কাদাই চত্বরে পুজোর বাজারের ভিড়ের মধ্যেই উঁকি দিচ্ছে ওল্ড স্কুল নীল সাদা সাইনবোর্ড। নীচে ঠিকানা লেখাঃ ৪৮ নং ডাঃ এসএন ভট্টাচার্য রোড , কাদাই, বহরমপুর। ঠিক চিনেছেন তাহলে। এটাই ‘নির্মল রেস্টুরেন্ট’ । শহর বহরমপুরের মানুষের চিরচেনা। যেমন স্বাদে, তেমই গল্পে।
কী সেই গল্প ? ১৯৭৮ সালে তরুণ যুবক ভোলানাথ দেব ত্রিপুরা থেকে আত্মীয়ের বাড়ি ঘুরতে আসেন শহর বহরমপুরে | তারপরেই প্রেম। বহরমপুর শহরকে ভালোবেসে থেকে যাওয়া | তখন বহরমপুরে ছিলনা রেস্টুরেন্ট। ঠিক করেন বহরমপুরকে নতুন কিছু উপহার দেবেন | পথ চলা শুরু নির্মল রেস্টুরেন্টের। কারিগর নিয়ে আসেন আগরতলা থেকে। ১৯৭৮ সালের দুর্গা পুজোর সপ্তমীর দিন নির্মল বাবু শুরু করেন ‘নির্মল রেস্টুরেন্ট’ | বাজিমাৎ দেন মোগলাইয়ে। নির্মলের মোগলাই আক্ষরিক অর্থেই হয়ে ওঠে ব্র্যান্ড।
তবে একটা সময় ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয় | তবে, পিছু হঠেননি। ভোলানাথ দেব নিজেই জানান, “যখন ব্যবসা খারাপ যাচ্ছিলো, তখন শুধু ধৈর্য ধরে ছিলাম, কাজ কে ভালোবেসে, এই শহর কে ভালোবেসে আজও করে যাচ্ছি” |
কথা রেখেছে ভালোবাসা | শহরের অন্যতম পুরোনো রেস্তোরা নির্মল আজও স্বাদে অনবদ্য । এখানে খাবারের কোয়ালিটিই শেষ কথা | এখন শহর আরো আধুনিক। শহরে তৈরী হয়েছে বিলাস বহুল রেস্তোরা | সব কিছুর পরেও আজও বহরমপুরবাসীর মুখে লেগে রয়েছে নির্মল রেস্টুরেন্টের মোগলাই |
মাথার উপর ঘুরছে পুরোনো সিলিং ফ্যান। ছিমছাম কাঠের টেবিলে বসে নির্মলের স্মৃতিচারণায় মজছেন বছর ষাটের পার্বতী দাস। পুজোর বাজারে নিয়ে আসা নাতিনাতনিদের শোনাচ্ছেন, বিয়ের পর প্রথম বাইরে খেতে আসার গল্প। বলছেন, “ তখনও ঠিকানা ছিল নির্মল। এখনও এদিকে এলে একবার ঘুরে যেতেই হয়”।
“ আসল কথা হল কমিটমেন্ট বুঝলেন”, বলছেন সরকারি আমলা মিলন প্রামাণিক। মিলনবাবুর কাছে নির্মল মানে খাবারের প্রতি কমিটমেন্ট। কমিটমেন্ট আছে বলেই এখনও আসি, বছর কুড়ি আগে স্কুল পালিয়ে আসতাম ।
পুজোর আবহেও মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন নির্মলে। এবার পুজোয় স্পেশাল কী থাকছে নির্মলে ? “আমার এখানে সবই স্পেশাল, সবাই মোগলাই বেশি পছন্দ করে, তবে আমার এখানে পোলাও, বিরিয়ানি থেকে শুরু করে কাটলেট সবই পাওয়া যায়” জানাচ্ছেন নির্মল রেস্টুরেন্টের কর্ণধার ভোলানাথ দেব |
কীভাবে যাবেন নির্মল রেস্টুরেন্টঃ বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে টোটো ধরে কল্পনার মোড় যাওয়ার পথেই পুরোনো সুর্য সিনেমা হলের এর উল্টো দিকে নির্মলের রেস্টুরেন্ট | বহরমপুর কল্পনা মোড়, জলট্যাংক মোড়, গির্জার মোড় থেকে চলে আসতে পারেন পায়ে হেঁটেও।