ঋত্বিক দেবনাথ, বহরমপুর, ৯ নভেম্বরঃ শীতকালে যেমন ডালশস্য থেকে সর্ষের চাষ লাভ জনক ফসল হিসেবে বহুল পরিমাণে চাষ হয়। তেমনই গ্রীষ্মকালে এবং বর্ষাকালেও কিছু চেনা ফসল সচারচর চোখে পরে বাজারে। কিন্তু যত সময় যাচ্ছে, ততই কিন্তু মাঠের বৈচিত্র্যও পাল্টেছে। এবং পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে অন্যান্য ফসলের চাহিদাও ধীরে ধীরে বাড়ছে।
বর্তমানে গ্লোবাল গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কারণে কিন্তু আবহাওয়ার বেশ বৈচিত্র্য করন ঘটেছে বেশ অনেকখানি। ফলে গ্রীষ্মকালে খরার মতন সমস্যা থেকে শুরু করে, বর্ষাকালে জেলায় বর্ষার ঘাটতি বা সময়ের আগে হয়ে যাওয়ার কারণেও কিন্তু মাঠে মারা পড়ছেন চাষিরা। যেমনটা এইবছর পাট চাষিদের মার খেতে হয় বর্ষার ঘাটতি থাকার কারণে। এইমত অবস্থায় বেবি কর্ণ, সবুজ মটরশুঁটি এবং মিলেট চাষ বিকল্প ভাবনা হতে পারে চাষিদের, জানালেন মুর্শিদাবাদ কৃষি দপ্তরের আধিকারিক। এই বছর যেহেতু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ আন্তর্জাতিক মিলেট দিবস ঘোষণা করেছেন তার ফল স্বরূপ রাজ্য তথা জেলাতেও চেষ্টা করা হচ্ছে মিলেট চাষের বৃদ্ধি করার।
মুর্শিদাবাদ কৃষি দপ্তর এবং মুর্শিদাবাদ উদ্দ্যানপালন দপ্তরের পক্ষ থেকে বারবার জোড় দেওয়া হচ্ছে জৈব সারে ব্যবহারের ওপর। রাসায়নিক সারের ফলে ফলনের মান কমেছে। হয়ত কম সময়ে ফসল ফলে যাচ্ছে, কিন্তু ক্ষতিও হচ্ছে অনেকটা। তাই ফসলের মান বাড়ানোর জন্যে জৈব সার হোক বিক্লপ পথ বলছে মুর্শিদাবাদ কৃষি এবং উদ্দ্যানপালন দপ্তর। এছাড়াও মুর্শিদাবাদ উদ্দ্যানপালন দপ্তরের থেকে মোট ১২ রকমের ফলের চারা কৃষিদের বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ড্রাগান ফল। এই ফল মূলত পাওয়া যেত দক্ষিণ মেক্সিকো ও আমেরিকাতে। প্রযুক্তি উন্নয়নের সাথে সাথে আমাদের দেশে তথা জেলাতেও ড্রাগান ফলের চাষ বেড়েছে। উদেশ্য স্থানীয় চষিদের সাহায্যে বাজারে এই সমস্ত ফলের আমদানি বাড়ানো।
এই জেলার যে সমস্ত ফসলের চাষ হয় তার বাজারে দাম না পাওয়ার কারণ প্রধানত দুটি বলে মনে করছেন মুর্শিদাবাদ উদ্দ্যানপালন দপ্তর। মূল কারণ হিসেবে মনে করছেন এক নিম্নমানের বীজ ব্যবহার এবং দ্বিতীয়ত রোগ পোকার উপদ্রব। জেলার ২৬টি ব্লকে প্রায় ২০০ হেক্টর বীজ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে মুর্শিদাবাদ উদ্দ্যানপালন দপ্তরের। মূলত গরম পরলে এই সমস্ত বীজ দেওয়া শুরু হবে।
এছাড়াও উদ্দ্যানযাত ফসলের ফলন এবং গুনগত মান বাড়ানোর জন্যে দুই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। এক হচ্ছে ‘প্লাস্টিক মালচিং’ বা প্লাস্টিকের আচ্ছাদন। গাছের গোঁড়া যদি পলিথিন দিয়ে ঢাকা যায় তাহলে তার ফলন আরও ভালো হবে। মূলত দীর্ঘজীবী ফসলের ক্ষেত্রে যদি এই উপায় ব্যবহার করা হয় সেই ক্ষেত্রে খুব উপযোগী হবে চাষিদের।
দ্বিতীয় হচ্ছে কেঁচো সারের ব্যবহার। এটি একটি অন্যতম জৈব সার যার ব্যবহারে ফসলের গুনগত মান বাড়ে। কিন্তু চাষিদের মধ্যে এই সার ব্যবহারের প্রবণতা কম বলে জানাচ্ছেন উদ্দ্যানফলন দপ্তর। এই সারের ব্যবহার বাড়ানোর জন্যে উদ্দ্যানফলন দপ্তরের তরফ থেকে নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ। এইচডিপিই ভার্মি বেড এটি যেখানে খুশি কৃষকেরা বানাতে পারবেন। রাসায়নিক সারের সাথে সাথে জৈব সার ব্যবহার বাড়ানোর জন্যে চাষিদের বিনামূল্যে এই বেড প্রদান করা হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে উদ্দ্যানপালন দপ্তরের তরফ থেকে।
বেশকিছু বছর ধরে বিকল্প চাষের পদ্ধতির ক্ষেত্রে রাজ্য তথা জেলাতে দুটি বিশেষ পদ্ধতির ওপর জোড় দেওয়া হচ্ছে। গ্রিন হাউস এবং সেড নেট হাউস। অসময়ে ফুল-ফল চাষের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ উপায় বলে দাবী করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরাও। সেখানেও সরকারি অনুদান রয়েছে বলে জানাচ্ছে মুর্শিদাবাদ উদ্দ্যানপালন দপ্তর।
ভেষজ প্রোটিনের অন্যতম উৎস মাশরুম। এটিও আগে মুর্শিদাবাদে চাষ হতনা। কিন্তু বেশকিছু সময় থেকে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে মুর্শিদাবাদে চলছে মাশরুমের চাষ। ডোমকলে এই চাষের পরিমাণ বেশি। এই সমস্ত দিক বুঝতে হলে দরকার বিশেষ প্রশিক্ষনের। পাশাপাশি দরকার কিছু সংখ্যক মূল্যেরো। মুর্শিদাবাদ জেলার সিংহভাগ মানুষই জড়িয়ে কৃষিকাজের সাথে। ফলে এই কৃষিকাজকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সেই উদেশ্যে কাজ করে চলেছেন সবাই।