WB Rain বৃষ্টির মানেই প্রকৃতির এক নান্দনিক রূপ। বৃষ্টি মানেই বৃষ্টিতে ভেজা। কখনও একা , কখনও প্রিয়জনের সঙ্গে। বৃষ্টির সৌন্দর্যের পেছনে লুকিয়ে থাকে কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি। বৃষ্টিতে ভিজলে নানা ধরনের সংক্রমণ এবং স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। কী হতে পারে বৃষ্টিতে ভিজলে ?
১. ঠান্ডা ও সর্দি
বৃষ্টিতে ভিজে গেলে ঠান্ডা ও সর্দি লাগার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। বৃষ্টির জলে ভিজলে শরীরের তাপমাত্রার দ্রুত বদল ঘটে। শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলে ভাইরাসের সংক্রমণ সহজ হয়ে যায়। সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা ও জ্বর এসময় খুব সাধারণ লক্ষণ। সাধারণত বৃষ্টির জল সরাসরি মাথায় পড়লে এই সমস্যা দেখা দেয় বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার পর দ্রুত পোষাক পরিবর্তন করে গরম জলে স্নান করলে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা কমে যায়।
২. চর্মরোগ
বৃষ্টির জল সাধারণত পরিষ্কার থাকে না। রাস্তার জল , মাটি, ও অন্যান্য দূষিত পদার্থের সংস্পর্শে আসা বৃষ্টির জল ত্বকের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ছত্রাকের সংক্রমণ, একজিমা, চুলকানি ইত্যাদি চর্মরোগ এসময় সাধারণত বেশি দেখা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, বৃষ্টিতে ভিজলে ভালো করে শরীর পরিষ্কার করতে হবে এবং ত্বক শুকনো রাখতে হবে।
৩. লেপটোস্পাইরোসিস
লেপটোস্পাইরোসিস Leptospirosis একটি ব্যাকটেরিয়া-জনিত রোগ যা সাধারণত বৃষ্টির মরশুমে বেশি দেখা যায়। বৃষ্টির জল মাটির সাথে মিশে যায় এবং বিভিন্ন প্রাণীর মল-মূত্রের সাথে মিশে যায়। এই জলের সংস্পর্শে এলে লেপটোস্পাইরা নামক ব্যাকটেরিয়া ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এর লক্ষণগুলো হলো জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীর ব্যথা এবং চোখ লাল হয়ে যাওয়া। বৃষ্টি শেষে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
৪. টাইফয়েড Typhoid fever
টাইফয়েড একটি জলবাহিত রোগ যা সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়। বৃষ্টির সময় জল দূষিত হওয়ার কারণে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এর প্রধান লক্ষণগুলি হলো উচ্চ জ্বর, পেট ব্যথা, মাথাব্যথা, এবং দুর্বলতা। বিশুদ্ধ জল পান করা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে টাইফয়েড প্রতিরোধ করা যায়।
৫. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন
বৃষ্টির সময় বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী দ্বারা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন হতে পারে। এই সংক্রমণগুলো সাধারণত দূষিত জল ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। ডায়রিয়া, বমি, পেট ব্যথা এবং অন্যান্য পরিপাকতন্ত্রের সমস্যাগুলি এসময় সাধারণত বেশি দেখা যায়। এসময় বিশুদ্ধ জল ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা উচিত।
তাই এই সময় নিতে হবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা । কী ব্যবস্থা নেওয়া নেওয়া যায় ?
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: বৃষ্টির সময় নিজেকে এবং চারপাশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস: পুষ্টিকর খাবার এবং বিশুদ্ধ জল গ্রহণ করতে হবে।
নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা: মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার এবং ঘরে মশা প্রবেশের পথ বন্ধ রাখতে হবে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা: বৃষ্টির জল সরাসরি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সবসময় বিশুদ্ধ জল পান করতে হবে।
বৃষ্টি উপভোগ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখাও অত্যন্ত জরুরি। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমরা বৃষ্টির এই স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।