টালির চাল , মাটির বাড়ি থেকে রাজ্যের মেধাতালিকায় ! রানিনগরের ছেলেটার ঘুম ছিল না চোখে

Published By: Madhyabanga News | Published On:

মামুন আব্দুল কায়েম, ডোমকলঃ দিনরাত শুধুই পড়াশোনা। ঘুম ছিল না চোখে। মাঝেমধ্যে করতে হতো বাড়ির কাজ। চাষের কাজে বাবাকে সাহায্য। টেস্টের পর সেসবও বন্ধ। শুধুই ঘন্টার পর ঘন্টা বইয়ের পাতায় খুঁজেছে ইতিহাস, বিজ্ঞান, ভূগোলের রহস্য। ইংরেজি গ্রামের খাতার পিছনের পাতাতেই কষেছে কঠিন অঙ্কের ছক। এসেছে সাফল্য। রানিনগরের টালির বাড়ির নাসিরুদ্দিন নিজের স্থান করে নিয়েছে হাই মাদ্রাসায় রাজ্যের মেধাতালিকায়।

হাই-মাদ্রাসায় রাজ্যে প্রথম হয়েছে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা ব্লকের ভাবতার বাসিন্দা আশিক ইকবাল দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুর্শিদাবাদের কোমনগর হাই মাদ্রাসার ছাত্র নাসিরুদ্দিন মোল্লা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭৫ । নাসিরুদ্দিনের বাড়ি রানীনগরের বেনিপুরে। বর্তমান ওই কৃতী বর্ধমানের একটি মিশনে লেখাপড়া করছে । ছেলের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার পরিবার। নাসিরুদ্দিনের সাফল্য কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে জীবন জীবীকার প্রতিদিন লড়াইয়ে। ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া রানিনগরের বেনিপুর গ্রামে নাসিরুদ্দিনের বাড়িতে এদিন ভিড় করেন গ্রামের মানুষ। মাটির উঠোন জুড়ে শুধুই ছিল নির্মল আনন্দ।

নাসিরুদ্দিনের দাদা একজন পরিযায়ী শ্রমিক। তিনিই পরিশ্রম করে, টাকা পয়সা রোজগার করে পড়াশোনা করাচ্ছেন ভাইকে। এখন বাড়িতে নেই দাদা। এখন ঠিকানা সুদূর কেরালা।
নাসিরুদ্দিনের বাবা রুস্তম মোল্লা নিজে ক্ষুদ্র কৃষক। কখনো নিজের জমিতে চাষ করেন, অন্যদের জমিতে চাষের কাজ করে, দিন মজুরের কাজ করে চালান সংসার। ছেলে ডাক্তার হবে, স্বপ্ন নাসিরুদ্দিনের বাবা। চাইছেন সরকারি সাহায্য। তবে ছেলের পরীক্ষা নিয়ে স্বপ্ন ছিল নাসিরুদ্দিনের মা ফিরোজা বিবির। সারাদিনই লেখা পড়া করে ছেলেটা। তাই এতো ভালো ফল করেছেন, বলছেন ফিরোজা।
যদিও নিজের সাফল্যের কৃতিত্ব বাবা, মা, দাদার পাশাপাশি শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথেও ভাগ করে নিতে চাইছে নাসিরুদ্দিন। নাসিরুদ্দিনের কথায়, ” অনেক শিক্ষক শিক্ষিকা কোন টাকা না নিয়েও প্রাইভেট টিউশন পড়িয়েছেন। তাঁদের কথাই খুব মনে পড়ছে”। নাসিরুদ্দিনের স্বপ্ন আরও পড়শোনা করার। সেই স্বপ্নে যেন কোন কাঁটাতার না আসে। চাইছে সীমান্ত লাগোয়া বেনীপুর।