Murshidabad Zila Parishad: ঘরে বাইরে প্রশ্নের মুখে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ !

Published By: Madhyabanga News | Published On:

জেলা পরিষদের বোর্ড গঠনের ৬ মাসের মধ্যেই মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে ( Murshidabad Zila Parishad)  গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে । মঙ্গলবার জেলা পরিষদের সাধারণ সভায় তৃণমূলের  একাধিক জেলা পরিষদের সদস্য জেলা পরিষদের কার্যকলাপ নিয়ে প্রকাশ্যেই সোচ্চার হলেন । খোদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি  (Sabhadhipati)   ও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের দিকে দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগের  আঙুল তুললেন জেলা শাসকের উপস্থিতিতে।  এমনকি কর্মাধ্যক্ষরা প্রশ্ন তুললেন, তাঁদের গুরুত্ব নিয়েও।  তাঁদের কার্যত গুরুত্বহীন করে রাখা হয়েছে বলে দাবি কর্মাধ্যক্ষদের একাংশের  । প্রাপ্য মর্যাদাটুকুও তারা পাচ্ছেন না প্রশাসনের কাছ থেকে। খোদ শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের ( TMC)  বিধায়ক থেকে সাংসদ জেলা পরিষদের কর্মসূচী রূপায়ণ নিয়ে তাঁদের অসন্তোষ চেপে রাখতে পারলেন না। বিরোধীরা তোপ দাগছেন, শুরু হয়ে গেল মুষল পর্ব।

এদিন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সাধারণ সভায় নবগ্রামে বিধায়ক কানাই চন্দ্র মন্ডল প্রশ্ন তুলেছেন কলকাতার নিউটাউনে  জেলা পরিষদের   মুর্শিদাবাদ ভবন  নিয়ে। প্রায়   সাত আট বছর আগে নিউটাউনে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের মুর্শিদাবাদ ভবন তৈরির কাজ  শুরু হয়েছে। কেন এখনও চালু হল না ওই ভবন  ? প্রশ্ন তুলেছেন কানাই মণ্ডল (Kanai Mondal) । অভিযোগ তুলেছেন, ব্যর্থতারও।

আরও পড়ুনঃ মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের নতুন সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা । সহকারী সভাধিপতি আতিবুর রহমান

তবে এদিন সাধারণ সভায় কার্যত বোমা ফাটিয়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ শাহনাওয়াজ বেগম (Sahnawaj Begam) । শাহনাওয়াজ এদিন প্রশ্ন তুলেছেন সভাধিপতির গাড়ির তেলের খরচ নিয়েও। নিজের বক্তব্যের সময় শাহনাওয়াজ বলেছেন, “  আমি জানতে চাই, জেলা পরিষদের সভাধিপতির গাড়ির জন্য এত তেল কেন বরাদ্দ হয় ? কেনই বা বিপুল অঙ্কের জেলা পরিষদের  টাকা দিয়ে  বিল মেটানো হবে সভাধিপতির হোটেলে থাকার ?”। জেলা পরিষদের সদস্যদের ঠিকাদারি করা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন মহিলা নেত্রী।  এদিনের সাধারণ সভায় জেলা শাসকের উপস্থিতিতে শাহনাওয়াজ দাবি জানান, নিয়ম  করা হোক যাতে  জেলা পরিষদের সদস্যরা নিজের এলাকায় ঠিকাদারি না করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ তৃণমূলের দখলেই মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ

 

মঙ্গলবার জেলা পরিষদের সভাকক্ষেই হয় ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের খসড়া বাজেট (Budget)   অনুমোদনের সাধারণ সভা।সভাতে  মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সফিউজ্জামানের দাবি, গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না জেলা পরিষদের সদস্য, কর্মাধ্যক্ষদের । নিয়ম মেনে সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রনও জানানো হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন সফিউজ্জামান।

তাঁর দায়িত্বপ্রাপ্ত  দপ্তরের কাজে  কর্মাধ্যক্ষদের কোন ভূমিকা আদৌ আছে ? এদিন প্রশ্ন তুলেছেন   জেলা পরিষদের কৃষি, সেচ ও সমবায় কর্মাধ্যক্ষ ওজিফা বিবি । তিনি সরাসরি জেলা শাসককে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমাদের কাজ করার কোন জায়গা নেই”। যথেষ্ট অস্বস্তিতে জেলা শাসক ডঃ রাজর্ষি মিত্র ড্যামেজ কন্ট্রোল করার জন্য কর্মাধ্যক্ষকে পরামর্শ দিলেন, কাজের এলাকা নির্ধারণের জন্য  অর্থ মিটিং’এ সিদ্ধান্ত নিন। প্রয়োজনে চিঠি দিয়ে জানান।

পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সামসুজ্জোহা বিশ্বাস সাধারণ সভায় সদস্যদের পরামর্শ দেন সচেতন হওয়ার যদিও। পথশ্রী সহ একাধিক প্রকল্প নিয়ে জেলা পরিষদের সদস্যদের তোলে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তিনি রা কাড়েন নি। তবে এদিন সাধারণ সভায় জেলা পরিষদের আধিকারিকরা জানান, জল ও লাইট নিয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। সমস্তটা তদন্ত হচ্ছে।

খোদ সভাধিপতির বিরুদ্ধেই বারবার জেলা পরিষদ সদস্যের অভিযোগের আবহে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সভাকক্ষও । এক সময় কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পার্থ প্রতিম সরকারকে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শোনা যায়, আজকের সভার এজেন্ডার বাইরে আলোচনা চলবে না। শুরু হয় বাদানুবাদ।

জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা যদিও সাধারণ সভায় দলের সদস্যদের অভিযোগকে গুরুত্বই দিতে চান নি। অভিযোগ কতোটা যুক্তি সঙ্গত সেই প্রশ্নই তুলেছেন রুবিয়া।

জেলা পরিষদের সাধারণ সভায় খোদ সভাধিপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরাও।যদিও তৃণমূলের বহরমপুর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকারের (Apurba Sarkar)  দাবি, এরকম কোন আলোচনা হয়েছে বলে জানেন না তিনি। কারও নামে নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে খোঁজ নিয়ে বলতে পারবেন বলে জানান অপূর্ব । বহরমপুরে প্রাক্তন বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী (Manoj Chakraborty)  কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলকে। মনোজ বলেন, “ তৃণমূল কংগ্রেস মানেই লুট, অনিয়ম, বেনিয়ম। এখন সেই দলের লোকরাই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। এটা সবে শুরু”।

সুযোগ বুঝে আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপিও (BJP) । বিজেপি বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শাখারভ সরকার বলেছেন, সভাধিপতির তেলের খরচা এতো কেন ? হোটেল খরচা এতো কেন ? এই প্রশ্ন আগেই বিজেপি তুলেছিল। তৃণমূলের সদস্যরা প্রমাণ দিয়েছে, এই প্রশ্ন যথার্থ। সভাধিপতির বিরুদ্ধেই প্রশ্ন ওঠাকে গোষ্ঠী কোন্দল হিসেবেই দেখতে চাইছেন বিজেপি । তবে লোকসভা নির্বাচনের  আগে ভরা বাজারে খোদ সভাধিপতিকে  তৃণমূলের সদস্যের প্রশ্নের মুখে পরতে হবে এমনটা ভাবেন নি তৃণমূল নেতারাও। দলে শুরু সমাধান সূত্রের খোঁজও।