বিড়ি শ্রমিকদের বন্ধু কারা ? তৃণমূল কংগ্রেস না সিপিএম-কংগ্রেস ?

Published By: Madhyabanga News | Published On:

ইয়ান আলি, সামসেরগঞ্জ, ১১ নভেম্বরঃ দীর্ঘদিন মজুরি বাড়ে না তাঁদের । কিন্তু তাঁদের নিয়েই চলে রাজনৈতিক দড়িটানাটানি। তাঁরা জঙ্গিপুর মহকুমার নয় লক্ষ বিড়ি শ্রমিক। লোকসভা ভোটের প্রস্তুতিপর্বে ফের রাজনীতিতে ঘুরেফিরে আসছে বিড়ি শ্রমিকদের মজুরির প্রসঙ্গ। প্রায় দু’বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে চাল, ডাল, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম। কিন্তু এক টাকাও বাড়েনি বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি। সরকার ঘোষিত নূন্যতম মজুরির তালিকা অনুযায়ী হাজার বিড়ি পিছু শ্রমিকদের মজুরি হওয়ার কথা ২৬৭ টাকা ৪৪ পয়সা। তবে ২০১১ সালের পর থেকে শ্রমিক সংগঠন ও মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমেই ঠিক হয় মজুরি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হয়েছিল  শ্রমিক সংগঠন ও মালিক সংগঠনগুলির মধ্যে চুক্তি। ২৮ সেপ্টেম্বর দ্বিপাক্ষিক চুক্তি থেকে সিদ্ধান্ত হয়, হাজার বিড়ি পিছু ১৭৮ টাকা পাবেন বিড়ি শ্রমিকরা। নতুন করে চুক্তি না হওয়া অবধি কার্যকর থাকবে সেই মজুরি।  তবে সিটু ও কংগ্রেসের দাবি, সেই মজুরি পাচ্ছেন না সব শ্রমিক। শ্রমিকদের মজুরির দিকে নজর নেই সরকারেরও।   মজুরি বৃদ্ধির দাবিকে ইস্যু বুধবার  একসাথে ময়দানে নামল  কংগ্রেস ও সিপিআই(এম)। সাথে রয়েছে এসইউসিআই, সিপিআই, আরএসপির মতো দলগুলির শ্রমিক সংগঠনের পাশাপাশি ওয়েলফেয়ার পার্টু অফ ইন্ডিয়ার শ্রমিক সংগঠনও। তবে আন্দোলনের রাশ মূলত কংগ্রেস ও সিপিএমের হাতেই। বুধবার ধূলিয়ানে পুরোনো ডাকবাংলো মোড়ে কনভেনশন হয় বিড়ি শিল্পে যুক্ত সংগ্রাম কমিটির ডাকে। এদিনের কনভেনশন থেকে তৃণমূলকে নিশানা করেছেন নেতারা।

জঙ্গিপুর ও দক্ষিণ মালদা এই দুই আসনে বিড়ি শ্রমিকদের ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমায় বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৯ লক্ষ। বিড়ি শিল্পের উপর নির্ভরশীল জঙ্গিপুরের প্রায় ৩৬ লক্ষ মানুষ। লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ভোটকে হেলাফেলা করতে নারাজ বাম, কংগ্রেস। তাই জোট বেঁধেই ময়দানে নেমেছে দুই দল। সাগরদিঘিতে ভোট প্রচারে এসে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাড়বে বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি। মজুরি বেড়ে হাজার বিড়ি পিছু ২৪০ টাকা হবে বলে ভরসা দিয়েছিলেন তিনি। বুধবার ধূলিয়ানে বাম কংগ্রেস নেতাদের ভাষণে বারবার ঘুরেফিরে এসেছে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের ভাষণের প্রসঙ্গ।
এদিন কনভেনশনে  সিআইটিইউ’এর বিড়ি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস রায় থেকে আইএনটিইউসির মৃণাল দাস, ইউটিইউসির নিজামউদ্দিন আহমেদ সকলেই নিশানা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসকে। বাম কংগ্রেস নেতাদের সাফ দাবি, জঙ্গিপুর মহকুমার অধিকাংশ বিধায়কই বিড়ি শিল্পের মালিক। তাই নাকি বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে চাইছে না সরকারও।

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমায় বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৯ লক্ষ।

বিড়ি মজদুর অ্যান্ড প্যাকার্স ইউনিয়নের মুর্শিদাবাদ জেলার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন জ্যোতিরূপ ব্যানার্জি এদিন বলেন, “ মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে কোন ভূমিকা নেই তৃণমূলের। শ্রমিকদের সংগঠনগুলি রাস্তায় থেকে তৃণমূল ও সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেই মজুরি বাড়াবে”। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ৩ নভেম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তবে এদিনই এই দাবিকে অস্বীকার করেছে তৃণমূল। বুধবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র জেলা সভাপতি সামসেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলেছেন, “ সিপিএমের আমলে বিড়ির মজুরি ছিল ৫২ টাকা। এখন মজুরি ১৭৮ টাকা। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরই বিড়ির মজুরি বেড়েছে। সিপিএম বিড়ির মজুরি একশো টাকায় নিয়ে গেলে আজ সরকারি নূন্যতম মজুরি রেটে মজুরি দেওয়া যেত। শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করছে সিপিএম, কংগ্রেস”।
তবে দুই পক্ষের ভাষণবাজি চললেও শ্রমিকরা এখনও সেই তিমিরেই। এদিন সমাবেশে এসেছিলেন কাকুড়িয়ার বাসিন্দা, বিড়ি শ্রমিক শেফালী বিবি। তিনি বলেন , “ এতো কম মজুরিতে তো সংসার চলে না। করোনার পরে বাড়ির পুরুষদের রোজগার কমে গিয়েছে। কোন দল কী বলছে, আমাদের দেখার সময় কোথায় ! আমরা শুধু বাঁচার উপায় খুঁজছি” ।