খাদি বস্ত্রের বিক্রি কম বহরমপুরের খাদি মেলায়

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের উদ্যোগে বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ারে চলছে খাদি মেলা। মুর্শিদাবাদ জেলা ছাড়াও প্রতিবেশী বীরভূম, নদিয়া সহ চারটি জেলার খাদি বস্ত্র সমিতির মোট ১৫০টি স্টল বসেছে এই মেলায়। ওই মেলাতেই বিক্রি হচ্ছে গরদ, তসরও। কিন্তু সেখানে অন্য বছরের তুলনায় এবার বিক্রিতেই ভাঁটা পড়েছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। যদিও মেলা দেখতে ভিড়ও হচ্ছে প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায়। খাদির জামা, গামছা, কাপড় হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছেনও মানুষজন। কিন্তু তেমনভাবে কিনছেন না কেউ বলছেন তাঁরা। বিক্রেতাদের আক্ষেপ, মেলায় আসার খরচই উঠছে না।

খাদি ও রেশম বস্ত্রের জন্য মুর্শিদাবাদের সুনাম রয়েছে দেশ জুড়ে। এই জেলার মির্জাপুর, জিয়াগঞ্জে তৈরি হয় গরদ। যার চাহিদা থাকে বছরভর। সাধারণত এই ধরনের মেলায় বেচা কেনার পাশাপাশি সিল্ক সামগ্রীর প্রদর্শনীও অন্যতম লক্ষ্য বলে দাবি উদ্যোক্তাদের।

একাধিকবার এই শিল্প মুখ থুবড়ে পরেছে ক্রেতার অভাবে। যুগের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে পিছিয়ে পড়েছে। ঘুরে দাঁড়াতে সরকারও উদ্যোগী হয়েছে। ভর্তুকী চালু হয়েছে। ছোট ছোট স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। ফের একটু একটু করে মুখ তুলেছে খাদি বস্ত্র। আগের তুলনায় আধুনিক হয়েছে পোশাক। কিন্তু জার্নি তবু কঠিন। মুর্শিদাবাদ থানার হাসানপুর থেকে বহরমপুরে খাদির পসরা সাজিয়ে মেলায় বসেছেন ব্রজমোহন মন্ডল। এদিন তিনি বলেন, ” বাড়তি রোজগারের আশায় খাদির সুতোর মধ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। সরকারের তরফে তা পরীক্ষা করেও দেখা হচ্ছে না। একে বন্ধ করতে হবে।” হাতে তৈরি এই বস্ত্রের সুদিন ফেরাতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন প্রবীণ ব্রজমোহন। তাঁর দাবি, “রেশম চাষ করেও লাভ পাচ্ছে না চাষি। ফলে তাঁরা আর এই চাষ না করলে তো বন্ধই হয়ে যাবে সব।”খাদি মেলায় বসেছে খাদির সম্ভার। ছবিঃ শুভরাজ সরকার

ব্রজমোহন তাঁর যুবক বয়স থেকে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। জেলায় তাঁতীর সংখ্যা এক লক্ষ থেকে পনের হাজারে নেমেছে বলে দাবি তাঁর। একই দাবি করেন মির্জাপুর থেকে আসা আর এক ব্যবসায়ী মলয় মুনিয়াও। তিনি বলেন, ” মির্জাপুরে একসময় অনেক তাঁত শিল্পী ছিলেন। এখন মেরেকেটে চারশো জন।” অথচ রঘুনাথগঞ্জের মির্জাপুর গরদ শাড়ির জন্য বিখ্যাত। নতুন প্রজন্ম মুখ ফিরিয়েছে এই শিল্প থেকে। সুতোর দাম বেড়েছে। বাজারে টিকে থাকতে দাম বেড়েছে। মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই শখের পোষাকে নাম লিখিয়েছে মুর্শিদাবাদ সিল্ক। ডোমকল থেকে মহিলা রেশম ও খাদি গ্রামোদ্যোগ সমিতি থেকে মেলায় এসেছেন রূপম সরকার। তিনি বলেন, “একইধরনের পোশাকের দামের পার্থক্য দেখে মানুষজন আসল খাদি এড়িয়ে যাচ্ছেন। মেলার দিকে ফি বছর তাকিয়ে থাকি। কিন্তু এবার মেলা জমছে না। শেষ পাঁচ বছর দেখেছি মেলায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার যেন বড্ড ম্যারমেরে।”