UNICEF WB শিশুদের উন্নয়নের স্বার্থে এই প্রথমবার একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা ও ইউনিসেফ। শিশুদের জন্য থেকে বড় সমস্যাগুলি সমাধানে একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় । ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহায়তায় কর্পোরেট সংস্থাগুলি ও বিভিন্ন বাণিজ্যগোষ্ঠীর সঙ্গে “ম্যাচিং গ্রান্টস টু নীড” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছিল ইউনিসেফ । বৈঠকে ছিলেন অ্যাসোচেম ( ASSOCHAM ) , বিসিসিআই ( BCCI) , ভারত চেম্বার্স ( Bharat Chambers) , ফিকি ( FICCI ) , এমসিআইআই ( MCCI) -এর সদস্যরা, ছিলেন সিআইআই ( CII ) – এর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার সদস্যরা, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আধিকার এবং ইউনিসেফের কর্মকর্তারা। বৈঠকে বাণিজ্যগোষ্ঠীর সদস্যরা জানান, ইউনিসেফের দক্ষতাকে ব্যবহার করে এবং সরকারি সহায়তায় শিশুদের বিষয়গুলি নিয়ে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা ( CSR- সিএসআর ) তহবিল থেকে বিনিয়োগে আগ্রহী তাঁরা । শিশুদের ভবিষ্যৎ এবং শিশুদের বাসযোগ্য পরিবেশের বিষয় আলোচনায় উঠে এসেছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিএসআর কাউন্সিল রয়েছে। কর্পোরেট সংস্থাগুলির সিএসআর ফান্ডে রাজ্য সরকার দ্বারা চিহ্নিত উন্নয়নের প্রজেক্টে বিনিয়োগ সহজ করার জন্য চালু হয়েছে “সিএসআর পোর্টাল”ও। সভায় রাজ্যের নারী ও শিশু বিকাশ , সমাজকল্যাণ দপ্তর এবং শিল্প, বাণিজ্য ও উদ্যোগ দপ্তরের মন্ত্রী ড. শশী পাঁজা বলেছেন, “ শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলির কথা মাথায় রেখে চলা প্রকল্পগুলির পোর্টফোলিও সিএসআর পোর্টালে দেওয়া রয়েছে। কর্পোরেট সংস্থাগুলি ওই পোর্টফোলিও সিএসআর ফান্ডে বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। সিএসআর ফান্ডের মাধ্যমে সমাজের চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করার জন্যই এটা করা হয়ছে”।

UNICEF WB তিনি আরও বলেন, কর্পোরেট সংস্থাগুলি সৃষ্টিশীল সমাধানের খোঁজ করছে অন্যদিকে ইউনিসেফ বিশ্বজুড়ে শিশুদের বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করছে। ড. শশী পাঁজা এদিন বলেছেন, “ এই ত্রিপাক্ষিক উদ্যোগ শিশুদের বিষয়গুলি নিয়ে কার্যকর ভূমিকা নেবে”। তিনি এও জানান, এই উদ্যোগ চাহিদাকে গুরুত্ব দিচ্ছে যাতে কর্পোরেট সংস্থাগুলি তাঁদের পছন্দের বিষয়ে বিনিয়োগ করতে পারে। এই যৌথ উদ্যোগ শিশুদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, কিশোর কিশোরী ও যুবক যুবতীদের বিভিন্ন বিষয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংকটে থাকা মানুষের জন্য জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা (Climate resilience ) , শিক্ষা, দক্ষতার উন্নয়ন এবং প্রান্তিক অংশের শিশুদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলিতে সিএসআর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন নতুন পথের সন্ধান দেবে।
ড. পাঁজা আশা প্রকাশ করেছেন, এই যৌথ উদ্যোগ কর্পোরেট সংস্থাগুলির সিএসআর বিনিয়োগ এবং ইউনিসেফে দক্ষতার মেলবন্ধন সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্র (sustainable development goals) পুরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে।
ভারতে ইউনিসেফের প্রতিনিধি সিন্থিয়া ম্যাককাফরেই এদিন দেশে সরকারের সঙ্গে ৭৫ বছর ধরে ইউনিসেফের উল্লেখযোগ্য কাজের কথা তুলে ধরে জানিয়েছেন, এই আলোচনা শিশুদের ও শিশুদের পরিবারের কল্যাণে অগ্রগতি আনার কাজে আশা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঞ্চার করেছে বাণিজ্যগোষ্ঠীর সদস্যদের তিনি বলেছেন, “ ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা আরও শক্তিশালী। কমিউনিটির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে জ্ঞান, দক্ষতা , সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় পেশাদার ব্যক্তিবর্গ এবং নাগরিক সমাজ সকলকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করছি”।

UNICEF WB এদিন তিনি কর্পোরেট সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের সামনে শিশুদের জন্য ইউনিসেফের কাজের বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেন।
তিনি রাজ্যে তাঁর অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র, স্বাস্থ্য কেন্দ্র , সরকারি হাসপাতাল, কন্যাশ্রী ক্লাব , বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা কেন্দ্র সফরের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেছেন।

UNICEF WB মঙ্গলবার সিন্থিয়া ম্যাককাফরেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাজ্যে শিশুদের বিকাশ ও ক্ষমতায়নে সহায়তাকারী সামাজিক উন্নয়নের প্রকল্পগুলির জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
কর্পোরেট সংস্থাগুলির প্রতিনিধিরাও মন্ত্রী ও ইউনিসেফের আধিকারিকদের সামনে সামাজিক উন্নয়নে নেওয়া নিজেদের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছেন। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ফিরে গিয়ে সংস্থাগুলির সদস্যদের সঙ্গে এই ত্রিপাক্ষিক উদ্যোগে উঠে আসা সম্ভাবনাগুলি নিয়ে আলোচনা করবেন।
UNICEF WB ইউনিসেফের পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান ড. মঞ্জুর হোসেন তাঁর আলোচনায় বলেছেন, “ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহযোগী হিসেবে ইউনিসেফ আশা প্রকাশ করছে, এই আলোচনার ফলে কর্পোরেট সংস্থাগুলি আমাদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে শিশুদের বিকাশে পরিকল্পনা করতে পারবেন”।
সিএসআর পোর্টালে কর্পোরেট সংস্থাগুলির রেজিস্ট্রেশন করানোর জন্য রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা বাণিজ্যগোষ্ঠীর কার্যকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। নারী ও শিশু বিকাশ , সমাজকল্যাণ দপ্তরের প্রধান সচিব সংঘমিত্রা ঘোষ বলেছেন, “ পোর্টালে এরমধ্যে ৪৫০ কোটি টাকার প্রকল্প নিবন্ধিত হয়েছে। ৩৭ টি ব্যবসায়িক সংস্থা রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। এই পোর্টালে কর্পোরেটদের আগ্রহ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে” । নতুন এই উদ্যোগ ঘিরে আশাবাদী সব পক্ষই।