মেহেদি হাসান, সুতিঃ মাস তিনেক পরেই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হবে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। তাদের পিছু পিছু পরীক্ষায় বসবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। উৎসব শেষে স্কুল খোলার পর তাই শুরু হয়েছে টেস্ট পরীক্ষা। কিন্তু এই পরীক্ষা কদর হারিয়েছে বিড়ি মহল্লায়। শিক্ষা বিমুখ হয়ে পড়ছে উত্তর মুর্শিদাবাদের বিস্তৃর্ণ এলাকা। হাতে গরম উদাহরণ নিমতিতার পঞ্চগ্রাম আইএসএ হাইস্কুল।
স্কুলের রাস্তা বাঁয়ে ঠেলে সুতির ওই স্কুলের একাংশ পড়ুয়া বেছে নিয়েছে বিড়ি বাঁধার কাজ। পরীক্ষার সাদা খাতা ছেড়ে জীবনের সাদা খাতা ভরাতে তাদের কেউ কেউ ‘সস্তার শ্রমিক’ হয়ে পাড়ি দিয়েছে ভিন রাজ্যে। আর তা করেছে পেটের তাগিদে, অভাবের তাড়নায়।
ওই স্কুল সূত্রে জানা যায়, এবার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০৯ জন। তারমধ্যে টেস্ট পরীক্ষা দিচ্ছে ৫৩১ জন। ৭৮ জন পরীক্ষাই দিচ্ছে না। ওই স্কুলেই এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা ৩৪১ জনের। এর মধ্যে টেস্ট পরীক্ষা দিতে এসেছেন ২৮৩ জন। ৫৮ জন অনুপস্থিত।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেহবুব ঈশা বলেন, “ স্কুল ছুটের সংখ্যা গত তিন চার বছরে বেশি বেড়েছে। গত বছর এর থেকেও বেশি ছিল। এরা শিক্ষা বিমুখ হচ্ছে। তাও বিভিন্নরকম ইনসেনটিভের জন্য যেটুকু মেয়েরা আসছে, ছেলেরা আসতেই চাইছে না।“ প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, “দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্ষেত্রেই এই অবস্থা দেখা যায়। বড়জোর ২০ শতাংশ ছেলেমেয়ে পড়াশোনার মধ্যে আছে। বাকিরা পড়াশোনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ওই স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জিশু শেখকে রাজমিস্ত্রীর কাজে পাঠিয়েছেন মা মীরা বিবি। মীরা বিবির চার সন্তান। তিনি বলেন, “কাজ কাম নেই। সংসার চালাতে বিড়ির ওপরে নির্ভর করতে হয়। সবসময় কাজও পাওয়া যায় না। সংসার চলবে কী করে? তাই পাঠিয়ে দিয়েছি বাধ্য হয়ে।” আর এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মা সীমা বিবিও বলেন, “ আয়ের চেয়ে ব্যায় বেশি। পয়সা না থাকলে লেখাপড়া করাব কী দিয়ে? অনিচ্ছা সত্বেও বিদেশ বিভুঁইয়ে পাঠাতে হয়।”
স্কুলের চৌহদ্দি ছেড়ে যে কিশোর দূরের ট্রেন ধরলো অভাবের তাড়নায় তাকে কী আর কখনও দেখা যাবে পেন, খাতা হাতে? কী হবে তার ভবিষ্যৎ? আপাত সহজ প্রশ্নের উত্তরটা কিন্তু কঠিন।