মধ্যবঙ্গ নিউজ ডেস্কঃ ‘ডঃ বিকাশ চন্দ্র সিংহ’ এই নাম নিয়ে মুর্শিদাবাদবাসীর গর্ব চিরকালের। ১১ ই আগস্ট শুক্রবার সকালে না ফেরার দেশে পারি দিলেন এই বিশ্ববরেণ্য পরমাণু বিজ্ঞানী। শেষ সময়ে কাটিয়েছেন কলকাতার মিন্টো পার্কের বাড়িতে। মুর্শিদাবাদের ভূমিপুত্র, কান্দি রাজপরিবারের সন্তান বিকাশ চন্দ্র সিংহ দেশের স্বনামধন্য একজন পরমাণু বিজ্ঞানী, যাঁর খ্যাতি বিশ্বজোড়া। মৃত্যুকালে বয়স তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। শুক্রবার সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।
১৯৪৫ সালের আজকের দিনেই মুর্শিদাবাদের কান্দিতে জন্মগ্রহণ করেন বিকাশবাবু। প্রাথমিক পড়াশোনা কান্দিতেই, তারপর কলকাতার স্কটিশচার্চ হাইস্কুল, প্রেসিডেন্সী কলেজের পাঠ সম্পন্ন করে বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড পারি। সেখানে ‘ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ’ থেকে পড়াশোনা, বিজ্ঞান চর্চা, গবেষণা। যৌবনের প্রায় ত্রিশটি বছর বিদেশে পারমাণবিক বিজ্ঞান চর্চায় বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করে দেশে ফেরা।
বিদেশের মাটিতে গবেষণার সূত্রপাত হলেও নিজের দেশ তথা নিজের মাটিকে কখনই অস্বীকার করেননি ড. বিকাশ চন্দ্র সিংহ। বাংলা তথা নিজের জেলা মুর্শিদাবাদের সাথেও তাঁর যোগ ছিল অবিচ্ছেদ্য। একটি সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ” বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাত সবসময় গাঁয়েগঞ্জেই হবে, শহরে হবে না “। তাঁর নিজের সাফল্যের পিছনেও তিনি বারবার কৃতজ্ঞ থেকেছেন গ্রামের পরিবেশে বড়ো হয়ে ওঠাকেই।
দেশে ফিরে তিনি দায়িত্ব সামলেছেন ‘ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার’ সহ একাধিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের। পরমাণু বিজ্ঞান গবেষণাকে কীভাবে মানুষের হিতের কাজে লাগানো যায় তা নিয়েই সারা জীবন তপস্যা করেছেন এই বিজ্ঞানতাপস। কলকাতায় স্থাপন করেন ‘ভেরিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন কেন্দ্র’-এর। সেখানে তিনি নিজে তো গবেষণা করতেনই সাথে উজ্জীবিত করতেন তরুণ প্রজন্মের বিজ্ঞানীদেরও।
পারমাণবিক বিজ্ঞান গবেষণার নতুন পথপ্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মানের পাশাপাশি ২০০১ সালে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী ও ২০১০ সালে পদ্মভূষণ সম্মান পেয়েছেন ড. বিকাশচন্দ্র সিংহ। সামলেছেন বিভিন্ন নামী বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্রের শীর্ষপদও। শেষ সময়ে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। অবশেষে ১১ ই আগস্ট শুক্রবার, ৭৮ বছর বয়সে দেহত্যাগ করলেন এই বিজ্ঞানরত্ন।
এই বিশিষ্ট বিজ্ঞানীর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করে লিখেছেন, ‘‘মহান বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহের অকাল প্রয়াণে শোকাহত। বাংলার এক কৃতী সন্তান, এই প্রতিভাবান পরমাণু পদার্থবিজ্ঞানী শুধুমাত্র জ্ঞানের জগতেই নয়, জনজীবনেও তাঁর অবদানের মাধ্যমে আমাদের গর্বিত করেছেন। আমরা তাঁকে ২০২২ সালে আমাদের সর্বোচ্চ সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ প্রদান করেছিলাম। এবং মঞ্চে তার ব্যক্তিগত উপস্থিতি আমাদের অনুপ্রাণিত করেছিল। আমরা তাঁকে ২০২২ সালে ‘রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কারে’ও সম্মানিত করেছিলাম। আমি তার পরিবার, বন্ধু, ছাত্র এবং ভক্তদের আন্তরিক সমবেদনা জানাই।’’
মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দির এই ভূমিপুত্রকে তাঁর কাজের জন্য সময় সর্বদা মনে রাখবে জেলাবাসী। গর্ব করবে তাঁর কাজ নিয়ে। মধ্যবঙ্গের মানুষ তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত, বিজ্ঞান চর্চায় দিগন্ত প্রসারী অবদানের জন্য প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, অধ্যাপক ড. বিকাশচন্দ্র সিংহকে।