বাল্য বিবাহ কত দিন ভোগাবে? মণ্ডপ সজ্জায় বিশেষ বার্তা
নিজস্ব প্রতিবেদনঃ ভাবলে শিউরে উঠতে হয়! স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে পুড়িয়ে দেওয়া হতো! এরকমই নির্মম সতীদাহ প্রথা রদ করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে রাজা রামমোহন রায়কে। ঊনবিংশ শতাব্দীকে বলা হয় নব জাগরণের সময়। সেসময় পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সতীদাহের মতো ভয়ঙ্কর প্রথা ছিল। একইভাবে ছিল বাল্যবিবাহের প্রচলন। তবে সতীদাহ বন্ধ হলেও বাল্য বিবাহের অভিশাপ এখনও থেকে গিয়েছে। যা নিয়ে অনেক চর্চা, আলোচনা শোনা যায়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায় সেই সময় সমাজ সংস্কার করেছিলেন। বাল্যবিবাহ রোধ ও সতীদাহ প্রথা বন্ধ করে নবজাগরণ ঘটিয়েছিলেন। ২৬ সেপ্টেম্বর ছিল বিদ্যাসাগরের জন্মদিন। বহরমপুরের (Berhampore) সৈদাবাদ কুহেলি সংঘ সর্বজনীন দুর্গাপুজো (Durga Puja) কমিটির এবছরের পুজোর থিম ‘সমাজ সংস্কারের কান্ডারী’। কীভাবে সমাজ সংস্কারে দুই মনীষী কাজ করেছিলেন তা তুলে ধরা হয়েছে এই পুজোর মণ্ডপে। এবছর এই পুজো ৫১ বছরে পড়ল। বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মান ২০২৫ পায় এই পুজো কমিটি। মিলেছে বহরমপুর মহকুমায় সেরা পুজোর স্বীকৃতি।
Durga Puja Berhampore News মুর্শিদাবাদ জেলায় বাল্যবিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এখনও তা থেকে পুরোপুরি নিস্তার মেলেনি। মণ্ডপে তুলে ধরা হয়েছে সমাজের এই সব অভিশাপের ঘটনা। কোথাও নাবালিকা পাত্রীর ছবি দিয়ে বলা হয়েছে ‘স্টপ’। সেখানে বাংলায় লেখা হয়েছে, ১৯২৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল দ্বারা সারদা আইন (বাল্য বিবাহ নিরোধক আইন পাশ হয়)। ২০০৬ সালে বাল্য বিবাহ সংশোধনী আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর করার কথা। একইভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, রামমোহন, বিদ্যাসাগরের জন্ম বৃত্তান্ত। গুরত্বপূর্ন ঘটনাবলী তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ Biswa Bangla Sharad Samman 2025 প্রতিমা থেকে মণ্ডপ- মুর্শিদাবাদে সেরা পুজোর তালিকায় কারা?
মণ্ডপে রামমোহনের ছবি দিয়ে লেখা রয়েছে ১৭৭২ সালের ২২ মে হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।”সকল মায়ের সন্তান তুমি, সকল বোনের ভাই। নতুন ভারতের রূপকার হে কুর্নিশ তোমাই। রাজা রামমোহন রায়”। কোথাও বিদ্যাসাগরের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ”ভর্তি ছিল অন্ধ বিশ্বাস, চলতো বাল্য বিয়ে, দেখিয়ে দিলে ভুল যে তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে”। কোথাও শিক্ষিকা পড়াচ্ছেন ছাত্রীদেরকে। লেখা রয়েছে অ, আ, ই, ঈ।
Durga Puja Berhampore News বিদ্যাসাগর প্রথম তাঁর পুত্র নারায়ণচন্দ্রকে ভবসুন্দরী নামে এক বিধবার সঙ্গে বিয়ে দেন। তারপরই বেড়া ভেঙে যায়। খুলে যায় পথ। সমাজ সংস্কারে যেসব মহীয়সী পথ দেখিয়েছেন তাঁদের অনেকের ছবিও মণ্ডপে তুলে ধরা হয়েছে। ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাই, মাদার টেরিজা থেকে মহাশ্বেতা দেবীর ছবি তুলে ধরা হয়েছে সেখানে। ছবি, বর্ণ দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপ। দেওয়াল চিত্রে দেওয়া হয়েছে বর্ণনা। বাঁশ, কাঠ, কাপড় দিয়ে হয়েছে মণ্ডপ সজ্জা। বাঙ্গালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজোয় বসে মানুষের মেলা। সমাজ সংস্কারের বার্তা দেওয়ার জন্য এই মঞ্চকে বেছে নেন পুজো উদ্যোক্তারা। তাই এই থিম ভাবনা।