মেয়ের সঙ্গে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষা দিলেন মা, সফল হওয়ার আত্মবিশ্বাস চোখে মুখে

Published By: Madhyabanga News | Published On:

বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ এক সদ্যোজাত কন্যা সন্তানকে আছড়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে মুর্শিদাবাদে। রবিবারের সেই ঘটনায় শিউড়ে উঠেছে রাজ্য। কিন্তু তারপরের দিন সোমবার সম্পূর্ণ অন্যরকম এক ছবি দেখল সারা বাংলা। ঘটনাস্থল সেই মুর্শিদাবাদ।

মেয়ে হালিমা খাতুনের সঙ্গে এক স্কুলে বসে মাদ্রাসা পরীক্ষা দিলেন মা আসমাতারা খাতুন। হাসতে হাসতে বললেন, “মেয়েই লেখাপড়া শেখালো। তাঁর উৎসাহেই মাদ্রাসা পরীক্ষা দিয়েছি।”

অষ্টম শ্রেণি পাশের পরেই বিয়ে হয়ে যায় বছর ৩৩এর  আসমাতারার। তখনও তাঁর বিয়ের বয়স হয়নি। এদিন তিনি জানান, “বাড়ির অমতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল সেদিন।” তখন তিনি রেজিনগর বিধানসভার  অন্তর্গত তোকিপুর হাই মাদ্রাসাতে পড়াশোনা করতেন। কিন্তু মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করে ঘাড়ে চাপে সংসারের জোয়াল। তিন সন্তানের মা আসমাতারা বলেন, “মেয়ে চাইত আমি পড়াশোনা করি। তাই করোনার পর মেয়ের ইচ্ছেকে মর্যাদা দিতে স্কুলের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করি।”

স্কুলেই ছিল তাঁর ফেলে আসা পড়াশোনার যাবতীয় নথি। ওই স্কুলের শিক্ষক হাসিবুর রহমান বলেন, “ মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে যেহেতু বয়সের ঊর্ধসীমা নেই তাই আসমাতারাকে ভর্তি করতে কোনও সমস্যা হয়নি।” একদিন মেয়ের অভিভাবক হিসেবে যে মহিলাকে দেখেছেন অন্য অভিভাবকরা, তাঁকে স্কুলের ছাত্রী হিসেবে দেখতে পেয়ে তাজ্জব হয়ে যান তাঁরাও। মেয়ের সঙ্গে এক বেঞ্চে বসে ক্লাস করতে দেখে চমকে ওঠে হালিমার বন্ধুরাও। সপ্তম শ্রেণীর পড়ুয়া ছেলেও মাকে পড়তে দেখে উৎসাহিত হয়েছে।

তবে নিজের জন্য কোনও গৃহ শিক্ষক নেন নি আসমাতারা। ভরসা রেখেছেন মেয়ের ওপর। মেয়ে টিউশন পড়ে এসে চ্যাপ্টারের পর চ্যাপ্টার মাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। একান্নবর্তী পরিবারের বৌ হয়ে ঘর সংসার সামলিয়ে বইখাতা নিয়ে মেয়ের সঙ্গে পড়তে বসেছেন। রাত জেগেছেন, কখনও ভোরে উঠেছেন আগেভাগে পড়ে নিতে। প্রস্তুত হয়েছেন হাইমাদ্রাসা পরীক্ষায় বসতে। বেলডাঙ্গা ডিএইচ সিনিয়র মাদ্রাসায় পরীক্ষার সেন্টার পড়েছে। সেখানে মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের মনিটরিং টিমের সদস্যরা আসমাতারার ইচ্ছেকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। পর্ষদের সদস্য মহম্মদ আনসার আলী বলেন, “ আসমাতারা সমাজের কাছে উদাহরণ তৈরি করেছে। আমরা ওর সাফল্য কামনা করি। ”

হালিমার বাবা মহম্মদ শেখ চাষাবাদ করেন। এক আধটু জমি যা আছে তার থেকে বেশি আয় হয় নিজের মুদিখানার দোকান থেকে। আর তা দিয়ে দিব্যি সংসার চলে যায় বলে জানান তিনি। বিয়ের সময় অবশ্য তিনি ছিলেন ভাগচাষী। আসমাতারার ইচ্ছে আছে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার।  আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তিনি জানান, “ পাশ তো করবোই। তারপরেও লেখাপড়া শিখতে চাই।” ডোমকলের রিন্টু সেখের ঘটনা শুনে তিনিও প্রথমে আঁতকে উঠেছিলেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে সোজা তাকিয়ে ছিলেন মেয়ের দিকে। ছলছল চোখে এদিন তিনি বলেন, “আমার বড় মেয়েও আমার বন্ধুর মতো ছিল। কিন্তু আল্লার দয়া বছর খানেক আগে একদিনের জ্বরে মারা যায়। বেঁচে থাকলে এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিত।”

তিনি চান হালিমা ডাক্তারি পড়ুক। অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা কুঁকড়ে কুঁকড়ে খায় আসমতারাকে। বিয়ে করে সংসার জীবন বেছে নিক মেয়ে তা তিনি কিছুতেই চান না। স্কুলের শিক্ষক হাসিবুর বলেন, “ হালিমা মেধাবী পড়ুয়া। ও ভাল ফল করবে বলে আশা করি। মা ও মেয়ে পড়াশোনার বিষয়ে খুব সিরিয়াস”