নিজস্ব প্রতিবেদনঃ বহরমপুর (Berhampore) স্টেশন চত্বরে গা ছমছম করতো। মরা কাটে বলে চত্বরের সামনে ওখানে কেও যেতেই চাইতেন না। তখন মেডিক্যাল কলেজের মর্গ ছিল স্টেশন থেকে বেরিয়ে রাস্তায় উঠতে ডান দিকে। রাত বিরেত, বৃষ্টির সময় ভরসা ছিলেন রিকশাওয়ালারা (RIckshaw Puller)। তখন শহর জুড়ে হাজার-হাজার রিকশো চালক। ইউনিয়ন। সে কী রমরমা। টোটো চালু হওয়ার দেড় দশকও হয়নি। তার আগে অগতির গতি ছিল ওই রিকশাওয়ালারাই। সমগ্র বহরমপুর শহরে ১০ হাজারের বেশি রিকশা ছিল। এখন তা নেমে এসেছে শখানেকে।
আরও পড়ুনঃ Farakka News ফের ভাঙনের আতঙ্ক ফরাক্কার এই গ্রামে
Rickshaw Puller Berhampore তাও বহরমপুর স্টেশন চত্বর ছাড়া রিকশো সবসময় পাওয়া যায় এমন কোনও জায়গা এই শহরে নেই। টোটোর জেরে আর রিকশোর বাজারও নেই। পা দিয়ে প্যাডেলে টেনেই এখনও কয়েকজন রিকশো চালাচ্ছেন। তার মধ্যে এমনও কয়েকজন আছেন যারা ৪০-৫০ বছর ধরে রিকশো চালাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের হালও ভালো নয়। কোনওরকমে দিন গুজরান করেন। এমনই জানালেন ওই চালকরা। তা আর কতদিন? এরপর কি একেবারে হারিয়ে যাবে রিকশোওয়ালারাও?

Rickshaw Puller Berhampore বুধবার দুপুরে জেলা মৎস্য দফতরের অফিসের সামনে বাঁদিকে রাস্তার উপরে ধূলোমাখা একটা পুরনো রিকশোয় চোখ আটকে গেল। ভিতরে পা ছড়িয়ে বসেছিলেন বৃদ্ধ চালক। তিনি আগে দিল্লিতে রিকশো চালাতেন। তারপরে বহরমপুর শহরে রিকশো চালাচ্ছেন। নাম বিভূতি মন্ডল। রিকশোওয়ালারা এখন কেমন আছেন? একথা বলাতে আমাকে পথ দেখিয়ে দিয়ে বললেন স্টেশন চত্বরে যান। সেখানে গেলেই সব জানতে পারবেন। সমঝদারোকে লিয়ে ইশারাহি কাফি হ্যায়। তাঁর কথাতেই ধরা পড়ছিল কোনও কঙ্কালসার চেহারা দেখতে পাঠাচ্ছেন তিনি।
Rickshaw Berhampore স্টেশন চত্বরে রণজিৎ মাল দু’হাজার সাল থেকে রিকশো চালাচ্ছেন। রিকশোই তাঁর বাড়ি। সেখানেই কাটে অষ্টপ্রহর। সাগরদিঘিতে তাঁর দুই ছেলে, মা থাকেন। দিনে গড়ে আয় হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। বললেন,বাইরে থেকে লাগেজ নিয়ে কেও এলে মায়া হলে রিকশোয় চড়েন। ২০ বছর ধরে রিকশো চালান সহদেব ঘোষ। হরিহরপাড়া বাড়ি। তিনিও দিন-রাত সেখানে রিকশোতেই থাকেন। কৃষ্ণমাটির বাসুদেব হালদারের মতো এমনও কয়েকজন রয়েছেন যারা প্রায় ৫০ বছর রিকশো চালাচ্ছেন। রাধারঘাট সহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাও রয়েছেন।

Rickshaw Puller Berhamporeতবে রিকশোতেও কাঠামোগত ভোল বদল হয়েছে। এখন আর কাঠের রিকশো প্রায় দেখা যায় না। যে রিকশোতে দুজন যাওয়া যেত। রিকশো উঠে এসেছে সাহিত্যের পাতা, সিনেমার পর্দাতেও। এখন লোহার বেনারসের রিকশোর চল। বেনারসের ধাঁচে ওই রিকশোতে চার জন যাওয়া যায়। এই জেলায় কান্দিতে প্রথম ওই রিকশোর চল হয়। তারপর তা ছড়িয়ে পড়ে। এই রিকশোর খরচ বেশি। তবে এখনও কাঠের রিকশো ধরে রেখেছেন বাসুদেব হালদার। তবে সব রিকশোর মালিক কিন্তু রিকশোওয়ালারা নয়। মালিককে ভাড়া মিটিয়ে রিকশো চালান এমনও আছেন। লোহার নতুন রিকশো কিনতে গড়ে খরচ পড়ে ১৫ হাজার টাকা। সেজন্যে পুরনো রিকশো কম দামে কিনে চালান বেশিরভাগ চালক। ওদের ভাষায় সেটা ‘বাংলা রিকশো’।
Rickshaw Berhampore ওঁরাও জানেন না এরপরে কী? কোথায় রিকশোর ভবিষ্যৎ? একজন প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়েও চিকিৎসার পর রিকশো চালিয়ে যাচ্ছেন। রিকশো এখনও অন্তত ১০০ জনের সংসার চালায়। ফলে একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। রিকশো চালক বলছিলেন, এমন জায়গা আছে যেখানে টোটো যাবে না। সেখানে রিকশো চলে যাবে। তাই রিকশোওয়ালারা এখনও এই শহরের গল্প। ফুরিয়ে যায়নি। এখন তাঁদের অস্তিত্বের লড়াই। রিকশোওয়ালারা এই শহরের গল্প বলে। উল্লেখ্য, তথ্য অনুযায়ী ১৮৬০ সালে জাপানে রিকশোর উদ্ভব।










