নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ লোকসভা ভোটের আগে বহরমপুরে জনসমক্ষে খুন হয়ে গেলেন তৃণমূল নেতা সত্যেন চৌধুরী। যার জেরে ছুটির রবিবার ফের সংবাদ শিরোনামে উঠে এল বহরমপুর। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহরমপুর চালতিয়া সত্যেনের বসত বাড়ি। সেই বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় নির্মিয়মাণ একটি বহুতলের সামনে জনা কয়েক অনুগামীদের নিয়ে বসেছিলেন সত্যেন। দুপুর দুটো নাগাদ, অনুগামীদের ভিড় আলগা হতেই দুষ্কৃতিরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে বলে দাবি তদন্তকারীদের।
পুলিশের সূত্রে জানা যায়, একটি বাইকে করয়ে তিনজন দুষ্কৃতি ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেই সময় পয়েণ্ট ব্লাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তাঁকে লক্ষ করে তিন-রাউন্ড গুলি চালায় দুষ্কৃতিরা। তবে কী কারণে এই খুন তা তদন্ত করতে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন বলে জানান মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অসীম খান। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করছে পুলিশ। যদিও রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
২০১২ সালে তখন তৃণমুলের অখন্ড মুর্শিদাবাদ সংগঠনের সভাপতি প্রয়াত সুব্রত সাহার হাত ধরে বহরমপুর রবীন্দ্র সদনে তৃণমূলের পতাকা ধরেন সত্যেন। তবে ২০২১ সালের পর থেকে রাজনীতির মঞ্চে সক্রিয়ভাবে কখনোই দেখা যায়নি এই ঠিকাদারকে। বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হিসেবে ১৯৯৮ সালে প্রথমবার কংগ্রেসের প্রতীকে ভোটে জিতে রাজনীতির আঙিনায় তার প্রবেশ । বহরমপুর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতিও ছিলেন তিনি। পাঁচ বছর পর ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রসের প্রতীকে জিতে বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা হন। তারপরেই ঘটে ছন্দপতন। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ওঠে। সাত বছর এলাকা ছাড়া ছিলেন সত্যেন। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় তিনি এলাকাতেই ছিলেন না তিনি। পরে বহরমপুরে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনে মুক্ত হন। সেই মামলার এখনও ফয়সালা হয়নি।
খুনের অভিযোগে এলাকা ছাড়া হওয়ায় কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর সঙ্গে তার সেই মনোমালিন্যের শুরু। জামিন পাওয়ার পর তিনি তৃণমূলে নাম লেখান প্রাক্তন সহকর্মী সুব্রত সাহার হাত ধরে। তৃণমূলে নাম লিখিয়ে ২০১৩ সালে কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদারের বিপক্ষে ভোটে দাঁড়ান বহরমপুর জেলা পরিষদের ৪১ নম্বর আসন থেকে। কিন্তু সেবার আর জিততে পারেননি সত্যেন। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনের আমলে তিনি জেলা সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।
যদিও একুশের নির্বাচনের আগে দলের তৎকালীন জেলা সভাপতি আবু তাহের খানের সঙ্গে মতানৈক্যের কারণে দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় তাঁর। পরবর্তী সভাপতি শাওনী সিংহরায়ের আমলেও সেই দূরত্ব ঘোচেনি। বিধানসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের হয়ে তাঁকে প্রচার করতেও দেখা যায় নি। তৃণমূলের বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, “ বহরমপুরে নির্বাচন এলেই ফিরে আসে খুনের রাজনীতি। এর রহস্য কী তা ঠিকই খুঁজে বার করবে পুলিশ।” জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “তৃণমূলের নেতা, কর্মীরা নানা জায়গায় খুন হচ্ছে। এলাকায় এলাকায় জমি, বাড়ি নিয়ে দখলদারি চলছে তৃণমূল নেতাদের মধ্যেই। তার জেরে এই খুন কি না তা পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।”