রেডিও মানেই হাজারো স্মৃতি! মহালয়ার ভোর অবধি টানা অপেক্ষা।

Published By: Madhyabanga News | Published On:

দেবনীল সরকার, বহরমপুরঃ রেডিওগুলোর সব হলো কী? কিছুই না। সযত্নে তোলা আছে তাকে। ধুলো ঝেড়ে টেবিলে নামবে আগামীকাল। শেষ মুহূর্তে দেখে নেওয়া হবে ব্যাটারি চেক করে। মহালয়ার কাক ভোরে সেই রেডিওতেই শোনা যাবে এক উদাত্ত কন্ঠ। বেতারের প্রাণপুরুষের কন্ঠে বাজবে চিরাচরিত ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। শুরু হবে পুজোর দিনগোনা। আর কিছু জানা থাক বা না থাক মহালয়ার সকালে মুর্শিদাবাদবাসীর রেডিও’র নবটা ঘুরে যাবে ১০২.২ এফ.এম-এর দিকে। রেডিওতে বেজে উঠবে, “আশ্বিণের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির/ ধরণীর বহিরাকাশে অন্তর্হিত মেঘমালা/ প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমনবার্তা/ আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি…”। এই না হলে মহালয়া। মহালয়ার ভোরে বাঙালির প্রাণনাথ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের এই শ্লোক পাঠ আজও বেজে ওঠে বাংলার ঘরে ঘরে।

কালের নিয়মে বদলেছে মাধ্যম। বদলায়নি ঐতিহ্য। তবে নস্টালজিয়া আঁকড়ে আজও রেডিওতে জমা ধুলো ঝাড়ে বাঙালি। যদিও মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ-ইউটিউবে বা অত্যাধুনিক সাউন্ডসিস্টেমে এখন সহজলভ্য এই ‘মহালয়ার ক্লিপিং’। তবে আমবাঙালির কাছে এতো শুধু ক্লিপিং নয় বরং ইমোশন, বাংলার সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মহালয়া, রেডিও এইসব নিয়ে অতীতের স্মৃতিচারণ করছিলেন আকাশবাণীর ঘোষক প্রভাত সাহা। বিগত ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৭ পর্যন্ত দীর্ঘ নয় বছর মুর্শিদাবাদের আকাশবানী সম্প্রচার কেন্দ্রে মহালয়ার দিনে এই বিশেষ অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সারা জেলার মানুষের ঘরে ঘরে যাতে ঠিক সময়ে পৌঁছে যায় বীরেনবাবুর কন্ঠ, তারই দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গুরুদায়িত্ব। ১৯৩২ সালের মহালয়ার ভোরে আকাশবানীতে প্রথমবারের জন্য সম্প্রচারিত হয়েছিল ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। তারপরে সেই প্রোডাকশন যে পরিমাণ সারা ফেলেছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সারা দেশ তথা বিশ্বে এরম জনপ্রিয় রেডিও প্রোডাকশন আর নেই বললেই চলে। আজও এই ডিজিটাল যুগে যেখানে হাতের মুঠোই পুরো দুনিয়া। সেখানে মহালয়ার ভোরে হঠাৎ একলাফে বেড়ে যায় রেডিও’র স্রোতার সংখ্যা। কারণ একটাই নস্টালজিয়া। প্রভাতবাবু আরও জানান, তৎকালীন রেডিও (চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে) জামানায় এমন কোনও সঙ্গীত শিল্পী বা যন্ত্রশিল্পী নেই যাঁরা নিজেদের এই প্রোডাকশনের সাথে জুড়ে নেননি। পরবর্তীতে মহানায়ক উত্তম কুমারও কন্ঠ দিয়েছেন এই প্রোডাকশনের। প্রথমে একটি সাধারণ রেডিও প্রোডাকশন হিসাবে চললেও, তা পরবর্তীতে যেভাবে উৎসবের অঙ্গ হয়ে যায়, পৃথিবীর কোনও প্রদেশে এই নজির নেই। অনেকগুলি ভার্সন আছে এই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র তবে মহালয়ার ভোরে বেজে ওঠে সেই এক কণ্ঠ।

বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকার এক অশীতিপর বৃদ্ধ আবু সৈয়দ জানান, মহালয়া মানে আজও সেই একই উত্তেজনা। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র গায়ে কাঁটা দেওয়া কন্ঠস্বর। সেই স্মৃতি আজও অমলিন। দীর্ঘ এক বছরের অপেক্ষা এই একটা ভোরের। একালে টিভিতেও সম্প্রচারিত হয় মহালয়া কিন্তু তা কখনই রেডিও-র বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পাঠের সাবস্টিটিউট নয়। হবেও না।

আগামীকাল মহালয়া। তার আগে আবারও নস্টালজিয়া চাগাড় দিয়ে উঠবে। মেরামত হয়ে ঘরে আসবে সেই রেডিও। মোবাইল, স্মার্ট গ্যাজেটের গ্ল্যামারে বর্তমানে চাপা পরেও মরেনি রেডিও’র সাবেকিয়ানা।