সাগরদিঘির ভোট জোটে শিলমোহর দিতে মুর্শিদাবাদে সেলিম

Published By: Madhyabanga News | Published On:

মধ্যবঙ্গ নিউজ ডেস্কঃ সাগরদিঘির উপনির্বাচনের ভোটে জোট বেঁধেছে বাম কংগ্রেস। সেই জোটে শিলমোহর দিতে  সোমবার দুপুরে  জেলায় বামফ্রন্টের শরিক দলের নেতাদের নিয়ে বহরমপুরে  সাংবাদিক বৈঠক করলেন সিপিআই(এম)’এর  রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সাম্প্রতিক অতীতে যা নজিরবিহীন বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের। তৃণমূলের জঙ্গীপুর সংগঠনের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, “ বামফ্রন্টের শরিকরাও সিপিআই(এম)’এর  কংগ্রেসকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না। তাই শরিকদলের নেতাদের নিয়ে সেলিমকে সাংবাদিক বৈঠক করে মিথ্যেকে ঢাকতে হচ্ছে। এটা লজ্জার।”

সাগরদিঘির উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলায় বাক যুদ্ধে নেমেছে সব রাজনৈতিক দলই। তবে সিপিআই(এম)  তাঁর হারানো জমি পুনরুদ্ধারে এককভাবে লড়াই না করে কংগ্রেসের হাত ধরায় জেলা জুড়ে চর্চার কেন্দ্রে ফিরেছে সিপিআই(এম)ই। জোটের ভবিষ্যৎ ‘জট’ নিয়ে চলছে জল্পনাও। উল্টোদিকে নিজেদের জমি দখলে রাখতে সেই চর্চাকে হাতিয়ার করে প্রচার শুরু করেছে শাসকদল তৃণমূল। তা ‘মিথ্যে’ প্রমাণেই সেলিমের এই নজিরবিহীন সাংবাদিক বৈঠক বলে দাবি রাজনীতির কারবারিদের। এর জেরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আপাত নিরীহ সাগরদিঘির উপনির্বাচন নিয়ে সরগরম জেলা।

১৯৭৭ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের এই বিধানসভা আসন ছিল বামেদের দখলে। শেষবার ২০০৬ সালে কংগ্রেসের রাজেশ ভকতকে হারিয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন সিপিআই(এম)’এর  পরীক্ষিত লেট। রাজ্যের পালাবদলের পর এই আসন তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় শাসকদল তৃণমূল। তারপর থেকে সাগরদিঘি তিন বার নিজেদের  দখলে রেখেছিল। সুব্রত সাহার অকাল মৃত্যুতে তা  হাতছাড়া করতে নারাজ তৃণমূল। তবে রাজ্য জুড়ে শাসকদলের নানান ‘দুর্নীতি’ নিয়ে সিপিআই(এম)’এর  ছাত্র ও যুবরা যখন মানুষের মন টানতে লড়াই চালাচ্ছে সেই সময় আলিমুদ্দিনের ‘হাত ধরা’র সিদ্ধান্তে ওই আসন তাঁদের দখলে থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত তাঁরা। সে কথা জানিয়ে খলিলুর বলেন “ ক্ষমতা পাওয়ার লক্ষে যাঁরা জোট করেন তাঁদের মানুষ গুরুত্ব দেয় না। তৃণমূল মানুষের সঙ্গে ছিল আছেও। সাগরদিঘির মানুষ আমাদেরকেই নির্বাচিত করবেন।” সেই লক্ষে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আলিমুদ্দিনের সিদ্ধান্তে “মুর্শিদাবাদে সিপিআই(এম)  শূন্য হবে” বলে জোর প্রচার শুরু করেছেন শাসক দলের নেতারা। এই কৌশলে সিপিআই(এম)’এর  নীচু তলার কর্মীদের মনোবলে চিড় ধরাচ্ছেন বলে দাবি রাজনীতির বিশেষজ্ঞদের।

যদিও তা আমল দিতে নারাজ জেলা সিপিআই(এম) । কংগ্রেস প্রার্থী ‘বিড়ি মালিক’ বাইরন বিশ্বাসকে সমর্থন করে তাঁদের কর্মীরা কোমড় বাঁধছে বলে দাবি সিপিএমের একাংশ জেলা নেতার। সোমবার দলের মুর্শিদাবাদ জেলা কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সে কথাই আরও একবার শুনিয়ে গেলেন সিপিআই(এম)’এর  রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন তিনি বলেন, “মানুষের ঐক্য গড়ে তুলে বিজেপি তৃণমূলের বিরোধীতা করার জন্য আমরা কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করেছি।” যে প্রার্থীকে  সমর্থন করছে সেলিমের দল, সেই প্রার্থীর সঙ্গে তৃণমূলের সু-সম্পর্কের কথাও সাগরদিঘিতে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে বলে কংগ্রেস ও সিপিআই(এম)’এর  একাংশ কর্মীও দাবি করছেন বলে সূত্রের খবর। সেই দাবিকে গুরুত্ব না দিয়ে সেলিম বলেন, “ বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এইরকম নানান কথা বলা হয়। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্ক কী? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমিত শাহের সঙ্গে সম্পর্ক কী?” এরপরেই বিজেপি ও তৃণমূলের সমালোচনা করে সেলিম বলেন, “ কে কার কোলে বসে আছে? চালনি বলছে সূঁচকে তোর পিছনটা ফুটো। কেটলি কড়াইকে বলছে তোর পেছনটা কালো। সবচেয়ে বড় চোররা দলীয় মুখপাত্র সেজে টেলিভিশনে বসে মানুষকে বাণী শোনাচ্ছেন। এসব কথার কোনও মানে হয় না। বিরোধীরা কি বলছেন সে দিকে ছুটলে হবে না। সাগরদিঘির মানুষ কি চাইছেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।”

তবে জোটের জটে নিজেদের লাভ দেখছে গেরুয়া শিবির। বহরমপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিজেপি’র সর্বভারতীয় নেতা  রাহুল সিনহা সিপিআই(এম) ও কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেন । তিনি  বলেন , দুটো শূন্য এক হলেও ওদের প্রতি মানুষের বিশ্বাস নেই। তৃণমূলের আসল চেহারা মানুষ দেখে নিয়েছে।  গতবার আমরা দ্বিতীয় ছিলাম। এবার বিজেপি প্রার্থী বিপুল ভোটে  জয়ী  হবে” ।