খাওয়া যায়না এটা একেবারেই মিথ। তবে বেশি না কোনও মতেই। একটুকরো মিষ্টি খেলে, তা অবশ্যই সকালের দিকে খাওয়া ভাল। রাতের দিকে নৈব নৈব চ। মিষ্টি খেয়ে বেশ কিছুটা হাঁটাচলা বা শারীরিক কসরত করে ফেললেই মুশকিল আসান।
১৪ই নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত হয়, স্যার ফ্রেডরিক ব্যান্টিংয়ের জন্মদিন উপলক্ষে। যিনি ১৯২২ সালে চার্লস হারবার্ট বেস্টের সাথে ইনসুলিন হরমোন আবিষ্কার করেছিলেন। সেই বিশেষ মানুষটিকে স্মরণ করতেই পৃথিবীজোড়া এই দিনটি পালিত হয়।
অভুক্ত অবস্থায় সকালে যদি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৬.১-৬.৯ মিলি মোল/ লিটার এবং ৭৫ গ্রাম গ্লুুকোজ খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর যদি ৭.৮-১১ হয়, তবে বলা হবে প্রাক-ডায়াবেটিস। তিন মাস সময়কালব্যাপী গ্লুকোজের গড় মাত্রা নির্ণয়ের একটা মাপকাঠি হাল জামানায় ব্যবহার করা হয়। এটি হলো এইচবি এ-১ সি। এর মাত্রা ৬-৬.৪% হলেও বলা যাবে প্রাক-ডায়াবেটিস।
লক্ষণ: এটির তেমন কোনো লক্ষণ নেই। তবে শরীরে অনেক জায়গায় কালো হয়ে যাওয়া নির্দেশ করে প্রাক-ডায়াবেটিস। ঘাড়ের পেছন দিকে, বগলের নিচে এবং ক্ষেত্র বিশেষে কুঁচকিতে কালো আস্তর পড়ে যায়। এটাকে বলে একান্থোসিস নিগ্রিক্যান্স। অনেক স্থূলকায় পুরুষ ও রমণীদের ঘাড়ে এমন লক্ষণ প্রকাশ পায়।
প্রি-ডায়াবেটিস থেকে ডায়াবেটিস:
কখন বুঝবেন আপনি প্রাক-ডায়াবেটিস থেকে ডায়াবেটিসের সড়কে? যখন নিচের লক্ষণ গুলো প্রকাশিত হবে:
* অত্যধিক তৃষ্ণা
* বহুমূত্র
* ক্ষুধা বৃদ্ধি
* দুর্বলতা
* ঝাপসা দৃষ্টি
* হাত-পায়ে ঝিনঝিন অনুভব
* বারবার প্রদাহ বা ইনফেকশন
* ক্ষত শুকাতে সময় লাগা
* ওজন হ্রাস
সমস্যা কোথায়:
প্রাক-ডায়াবেটিস একদিকে যেমন ডায়াবেটিসের ঘণ্টা ধ্বনি বাজাতে শুরু করে, পাশাপাশি এটি কিন্তু হৃৎপিণ্ড, রক্তনালী ও কিডনির ক্ষতি করার অশনি সংকেত প্রদান করে।
প্রাক-ডায়াবেটিস অবস্থায় রক্তে যে চিনির মাত্রা থাকে তা আপনার হৃদরোগ এবং কিডনির রোগ তৈরি করার জন্য যথেষ্ট। বরং বলা যায় বড় বড় রক্তনালীর অসুখ এ অবস্থায় বেশি দানা বাঁধে, যেমন- স্ট্রোক, করোনারি সংক্রান্ত হৃদরোগ ইত্যাদি।
প্রাক-ডায়াবেটিস হলে করণীয়:
তবে আশার কথা হলো প্রাক-ডায়াবেটিস পর্যায়ে প্রতিরোধ জোরদার করলে ডায়াবেটিস থেকে এমনকি আজীবনের জন্য নিজেকে মুক্ত রাখা যায়। সেজন্য করণীয় হলো: ওজনকে বাগে রাখতে হবে। শতকরা পাঁচ থেকে সাত ভাগ শরীরের ওজন কমানোর পাশাপাশি প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে জোর কদমে হাঁটলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যাবে শতকরা ষাট ভাগ। সুতরাং মনোযোগী হতে হবে মেদ-ভুঁড়ি ঝেঁটিয়ে বিদায় করার দিকে। পেটের মেদ সবচেয়ে ক্ষতিকর। এটাকে বলা হয় ভিসেরাল ফ্যাট। ইনসুলিনের কার্যকারিতা ভোঁতা করে দেওয়ার জন্য ভিসেরাল ফ্যাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাবারের মেনু পাল্টে ফেলুন। খাবারের থালা পূর্ণ হোক হরেক রকম সবজি, সালাদ আর ফলমূলে। সরল শর্করা জাতীয় খাবার কমিয়ে দিন, স্থান দিন ফাইবার সমৃদ্ধ জটিল শর্করা। সঙ্গে থাকুক আমিষ, অল্পস্বল্প অসম্পৃক্ত চর্বি। ধূমপানকে আল বিদায় বলুন। কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমিয়ে ফুরফুরে হয়ে উঠুন। নিদ্রা হোক সুখময়। প্রাক ডায়াবেটিস চলে যাবে।