মাসুদ আলি, ঋত্বিক দেবনাথঃ Samserganj Erosion মানওায়ারা বেওয়া। সামশেরগঞ্জের Samserganj বাসিন্দা। কষ্ট করে নিজের হাতে করে বানিয়েছিলেন স্বপ্নের বাড়ি। কিন্তু গঙ্গা ভাঙনে হয়েছে সর্বনাশ। জলের গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে মাথা গোজার ছাদ। প্রায় এক বছর আগে বাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে যায় মানওয়ারা বেওয়ার বাড়ি। স্বামীহারা মানওয়ারা বেওয়া ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বারান্দায়। কখনও ত্রিপল বিছিয়ে তো কখনও আবার বৃষ্টি পরলে সেই ত্রিপলকেই টাঙিয়ে কষ্ট করে নিজেদের দিন গুজরান করতে হয়।
কারণ গঙ্গা Ganga River সেই গ্রামের বাড়ি গিলে নিয়েছে। তিনি বললেন, “আমি ওই ভিটেমাটি ছেড়ে এসেছিলেম এখানে। অন্যের জায়গায় থাকছি। ত্রিপল বিছিয়ে। গরম পেরোলেই বর্ষা। তখন কী করব জানি না। এইভাবেই সন্তানদের নিয়ে থাকছি’। এইটুকু কথা বলতে বলতে চোখে জল চলে এল মানওায়ারার। ভাষা হারিয়ে ফেললেন। পাট্টা পেয়েছেন কিন্তু জমি কোথায় ? প্রশ্ন করছেন বারবার।
পরের জায়গায় পরিবারের সঙ্গে। আজ প্রায় এক বছর ধরে বাস করছেন তারা খাতুন। অন্যের জায়গায় ঠাই হয়েছে ঠিকই কিন্তু প্রতিনিয়ত রয়েছে নিশ্চয়তা। পাট্টা পেয়েছেন তারা খাতুন। কিন্তু সেই জমি কোথায় ? জানেন না তারা খাতুনরা। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা তারা খাতুন জানান, ‘দুই ছেলে আর স্বামীকে নিয়ে আজ প্রায় ২ বছর হল পরের জায়গাতে থাকছি। পাট্টা পেয়েছি কিন্তু জায়গা পায় নি। আবার ভাঙন ধরেছে। কীভাবে কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না’।
মনিরুল ইসলাম কষ্ট করে এখানে বাড়ি বানিয়ে ছিলেন। স্বপ্নেও ভাবেননি সেই দুঃস্বপ্নের রাত আবার ফিরে আসবে। মনিরুল ইসলাম এইদিন বলেন, ‘নিজের হাতে আগের বাড়ি ভেঙে ছিলাম। কী করব উপায় নেই। শুক্রবার বৃষ্টি হওয়ার পর আবার ১০-১২ বিঘা জমিতে ফাটল ধরেছে। কী হবে জানি না’।
একই অবস্থা সামশেরগঞ্জ ব্লকের কামালপুর গ্রামের বহু বাসিন্দার । এক বছর ধরে বাড়িহারা । কখনও স্কুলের বারান্দায় তো কখনও অন্যের আঙিনায় বাস করছেন। এক বছর আগের গঙ্গা ভাঙনের ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন এই এলাকার মানুষেরা। এর মাঝেই নতুন করে ভাঙ্গনের আশংকা।
২০২৩ সালের ৫ই মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামশেরগঞ্জে গঙ্গা ভাঙন দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সেদিন ৮৭টি পরিবারের হাতে জমির পাট্টা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় এক বছর পার । পাট্টা মিললেও বাড়ি করার জমির দখল পাননি কেউই। কামালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের মুখেও শোনা গেল সেই একই কথা।
কামালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য আসফাল সেখ জানান, ‘পাট্টা অনেকেই পেয়েছেন । কিন্তু জমি নেই। বিডিও সাহেবকেও জানিয়েছি। উনি বলেছেন জায়গার ব্যবস্থা করে দেবে’। গ্রীষ্ম পেড়োলেই আসবে বর্ষা। কী হবে তখন ? ঘনাচ্ছে চিন্তার মেঘ। কবে মিলবে মাথা গোঁজার ঘর ? উত্তর খুঁজছে ভাঙন বিধ্বস্ত কামালপুর।