বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ তিনি আসবেন। আসবেন তিনি আসবেন। পাঁচ বছর পর তিনি বহরমপুরে আসছেন। যত সময় গড়ালো ততই জমাট হল ভিড়। চুনাখলি নিমতলা থেকে দু-দিকে মানুষজন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। নব নির্মিত চুয়াপুর রেল সেতু এপারে ওপারে মানুষের সারি। আকাশ মেঘলা থাকায় একটু একটু করে জাঁকিয়ে বসছে অন্ধকার। রাহুল গান্ধীর গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে এক ছন্দে। রেলসেতু থেকে স্বর্ণময়ী পেরিয়ে ক্যাথলিক চার্চ।
উদ্দাম নৃত্য কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের। তখনও রাহুলের দেখা নেই। মাঝে মাঝেই ভিড়ে উঠছে ‘ওই এলো, ওই এলো’ ধ্বনি। কিন্তু কোথায় কী? আবার খানিকক্ষণ ঝিমিয়ে যাওয়া। আশে পাশের দোকানে ভিড় নেই। দোকানে নেই দোকানিও। তারাও মশগুল রাহুলকে একবার চাক্ষুশ করবার অপেক্ষায়। শুধু বিরাম নেই চায়ের দোকানের, চপ-সিঙাড়ার দোকানে্র কর্মী ও মালিকের। রাহুল তখনও কয়েক যোজন দূরে।
বছর পাঁচেক আগে দলের প্রচার করতে রাহুল শেষবার যখন এসেছিলেন বহরমপুর তখন মোহন মোড় বলে যে রাস্তার পরিচয় ছিল সেই রাস্তা এখন নতুন নাম মোহন মলের রাস্তা। ওই রাস্তার দুদিকে কাতারে কাতারে মানুষ। হাতে কংগ্রেসের পতাকা যত আছে তার চেয়ে বেশি রাহুল গান্ধীর প্রতিকৃতি আঁকা পতাকার সারি। মোহন মোড় থেকে কংগ্রেস কার্যালয় মেরেকেটে দু’শো মিটার পথ পেরোতে লাগল পাক্কা তিরিশ মিনিট। সেখানে মাইকে বাজছে রাহুলের জয়গান। মাইক্রোফোন হাতে কর্মী সমর্থকদের ধৈর্য্য ধরার পাশাপাশি শৃঙ্খলাভঙ্গ না করে সুশৃঙ্খলভাবে সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতাকে স্বাগত জানানোর আর্জি জানিয়ে চলেছেন জয়ন্ত দাস, শুভাঞ্জন সেনগুপ্তরা।
সেই ভিড় ঠেলে রাহুল গান্ধীর গাড়ি যত এগিয়ে আসছে কংগ্রেস কার্যালয়ের দিকে ততই একের পর এক ঝলসে উঠেছে মোবাইল ক্যামেরার ফ্ল্যশ। পাশে অধীর চৌধুরী। ভিড়ের চাপে প্রায় থমকে গিয়েছে রাহুলের গাড়ি। শুভাঞ্জন ঘোষণা করেছিলেন রাহুল জি প্রবেশ করলে মহিলারা শঙ্খধ্বনি দেবেন। রাহুল এলেন, কিন্তু শঙ্খ বাজলো না। মহিলাদের হাতেই ধরা থাকল শঙ্খ। তারাও হাত নাড়ালেন রাহুলের সঙ্গে। কার্যালয়ের ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসা হাতগুলো লক্ষ করে ফ্লাইং কিস ছুড়লেন রাহুল। পাশ থেকে এক প্রবীণ নাগরিক বিপুল তরফদার বলে উঠলেন, ‘এখানে বিজেপির কেউ নেই তো?”
রাহুল এগিয়ে গেলেন হাত নাড়াতে নাড়াতে। ফের একবার পুরনো কালেক্টরেট মোড়ে। ফুল ছুড়ে দিলেন সমর্থকরা। ভিড়ে মিশে থাকলেন মনোজ চক্রবর্তীরা। সিপিএমের লাল পতাকাও মিশল রাহুল গান্ধীর ন্যয় যাত্রায়। কংগ্রেসের বিশ্বাস লোকসভা ভোটের ফলাফল বদলে যাবে।