বেদান্ত চট্টোপাধ্যায়ঃ লালগোলা কলকাতা হাজার দুয়ারী এক্সপ্রেস Lalgola Kolkata Hazarduari Express ‘কে কেন্দ্র করে প্রচুর মানুষের রুটি -রুজি নির্ভর করে। সংরক্ষিত কামরা থেকে অসংরক্ষিত কামরা পুরো রাস্তাজুড়ে এই ট্রেনের সর্বত্রই রেল হকারদের যাতায়াত অবাধ । মুর্শিদাবাদের বহু মানুষের বহরমপুর থেকে কৃষ্ণনগরের যাত্রা পথে(হকার্স ইউনিয়নের নির্ধারিত রুট অনুযায়ী ) বিভিন্ন রকমের জিনিস বিক্রি করেন। পাওয়া যায় গরম চা থেকে শুরু করে সিঙ্গারা- মুড়ি, শান্তিনিকেতনের গামছা, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস, আবার মিষ্টিও । সাথে যে জিনিসটা সকল কে ভীষণ আকর্ষণ করে সেটা হল, চিপস ; আলুর চিপস, সয়াবিন চিপস, কচুর চিপস। কিন্তু এই ট্রেনেই পাওয়া যায় “কাঁচা কলার চিপস” !খেয়েছেন ? নিত্য যাত্রীরা জানাচ্ছেন অন্যান্য চিপসের থেকে এই কলার চিপস ভিন্ন, খেতেও অন্য রকম। তবে কলকাতা হাজার দুয়ারী এক্সপ্রেসে যাত্রা পথে মাত্র একজনই এই কলার চিপস বিক্রি করেন!
বছর পঁয়ত্রিশের সঞ্জীব বিশ্বাস, বেলডাঙা থেকে কৃষ্ণনগরের যাত্রা পথে কলার চিপসের একমাত্র বিক্রেতা। সঞ্জীবের বাড়ি বেলডাঙা Beldanga , বাড়িতে পাঁচজন সদস্য নিয়ে ছোট্ট সংসার। সকাল থেকে বেলা গড়িয়ে দুপুর পর্যন্ত সঞ্জীব বিভিন্ন লোকের বাড়ি বাড়ি পরিশোধিত জল পৌঁছে দেন । তারপর দুপুর বেলা একটু জিড়িয়ে নিয়েই বেরিয়ে পড়েন এই চিপস বিক্রি করতে । হাজার দুয়ারী এক্সপ্রেসে বেলডাঙা Beldanga থেকে কৃষ্ণনগর Krishnagar , তারপর আবার ফিরতি পথে রাতের ভাগীরথী এক্সপ্রেসে Bhagirathi Express বাড়ি ফেরা ।
এই কলার চিপস সঞ্জীব নিজেই বাড়িতে তৈরী করেন । সঞ্জীব জানিয়েছেন, এই চিপস তৈরী তে তাঁকে সাহায্য করেন মা ও স্ত্রী। সময় পেলে নিজেও কাজে হাত লাগান সঞ্জীব । উদ্দেশ্য একটাই, চিপস বিক্রি করে, জলের ব্যবসা করে ছেলেমেয়েকে মানুষ করা। সঞ্জীব আরও জানান “সারাদিন অনেক কষ্ট হয় এটা সত্যি!কিন্তু ছেলে মেয়ের মুখের হাসি আর ট্রেনের দাদা দিদিদের কলার চিপসের প্রতি ভালোলাগা আমাকে কাজ করতে আরও উৎসাহ যোগায়!”
বেলডাঙার এই মধ্যবয়সী যুবকের তৈরী কলার চিপসের ফ্যান অনেকেই। নিত্য যাত্রী মিঠুন দাস জানাচ্ছেন, “প্রত্যেকদিন কাজ করে ফেরার পথে ট্রেনের আড্ডায় সঞ্জীবের এই কলাভাজা ছাড়া আমাদের চলে না ”, পাশ থেকেই আরও কয়েকজন বলেন,“সঞ্জীব যদি ট্রেনে না ওঠে আমাদেরও কেমন খালি খালি লাগে। ”
লকডাউন, অতিমারীতে অনেকটাই ব্যবসার ক্ষতি হয়ে গেছিলো, আস্তে আস্তে ব্যবসার হাল কিছুটা হলেও ফিরছে, বলছেন চিপস বিক্রেতা সঞ্জীব। সঞ্জীবের কাছে শুধু মাত্র ঘরে তৈরী কলা ভাজাই না, পাওয়া যায় হাতে তৈরী ঝুড়ি ভাজা ও আলুর চিপসও।