নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ লোকসভা ভোটের মুখে তৃণমূলের সহায়তা শিবির হয়ে উঠল জনসংযোগের অন্যতম হাতিয়ার। দলের প্রচারের পাশাপাশি একশো দিনের বকেয়া টাকা পেতে তথ্য দিতে আসা মানুষজনের কাছে কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা পারতেও বিলম্ব করছেন না তৃণমূলের বিধায়ক থেকে অঞ্চল সভাপতি কেউই।
রাজ্যের প্রত্যেকটি অঞ্চলে একশো দিনের টাকা দিতে রবিবার থেকে সহায়তা শিবির খুলেছে তৃণমূল। এলাকার ‘বঞ্চিত’ শ্রমিক যারা একশো দিনের কাজ প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করেছিলেন কিন্তু তার মজুরী পান নি তাদেরকে সেই মজুরি দিতেই এই সহায়তা শিবির খোলার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ব্লকে এই শিবির খোলা হয়েছে সেই নির্দেশ মতো। সেই শিবিরকে কাজে লাগিয়ে জনসংযোগের বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
অন্য পঞ্চায়েতের মতো ভাকুড়ি ২ নম্বর পঞ্চায়েতের অধীন গাকুন্দা গ্রামে এই সহায়তা শিবির খোলা হয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান চামেলি বিবি বলেন, ” এমনিতে আমাদের পঞ্চায়েতে একশ দিনের কাজের টাকা পাওনা আছে এমন লোকের সংখ্যা কম। যেটুকু বাকি আছে তা গাকুন্দা গ্রামেই আছে। তাই ওখানে দলের পক্ষ থেকে শিবির খোলা হয়েছে।” বহরমপুর লাগোয়া এই পঞ্চায়েত বেলডাঙা বিধানসভার মধ্যে পড়ে। সেই শিবিরে পৌঁছে দেখা গেল বিধায়ক হাসানুজ্জামান শেখ নিজেই তদারকি করছেন বিষয়টি।
তিনি বলেন, ” যাঁরা টাকা পান নি যাঁরা পেয়েছেন সকলেই শিবিরে আসছেন। আমরাও তাদের সামনে সরকার মানুষের জন্য কী করেছে না করেছে সে সব আলোচনা করছি।” ওই শিবিরে একশো জনের তালিকা ধরে তাদের ব্যঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য নথিভুক্ত করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন বিধায়ক। সেখানে হাজির এক বাসিন্দা ফর্ম ফিল ইন করতে করতে বললেন ” গত বছর না তার আগের বছর এলাকায় মাটি কাটার কাজ করেছিলাম মনে নেই। কিন্তু কাজের এক টাকাও পাই নি।”
সেই কাজের পাশাপাশি দলের কর্মীদের সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের নানান আলোচনা করছিলেন তিনি। তাঁর সেই আলোচনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কেউ কেউ জানতে চাইছেন ” বহরমপুরের প্রার্থী কে হবে দাদা?” বিধায়ক তাঁকে সহাস্যে জবাব দিচ্ছেন ” আপনি দাঁড়ালেও আপনার পাশে আমাদের পাবেন। আপনি জিতে ও আসবেন।”
ভগবানগোলা বিধানসভায় সদ্য প্রয়াত হয়েছেন বিধায়ক ইদ্রিশ আলী। ওই বিধানসভার দুই নম্বর ব্লকের উদ্যোগে সরলপুর হাইস্কুলের মাঠে ছ’টি অঞ্চলের সহায়তা শিবির খোলা হয়েছে। সরলপুর, আখড়িগঞ্জ, বালিগ্রাম, আমডহরা, নশিপুর, হরিবোনার মানুষজন গতকাল থেকে ওই শিবিরে বকেয়া টাকা পেতে নিজেদের নাম, ব্যঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য, আধার কার্ড নম্বর জমা দিয়ে আসছেন। সেই ভিড়ে অবশ্য নির্বাচন নিয়ে তেমন আলোচনা হচ্ছে না বলে জানালেন ব্লক সভাপতি আবদুর রউফ। তিনি বলেন, “মানুষজন টাকা পাবেন। যে ফর্মটা দেওয়া হয়েছে সেই ফর্ম যাতে সঠিকভাবে পূরণ করতে পার তা সজাগদৃষ্টিতে নজর রেখে আমাদের ছেলেরা সাহায্য করছে।”
তবে ব্লক সভাপতি যাই বলুক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সকলের একটাই প্রশ্ন বিধানসভায় ভোট কী লোকসভা ভোটের আগেই হবে?এলাকাবাসীর দাবি, স্থানীয়দের কাউকে এবার যেন দল প্রার্থী করে। ” বহিরাগত প্রার্থী নিয়ে কম ঝামেলা হয় নি সেবার। কিন্তু এলাকার অনেক নেতা আছে যারা বিধায়ক হিসেবে জিতে আসার ক্ষমতা রাখে।” ব্লক সভাপতি অবশ্য দাবি করলেন, ” লোকসভা নির্বাচনে আমাদের ব্লক থেকে তাহের দা (সাংসদ আবু তাহের খান) অনেক বেশি ভোট পাবেন সেই কথাটা বলতে পারি। কিন্তু বিধানসভায় দল যাকে দাঁড় করাবে তাকেই মানুষজন ভোট দেবে।”