দেবনীল সরকার, বহরমপুরঃ কথায় আছে ‘আন্ডার অনেক ফান্ডা’। কিন্তু সেই আন্ডার দামেই পকেট ঠাণ্ডা হচ্ছে আমজনতার। কম দামে পুষ্টিগুণে ভরপুর ডিম। সাধারণত মানুষের রোজকার ডায়েটে একটা ডিম সেদ্ধ বা ওমলেট থাকেই। নিদেনপক্ষে ডিমের ঝোল-ভাত ঘরের হেঁসেল থেকে পাইস হোটেলের অন্যতম পদ। কিন্তু ইদানিং ডিমের দামে নাজেহাল অবস্থা সবার। বাড়তে বাড়তে প্রতিটি পোলট্রির ডিমের দাম ছুঁয়েছে সাড়ে সাত টাকা। ডিম প্রতি দাম বেড়েছে প্রায় এক থেকে দেড় টাকা করে। দিন পনেরো আগে এই ডিম বিক্রি হয়েছে ছ’টাকা থেকে সাড়ে ছ’টাকায়।ডিমের এমন হঠাৎ দাম বৃদ্ধি কেন? ডিম বিক্রেতারা জানান, বড়দিনের মরশুমে ডিমের চাহিদা থাকে বেশি। তুলনায় জোগান কম থাকায় ডিমের দাম বেড়ে যায়। সাধারণত অন্ধ্রপ্রদেশ বা তামিলনাড়ুর মতো দক্ষিণের রাজ্য থেকে এ রাজ্যে ডিমের আমদানি হয়। সেই ডিম বাজারে বিক্রি হয়। সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তামিলনাড়ু। আবার ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে বাধ সেধেছে জ্বালানির চড়া দাম। বেড়েছে যাতায়াতের খরচ থেকে মুরগি পালনের খরচও।
ফার্মগুলির কাছ থেকে সরাসরি কোম্পানি ডিম কেনে। কোম্পানির কাছ থেকে সেই ডিম কেনে আড়তদার। তাঁদের কাছ থেকে কেনেন খুচরো ব্যবসায়ী। হাত বদল হতে হতে যে ডিম আগে পাইকারিতে চার টাকা দরে মিলতো এখন তা বেড়ে কোথাও ছ’টাকা তো কোথাও সাড়ে ছ’টাকায় দাড়িয়েছে। বছর খানেক আগে রাজ্য সরকার ডিম উৎপাদনে আত্মনির্ভর হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। কথা ছিল চলতি বছরেই ডিম উৎপাদনে সাবলম্বী হবে রাজ্য। কিন্তু বাস্তবে জেলার ডিম ব্যবসায়ীরা এখনও দক্ষিণের রাজ্যের দিকে তাকিয়ে।
মুর্শিদাবাদ জেলা পোল্ট্রি ফেডারেশন সূত্রে জানা যায়, জেলায় মূলত পলসন্ডা, ওমরপুর আর আঁন্দিতে ডিমের ফার্ম আছে। সেখানে দৈনিক ৫০-৬০ হাজার ডিম উৎপাদন হয়। ফেডারেশন কর্তাদের দাবি, ওই ডিম সাধারণত এলাকাতেই বিক্রি হয়ে যায়। তাছাড়াও অসংগঠিত ক্ষেত্রেও কম বেশি হাজার বিশ থেকে চল্লিশ হাজার ডিম উৎপাদন হয়। তাও প্রয়োজনের তুলনায় কম বলেই দাবি ব্যবসায়ীদের। সেই ডিমও বাজারে আসে। বাজারে এখন জোড়া পোল্ট্রির ডিমের দাম কোথাও ১৪ কোথাও ১৫ টাকা। তবে এই ফাঁকে ডিমের কালোবাজারিও হচ্ছে। একাংশ ব্যবসায়ী ১৬ টাকা জোড়াতেও বিক্রি করছেন পোল্ট্রির ডিম। যা ‘তাঁরা ভুল করছেন’ বলে জানাচ্ছেন ফেডারেশনের লোকজন।
এদিকে ডিমের দাম বাড়ায় বিক্রি কমছে বলে দাবী করছেন রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে পাইস হোটেল মালিকরা। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার এক পাইস হোটেল মালিক ভাস্কর মজুমদার জানান, ” আগে ২৫ টাকায় ডিম ভাত বিক্রি করতাম। তখন কাঁচা ডিমের দাম ছিল পাঁচ টাকা। এখন কাঁচা ডিম সাত টাকাতে কিনে একই দামে বিক্রি করতে হচ্ছে ডিমভাত। ফলে লাভ কমছে।”