মধ্যবঙ্গ নিউজ ডেস্কঃ ফাইলেরিয়া রোগ সম্পূর্ণ দূর করা যায় নি মুর্শিদাবাদে। ফরাক্কা ও সুতি ২ নম্বর ব্লকে এখনও এই রোগের জীবাণু পাওয়া যায় মানব শরীরে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, উচেরেরিয়া ব্যাঙ্ক্রফটি নামক একপ্রকার কৃমি এই রোগের কারণ। কিউলেক্স মশার দুটি প্রজাতির কামড়েও এই রোগ হয় বলে মত চিকিৎসকদের। ফাইলেরিয়া রোগে মানুষের হাত-পা ও অন্যান্য অঙ্গ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে। একে স্থানীয়ভাবে গোদ রোগও বলা হয়।
মুর্শিদাবাদ জেলা স্বাস্থ্য দফতর এই রোগ দূর করতে ফের উদ্যোগী হয়েছে। সেই উপলক্ষে ফরাক্কা ও সুতি ২ নম্বর ব্লকে গণ ঔষধ সেবন কর্মসূচী মুর্শিদাবাদ জেলায় শুধুমাত্র এই দুটি ব্লকের বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচিতে ২ বছরের উর্ধ্বে, গর্ভবতী ও গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া, সকলকেই স্বাস্থকর্মীরা অ্যালবেন্ডাজোল ও ডি.ই.সি. ট্যাবলেট খাওয়ানো হবে। ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম দফায় আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান গুলিতে এই কর্মসূচী পালন করা হবে এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফায় স্বাস্থকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই ওষুধ দিয়ে আসবেন।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, এই কর্মসূচিতে মোট ১ হাজার ৫৫৫ জন স্বাস্থকর্মী এই উনিশ দিনের মধ্যে প্রায় ছয় লক্ষ পঞ্চাশ হাজার মানুষকে ঔষধ সেবন করানো লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক দফায় আই.সি.ডি.এস কেন্দ্র, সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ, সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বিডিও অফিস, পঞ্চায়েত অফিস, পুলিশ স্টেশন, ইঁটভাটা সহ সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলি এই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফারাক্কা ও সুতি দুই ব্লক দুটির বিড়ি শ্রমিকদের ওষুধ সেবনের জন্য ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের অভিযোগ, মানুষ জনের মধ্যে ওই ওষুধ গ্রহণের প্রবণতা কম থাকায় জেলা থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা যায়নি ফাইলেরিয়া।
এর আগেও ২০২১ সালের শেষ দিকে জেলায় ফাইলেরিয়া রোগীর হদিশ পেতে রাতে রক্তের নমুনা সংগ্রহ শিবিরের আয়োজন করেছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সেবার তিনদিন ধরে পুর ও ব্লক এলাকা মিলিয়ে জেলার দশটি জায়গায় এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। বহরমপুর ব্লক, বহরমপুর পুর এলাকা, সুতি ২, নওদা, শমসেরগঞ্জ, ফরাক্কা, রঘুনাথগঞ্জ ১ ও ২ এলাকাতেও রাত সাড়ে আটটার পরে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০২০ সালে রক্তের যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল তাতে মাইক্রো ফাইলেরিয়া রেট ছিল এক শতাংশের কম ছিল বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেলায় শিশু ও স্কুল পড়ুয়াদের তিনবার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। মুর্শিদাবাদে তেমন প্রভাব না পড়লেও ২০১৮ সালে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গোদের প্রকোপ উদ্বেগ বাড়িয়েছিল চিকিৎসক মহলে। প্রতিবেশি নদিয়াও ছিল উদ্বেগের তালিকায়। তবে এই রোগের জন্য সচেতনার প্রচার কম বলে অভিযোগ ওঠে সর্বস্তরে। ফাইলেরিয়ার প্রকোপ কমাতে ২০০৪ সালে কেন্দ্রের তরফ থেকে এমডিএ বা মাস ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রোগ্রাম চালু করা হয়।