State Child Protection Day কোভিডকালের পর থেকে শিশুদের মধ্যে বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতা। ডিজিটাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলিতে চলে আসছে শিশুরাও। অন্যদিকে ডিজিটাল মাধ্যমে হেনস্থার সম্মুখীনও হতে হচ্ছে শিশুদের। ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলিতে শিশুদের সুরক্ষতি রাখতে স্কুলে স্কুলে ডিজিটাল দুনিয়া নিয়ে পাঠ দেওয়ার সুপারিশ করছে পশ্চিম বঙ্গ শিশুসুরক্ষা কমিশন West Bengal Commission for Protection of Child Rights (WBCPCR) । শিশুদের বয়স অনুযায়ী আলোচনা তৈরী করে সচেতনতা বাড়ানো যেতে পারে । সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে যে শিশুদের জন্য ওঁত পেতে থাকা বিপদ সম্পর্কেও শিশুদের সচেতন করা প্রয়োজন।
পশ্চিমবঙ্গ শিশুসুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস এদিন রাজ্য শিশু সুরক্ষা দিবসের State Child Protection Day অনুষ্ঠানে শামিল হয়ে বলেছেন, “ ইন্টারন্টে শিশুদের বিপদ বাড়ছে। অনেক শিশুপাচার, বাল্য বিবাহ, হেনস্থা এবং শিশুদের দিয়ে তৈরী করা পর্নোগ্রাফির ক্ষেত্রে শিশুদের টোপ দেওয়ার জন্য ইন্টারনেটকে ব্যবহার করা হচ্ছে। নেট দুনিয়ার বিভিন্ন বিষয় বিশেষ করে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার মতো বিষয়গুলি নিয়ে পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের সচেতন করার প্রয়োজন আছে”। পশ্চিম বঙ্গ শিশুসুরক্ষা কমিশন এবং ইউনিসেফের উদ্যোগে এদিনের অনুষ্ঠান হয়।
তিনি বলেছেন, “ শিশু পাচার, বাল্য বিবাহ, শিশু নির্যাতনের অনেক ঘটনা শিশুদের দ্বারা ব্যক্তিগত তথ্য ব্যাপকভাবে ভাগ করে নেওয়ার ফলে ঘটছে। পাচারকারী এবং অন্যান্য অসাধু ব্যক্তিরা শিশুদের তাদের ফাঁদে ফেলার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে”।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্যের অসতর্ক শেয়ারিংয়ের ফলে অনেক সময় শিশুদের নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়েছে। চেয়ারপারসন বলেন, “ আমরা ডিজিটাল সাক্ষরতাকে স্কুলের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করব এবং শিশু-বান্ধব উপায়ে এইসব শেখানো হবে যাতে তারা যখন পড়াশোনা করে বা খেলাধুলা করে বা ইন্টারনেটে বন্ধুত্ব করে তখন তারা সুরক্ষিত থাকে”। সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য কমিশন “অনলাইন নিরাপত্তা”র বিষয়টি মাথায় রেখে পাচার বিরোধী পোস্টার, অডিও বার্তা, মিউজিক ভিডিও প্রকাশিত হয় শুক্রবার দার্জিলিং’এর গোর্খা রঙ্গমঞ্চ ভবন’এর অনুষ্ঠানে ।
শিশুদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে অনুষ্ঠানে অংশ নেয় মুর্শিদাবাদ, মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচ বিহারের শিশুরা। State Child Protection Day উদাযাপনের অনুষ্ঠানে শিশু বান্ধব কাজের জন্য ৫ জন পুলিশ কর্মী এবং ২ টি চাইল্ড কেয়ার ইনস্টিটিউশনকে এদিন পুরষ্কৃতও করা হয়।
ইউনিসেফ UNICEF ছিল এদিনের অনুষ্ঠানের সহযোগী আয়োজন সংস্থা। ইউনিসেফ সারা বছর রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন শিশু সুরক্ষা কর্মসূচিতে পশ্চিম বঙ্গ শিশুসুরক্ষা কমিশনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে । অনুষ্ঠানে দার্জিলিং জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ শিশুদের বলেছেন, যাতে ইন্টারনেটে কাউকে বিশ্বাস না করে। তিনি বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যক্তিগত ছবি, ঠিকানা, ফোন নম্বর,স্কুলের নাম শেয়ার করা উচিৎ নয়।
প্রবীণ প্রকাশ এক সময় কলকাতায় ডিসিপি সাইবার ক্রাইম হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। State Child Protection Day উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে প্রাইভেসি সেটিং আপডেট করতে হবে। নিজের আপনার পরিচয় প্রকাশে আনার দরকার নেই। পরিচয় শেয়ার করার অপশনটি ব্লক করুন । সমস্ত অপরিচিত ব্যক্তিকে বন্ধু তালিকা থেকে মুছুন”।
ইউনিসেফে পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান প্রভাত কুমার শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের অনুরোধ করেছেন, যাতে সকলেই ইন্টারনেটে কাজ করার সময় সতর্ক থাকে। তিনি বলেছেন, “ ইন্টারনেটে কোনও তথ্য শেয়ার করা, কোনও ছবি অ্যাকসেপ্ট করার এবং এই রকম কাজ করার আগে অবশ্যই ভাবনাচিন্তা করতে হবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কেউ সাইবার বুলিং-এর স্বীকার হলে সেটা বন্ধু, পরিবার বা পুলিশ প্রশাসনকে জানাতে হবে”।
State Child Protection Day শুক্রবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব, পশ্চিমবঙ্গ শিশুসুরক্ষা কমিশনের সেক্রেটারি আর অর্জুন, দার্জিলিং জেলার জেলা শাসক প্রীতি গোয়েল, গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সম্পাদক এসটি ভুটিয়া, দার্জিলিং জেলার জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের প্রিন্সিপাল ম্যাজিস্ট্রেট অপর্ণা চ্যাটার্জি, শিশু সুরক্ষা ও পাচার বিষয়ের ডিরেক্টর নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত এবং দার্জিলিং জেলার জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসী প্রামাণিক। ছিলেন WBCPCR এর উপদেষ্টা, সদস্যরাও।