R G Kar Hospital Incident ঋত্বিক দেবনাথ, বহরমপুরঃ “যেনাহং নামৃতা স্যাম্ কিমহং তেন কুর্যাম্!” উপনিষদের স্বতন্ত্র এক স্ত্রী কণ্ঠ। সভ্যতার আদি যুগ থেকে আজ পর্যন্ত এত বড় প্রশ্ন কেউ করেনি। ‘যার দ্বারা আমি মৃত্যুকে জয় করতে পারব না, তা নিয়ে আমি কি করব?’ রবীন্দ্র রচনা বলির একটি ছোট্ট অংশ। যে প্রশ্ন সহস্র শতাব্দীর ওপার থেকে আজও ভেসে আসছে।
আর জি কর-এ দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তার পড়ুয়ারা নৃশংস খুনের ঘটনায় সারা রাজ্য তথা দেশ আজ স্তব্ধ। মেয়েরা কি রাতে বাইরে বেরোতে পারবে না ? আর জি কর কান্ডে হাসপাতাল (R G Kar Hospital Incident) কতৃপক্ষের বয়ান সামনে এনেছে সেই প্রশ্ন। আর জি কর কান্ডের বিচার চেয়ে সেই প্রশ্নের উত্তর দিল গোটা রাজ্য।
বারবার প্রশ্ন উঠছে নারী নিরাপত্তার। প্রশ্ন উঠছে নারীদের অস্তিত্ব নিয়ে। রবীন্দ্র রচনাবলীর সেই অংশে মৈত্রেয়ী মৃত্যুকে জয় করতে চেয়েছিলেন। তবে এই মৃত্যু সেই মৃত্যু নয়, এই মৃত্যু নিজের সত্তার মৃত্যু। মৈত্রেয়ী সেই মৃত্যুকে জয় করে নিজের সত্তাকে বিকশিত করতে চেয়েছিলেন।
লাখ লাখ মৈত্রেয়ীরাও ১৪ই আগস্ট রাতের শহর দখল করতে নেমেছিলেন। ভয় নামক মৃত্যুকে জয় করতে। অন্ধকারকে চিরে মশাল জ্বালিয়ে নতুন আলোর পথ দেখাতে চাইছেন এই মৈত্রেয়ীরা। কখনও গান। কখনও স্লোগান। সকলের মুখে একটাই স্লোগান ‘We Want Justice’। এই ‘Justice’ একদিনের নয় বহু বছরের জমা ক্ষোভ। চাইলেন, নির্যাতনের অবস্থান। কেউ ফুঁসলেন রাগে। শহরের রাস্তা ভিজল কারও চোখের জলে ।
এদিন সমস্ত বহরমপুর স্কোয়ার ফিল্ডের অন্ধকার কেটে গিয়েছিল মোবাইল ফ্ল্যাশ-এর আলোতে। একই সঙ্গে সবাই গলা মিলিয়ে গাইলেন ‘হাম হঙ্গে কামিয়াব, হাম হঙ্গে কামিয়াব একদিন’। মহিলাদের রাত দখল অভিযান একটি জন্ম দিল নতুন এক সংকতের । গানে, স্লোগান দিয়ে, হাতে আঁকা ছবি দিয়ে চলল প্রটেস্ট। অন্ধকার দিন কাটিয়ে ফুটবে আলোর সকাল। জানান দিল বহরমপুরের মহাবিদ্রোহের মাঠ।
শরৎ আসছে। নজরুলের ‘আনন্দময়ীর আগমনে’র সুর শোনা যাচ্ছে সর্বত্র- ‘আর কতকাল থাকবি বেটি মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল?/ স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।/ দেব-শিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবকদের দিচ্ছে ফাঁসি,/ ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী?’