Promothes Mukherjee তিনি ছিলেন আপাদমস্তক রাজনৈতিক কর্মী। বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের ঢেউ বেয়ে সেই যে রাজনীতিতে এসেছেন। বামপন্থী রাজনীতির কর্মী হিসেবেই ছিলেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। ছিলেন বহরমপুরের সাংসদ, ছিলেন আরএসপি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। সেই প্রমথেশ মুখার্জির স্মরণ সভায় মিলে গেল সব দল। রবিবার বহরমপুরের ঋত্বিক সদনে স্মরণসভায় আরএসপির সর্বভারতীয় সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য Manoj Bhattacharya , সিপিএমের বর্ষীয়াণ নেতা নৃপেন চৌধুরী, সিপিএম নেতা জামির মোল্লাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ, কংগ্রেস নেতা অধীর চোধুরী, বহরমপুরে বিজেপি বিধায়ক কাঞ্চন মৈত্ররাও।
সকলেই আলোচনাতেই উঠে এসেছে প্রমথেশ মুখার্জি রাজনীতি , ব্যক্তিগত জীবনের কথা। বহরমপুরের বিজেপি বিধায়ক কাঞ্চন মৈত্রের আলোচনায় উঠে এসেছে প্রমথেশ মুখার্জির জীবনের স্বচ্ছতার কথা। কাঞ্চন মৈত্রের দাবি, প্রমথেশ মুখার্জির জীবন ছিল এক উজ্জ্বল উদাহরণ। শিক্ষক হিসেবে তাঁর ভূমিকার কথাও স্মরণ করিয়েছেন তিনি।
Promothes Mukherjee একাধিক নির্বাচনে মুখোমুখি লড়াই করেছেন অধীর চৌধুরী Adhir Ranjan Chowdhury এবং প্রমথেশ মুখার্জি। প্রমথেশ স্মরণে অধীর চৌধুরীর স্মৃতি চারণায় উঠে এসেছে পুরানো দিনের কথা । অধীর চৌধুরী বলেছেন, “ কখনও আমি অরাজনৈতিক হিসেবে ( যখন রাজনীতি করতাম না) বহরমপুর শহরে কমরেড দেবু ব্যানার্জিকে জেতানোর জন্য সচেষ্ট হয়েছি। আবার এই অধীর চৌধুরী আরএসপি নেতা প্রমথেশ মুখার্জিকে হারানোর জন্য অবতীর্ণ হয়েছি। কিন্তু সবকিছু থাকা সত্ত্বেও কোথাও কারও সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় নি”। অধীর চৌধুরী বলেছেন, কোন দুর্নীতি, অন্যায় স্পর্শ করতে পারেনি প্রমথেশ মুখার্জিকে। আরএসপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, প্রমথেশ মুখার্জির গুণের কারণেই সকলে স্মরণ সভায় একত্রিত হয়েছেন।
Promothes Mukherjee ৭ জুলাই প্রয়াত হন প্রমথেশ মুখার্জি।
আক্ষরিক অর্থেই তিনি ছিলেন জায়েন্ট কিলার। হারিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকেও। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ অবধি তিনি ছিলেন বহরমপুরের সাংসদ। তবে সেজন্য তাঁকে লড়তে হয়েছিল তিন তিনটে নির্বাচন।
Promothes Mukherjee ছিলেন আরএসপি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। রবিবার বহরমপুরে ঋত্বিক সদনে প্রমথেশ মুখার্জির স্মরণ সভার আয়োজন করেছিল আরএসপি। প্রমথেশ মুখার্জির জীবন ছিল বর্ণময়। ১৯৯৩ সালে প্রয়াত হন বহরমপুরের তৎকালীন সাংসদ, স্বাধীনতা সংগ্রামী ননী ভট্টাচার্য। ১৯৯৪ সালের ১২ মার্চ বহরমপুর আসনে হয় উপনির্বাচন । ১৯৯৪ সালে উপনির্বাচনে বহরমপুর লোকসভা আসন আরএসপি দলের হয়ে থেকে ভোটে লড়েন প্রমথেশ মুখার্জি। ১৯৯৬ সালে সাধারণ নির্বাচনে জেতেন প্রমথেশ মুখার্জি । সেই বছর কংগ্রেসের প্রতীকে লড়েন সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় । প্রমথে মুখার্জি হারিয়ে দেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে । এরপর ১৯৯৮ সালে গুজরাল সরকারের পতন হলে ফের লোকসভা নির্বাচন হয়। জেতেন ১৯৯৮ সালের দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচনেও । যদিও ১৯৯৯ সালে অধীর চৌধুরীর কাছে হারেন প্রমথেশ মুখার্জি । ২০০৪ এবং ২০০৯ সালের নির্বাচনেও ভোটে লড়েন প্রমথেশ।
Promothes Mukherjee প্রমথেশ মুখার্জির জন্ম ১৭ জানুয়ারি ১৯৪৬, সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। বাবা সত্যব্রত মুখার্জী ছিলেন পাঁচথুপী টি. এন. ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক, মা ছিলেন গৃহিণী। কান্দি রাজ কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করে ১৯৬৮ সাল। সুন্দরপুর হাই স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। সেটা ১৯৬৮ সাল। ওই বছরে স্পেশাল বিএ। এবং পরের বছর বেলুড় কলেজ থেকে বি. এড. করেন। তারপরের বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম. এ. পাশ করেন। কলেজে আরএসপির ছাত্র সংগঠন পিএসইউ সংগঠনের নেতা ছিলেন। শিক্ষক আন্দোলনের পাশপাশি এলাকায় আরএসপির সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৭৯ সালে গ্রামের কর্মক্ষেত্র ছেড়ে বহরমপুর শহরে চলে আসেন এবং খাগড়া গুরুদাস তারাসুন্দরী ইনস্টিটিউশনে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করেন এবং অধ্যাপক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অধীনে গবেষণা শুরু করেন। বিষয় ছিলন Changing Pattern of Leadership in Rural India। নানা কারণে সে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আজীবন যুক্ত ছিলেন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে। স্মরণ সভায় সব রঙের নেতা, কর্মীদের শামিল হওয়ার ঘটনায় প্রমথেশ মুখার্জির কৃতিত্ব দেখছেন আরএসপি নেতারা।
Promothes Mukherjee যদিও উপস্থিত ছিলেন না রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের কোন প্রতিনিধি। আরএসপি জেলা সম্পাদক নওফেল মহম্মদ সফিউল্লার দাবি, সৌজনের সংস্কৃতির পক্ষেই আরএসপি। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তৃণমূলের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি। মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি আসতে পারেন নি। রাজনীতিতে যখন হারিয়ে যাচ্ছে সৌজন্য। তখন প্রাক্তন সাংসদের স্মরণ সভায় সব দলের নেতাদের উপস্থিতিকে উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল।