প্রয়াত প্রবীণ সাংবাদিক শান্তনু ঠাকুর, একটি যুগের অবসান

Published By: Madhyabanga News | Published On:

মধ্যবঙ্গ নিউজ ডেস্কঃ  ষাটের দশকে সাংবাদিকতার শুরু। আজ থেমে গেল পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের  পথচলা। জেলার সংবাদ ও সাংবাদিকতার পরিধিকে অন্য মাত্রা দিয়েছিলেন এই সাংবাদিক। ক্ষুরধার, মেদহীন লেখা ও দুরন্ত ফটোগ্রাফির হাত এসবই উঠে আসছে সহকর্মীদের বয়ানে। মুর্শিদাবাদের সাংবাদিকদের অন্যতম পথ প্রদর্শক ছিলেন তিনি। সোমবার মাঝ রাতে বার্ধক্যজনিক অসুস্থতা নিয়ে বহরমপুরের একটি বেসরকারী হাসপাতালেই জীবনাবসান হল এই প্রবাদ প্রতিম সাংবাদিকের।

৩১ শে অক্টোবর রাত ২ টো নাগাদ ৭৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পারি দিলেন জেলার বিশিষ্ট সাংবাদিক শান্তনু ঠাকুর। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বহরমপুর খাগড়া শ্মশান ঘাটে এসেছিলেন তাঁর বহু সহকর্মী, আত্মীয়, পরিজন, বন্ধুবান্ধবেরা।

২০০৮ সালের ১৯ অক্টোবর বিজন ভট্টাচার্য স্মৃতিকক্ষে সংগঠনের বিশেষ সাধারণ সভা থেকে তিনি সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১২ সালের ১০ জুন অবধি তিনি এই পালন করেছেন। মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এই বছর ১৫ আগস্ট শান্তনু ঠাকুরকে সংবর্ধনা জানিয়েছিল মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন। শান্তনু ঠাকুরের মৃত্যু জেলার সংবাদজগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। শান্তনু ঠাকুদের মৃত্যুকে পরিবার, পরিজনদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছে  মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন।

সম্প্রতি ১৫ই আগস্ট মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে তাঁকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। তখনই শেষবার দেখা প্রিয়ভাই তথা সহকর্মীদের সাথে। মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিপ্লব বিশ্বাস বলেন, শান্তনু ঠাকুরের জীবনাবসান এক অপূরণীয় ক্ষতি।

জেলার প্রবীণ সাংবাদিক প্রাণময় ব্রহ্মচারী জানান,   শান্তনু ঠাকুরের সাথে ছিল  ‘দাদা ভাইয়ের সম্পর্ক ‘। এ যেন জেলার সাংবাদিকতার এক যুগের অবসান।

সাহিত্য অনুরাগী, একাধারে সাংবাদিক, লেখক, প্রাবন্ধিক, ফটোগ্রাফার ও ফুলের অনুরাগী ছিলেন তিনি। গ্রামীণ খবর ও জেলার বিভিন্ন খবরে ছিল ঝোঁক। সব খবরকে লেখার বুননে কীভাবে খবরের মূলস্রোতে আনা
যায়, এই ছিল তাগিদ। তরুণ সাংবাদিকদেরকে আগলে রাখার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, এমনটাই বলছেন প্রাবন্ধিক প্রকাশ দাস বিশ্বাস।

বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রদীপ দে বলেছেন,  জেলার মাসিক, পাক্ষিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক হেন পত্রিকা নেই, যেখানে তিনি লেখেননি। শান্তনু ঠাকুরের পরিচয় ছিল তাঁর কলম। লেখার পাশাপাশি চিত্র সাংবাদিকতার জগতে বিশেষ ছাপ ফেলেছিলেন সাংবাদিক শান্তনু ঠাকুর।

সেই সময়ের শহর বহরমপুরের সাংবাদিকদের ঘাঁটি ছিল টেক্সটাইল মোড়। দিনের শেষে সাংবাদিকদের বসার জায়গা ছিল স্কোয়ার ফিল্ডের এক কোনে থাকা, ‘কাশীদার ফুলের দোকান’। প্রিয় বন্ধুর প্রয়াণে আজ মন ভার শহরের ফুল ব্যবসায়ীর কাশীনাথ দাসের।

প্রাণময় ব্রহ্মচারী স্মৃতিচারণায় জানিয়েছেন,  ২০০০ সালে বন্যা থেকে জেলার যেকোনও গুরুত্বপূর্ণ খবর। ল্যান্ড লাইনের যুগেও সেই কাজ  নিপুণতার সাথে করতেন শান্তনু ঠাকুর।   তবে সময় থেমে থাকে না। জেলার ছোট থেকে বড় যে কোনও খবর কীভাবে মানুষের কাছে পরিবেশন করা হবে তাঁর দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন সাংবাদিক শান্তনু ঠাকুর। জেলার নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের দিয়ে গেলেন এক গুরু দায়িত্ব।