Water Consumption জল জীবনের আরেক নামে পরিচিত। রান্না থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজে লাগে এই জল। আপনি ক্লান্ত থাকুন বা আপনার ত্বক শুষ্ক হোক। সর্বদাই আপনাকে পরামর্শ দেওয়া হবে লিটার লিটার জল পান করতে। কিন্তু এটা আদতেও কতটা সঠিক পরামর্শ ?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যারা নিজেদের সঙ্গে একটি করে বোতল। সবসময় রাখেন তারা মাত্রাধিক জল পান করে ফেলেন। আবার যারা বোতল রাখেন না তাদের ক্ষেত্রে জল কোনদিন বেশি পান করা হয়। তো কোনদিন বেশি। ফলে এই ব্যাস্ত জীবনের মধ্যে কতটুকু জল পান করা উচিত সেটা আমরা সবাই জানলেও। এই নিয়ে আমাদের প্রচুর ভুল ধারণা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জল পান করছেন। সেটা যেকোনো ভাবেই হতে পারে।
সেটা বোতলজাত জল বিক্রি বেড়ে যাওয়া থেকেই আন্দাজ করা যায়। বেশি বেশি জল পানের আরেকটি বড় কারণ জল সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ছড়ানো।
যেমন- প্রতিদিন বেশি বেশি জল পান করা উচিত। তাতে ত্বকের শুষ্কতা কাটে। শরীর ভালো থাকবে। এবং ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
একজন মানুষকে দিনে কতটা জল পান করতে হবে সে সম্পর্কে এত অস্পষ্ট তথ্য কেন? সম্ভবত, কয়েক দশক আগের দুটি ভুল নির্দেশনা থেকে এই ভুল ব্যাখ্যা এসেছে। ১৯৪৫ সালে ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের ইউএস ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ড প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি ক্যালোরি খাবারের জন্য এক মিলিলিটার তরল খাওয়ার পরামর্শ দেয়।
অর্থাৎ কেউ যদি দৈনিক ২০০০-ক্যালরি ডায়েট করে তাহলে দুই হাজার মিলিলিটার অর্থাৎ দুই লিটার জল খেতে হবে। তবে এই জলের মধ্যে অন্যান্য পানীয় অন্তর্ভুক্ত থাকে – সেই সঙ্গে যেসব ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর জল থাকে সেগুলোও যোগ হবে।
দিনে কত জল পান করা উচিত ?
প্রতিদিন আট গ্লাস বা প্রায় দুই লিটার জল পান করলে আমাদের শরীর প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আর্দ্র থাকে, সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে।
এর পরিবর্তে, আপনার প্রতিদিন দেড় লিটার থেকে এক লিটার আটশ মিলিলিটার জল পান করা উচিত।
অর্থাৎ ছয় গ্লাস থেকে সাত গ্লাস কিংবা তার সামান্য কিছু বেশি। এই জল গ্রহণের পরিমাণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হবে।
বেশি জল পান করলে কি ওজন কমবে?
আমাদের শরীর যতোটা জল পানের সংকেত দেয়, তার চেয়ে বেশি জল পান করলে জলশূন্যতা এড়ানোর বাইরেও অনেক সুবিধা হবে, এই তথ্যের আসলে কোনো প্রমাণ নেই।।
বেশ কয়েকটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, জলশূন্যতা এড়াতে যথেষ্ট পানীয় খেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক থাকে।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত জল পান ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
এক থেকে দুই শতাংশ হালকা জলশূন্যতা বেশ সাধারণ এবং অনেক মানুষ বুঝতে পারে না কখন তাদের জলের ঘাটতি হয়েছে। অথচ জলশূন্যতার হালকা স্তরটি আমাদের মেজাজ এবং শক্তির স্তরকে প্রভাবিত করতে পারে।
আপনি কি খুব বেশি জল পান করতে পারেন?
আমরা যারা প্রতিদিন আট গ্লাস জল খাওয়ার লক্ষ্য রাখি তারা নিজেদের কোনো ক্ষতি করছি কি না তা জেনে রাখা প্রয়োজন।
যে বিশ্বাসের জন্য আমরা শরীরের দেয়া সংকেতের চেয়ে বেশি বেশি পান করি কখনও কখনও তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
অত্যধিক তরল গ্রহণ গুরুতর হয়ে উঠতে পারে যখন এটি রক্তে সোডিয়ামের তরলীকরণ ঘটায়।
এর ফলে মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসে জল জমে যায়। কারণ রক্তের সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য অতিরিক্ত তরল বিভিন্ন জায়গায় জমা করা হয়।
তাহলে আপনার কতটা জল প্রয়োজন ?
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যার ক্রমাগত আর্দ্র থাকতে যেখানেই যান, সঙ্গে করে জল নিয়ে যান এবং তাদের শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পান করেন।
যারা আমরা কাজের জন্য ১৫/২০ মিনিটের যাত্রার জন্য ৫০০ মিলিলিটার জল বহন করেন তাদের ওইটুকু যাত্রায় এতোটা জলের প্রয়োজন নেই। এমনকি ঘামলেও না। বলছেন চিকিৎসকেরা। পাশপাশি আরও জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা যে, একটি মানুষের কতটা জল প্রয়োজন সেটা নির্ভর করে তার কাজের ওপর। সে কতটা কাজ সারাদিনে করছে। যখন আমরা তৃষ্ণার্ত থাকি তখন আমাদের দেহ আমাদেরকে সংকেত দেয়, যেমনটি ক্ষুধার্ত বা ক্লান্ত থাকলে হয়।
তাই বারবার চিকিৎসকেরা এটাই পরামর্শ দিচ্ছেন। জল সঠিক সময় খেতে। পাশপাশি ডাক্তারি পরামর্শ নিয়ে জল খাওয়া উচিত। বেশি জল পান করলে বেশি পরিমাণে বাথরুম যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে তার চাইতে আর কিছুই না।