Murshidabad University Programme আইনস্টাইন বলেছিলেন আনন্দ ছাড়া শিক্ষা হল বোঝা, আনন্দের সঙ্গে তা শক্তি। কৌতূহলী হতে বলেছিলেন। এপিজে আব্দুল কালাম প্রথম প্রশ্নই করতেন তুমি কি স্বপ্ন দেখো? বুধবার রবীন্দ্রসদনে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় (Murshidabad University) জন্ম শতবর্ষে ঋত্বিক ঘটককে (Ritwik Ghatak) স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করল। আনন্দমুখর ওই মঞ্চ থেকে কৃতী ছাত্র ছাত্রীদের উৎসাহ প্রদানে সংবর্ধনা দেওয়া হল। সেখানে উপাচার্য জানে আলম তাঁর বক্তব্যে ওই উদ্ধৃতি তুলে ধরে ছাত্র ছাত্রীদের আনন্দদায়ক শিক্ষার উপর জোর দিলেন। ছাত্র ছাত্রীদের স্বপ্ন দেখার কথা বললেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা তুলে ধরে বললেন, একটি মোমবাতি যদি জ্বলতে থাকে তবে সে অন্য মোম বাতিকে জ্বালাতে পারে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাহিত্যিক আবুল বাশার বললেন, মুর্শিদাবাদ সাহিত্য, সংস্কৃতিতে এগিয়ে।
কৃষ্ণনাথ কলেজের প্রাক্তনী ঋত্বিক ঘটক
Murshidabad University Programme কৃষ্ণনাথ কলেজে ইংরেজি সাহিত্যের কৃতী ছাত্র ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। এদিন ঋত্বিক ঘটকের তৈরি সিনেমার বিভিন্ন ক্লিপিংস দেখানো হয় অনুষ্ঠানে। মঞ্চের পিছনে স্ক্রিনে কখনও ফুটে ওঠে নারীর সংগ্রাম, কখনও দেশভাগের যন্ত্রণার উপর তৈরি সিনেমার টুকরো মুহূর্ত। আবেগের সেই সব দৃশ্যে থমকে যাচ্ছিল প্রেক্ষাগৃহ। তাঁর সঙ্গে মঞ্চে গানের কোলাজে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধাপক-অধ্যাপিকারা। সমগ্র অনুষ্ঠান দেখে মনে হচ্ছেল যেন ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে যেন একটি তথ্যচিত্র হল এদিন।

আরও পড়ুনঃ Murshidabad College মুর্শিদাবাদে কলেজে মাত্র ৩০ % ভর্তি ! জানেই না TMCP, বাকির কী বলছে
Murshidabad University Programme ঘোষক শুরু করেছিলেন ঢাকা শহরে ১৯২৫ সালে ঋত্বিক ঘটকের জন্ম মাইক্রোফোনে ঘোষণা করে। তারপর ঋত্বিকের একের পর এক সিনেমার কালজয়ী দৃশ্য। মধ্যবিত্ত উদবাস্তু পরিবারের লড়াই, নারীর আত্মত্যাগ, পুরুষের স্বপ্ন বিসর্জন—। তাঁর তৈরি সমগ্র সিনেমায় সংগ্রামের আবহ। তাঁর সুবর্ণরেখা রেখা, বাড়ি থেকে পালিয়ে সিনেমার স্তব্ধ করে দেওয়া দৃশ্য দেখানো হচ্ছিল। মোবাইল কামেরায় সেগুলি বন্দী করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা।
Murshidabad University Programme মুর্শিদাবাদ জেলার ভূমিপুত্র আবুল বাশার এদিন অনুষ্ঠানে তাঁর ছাত্র জীবনের কথা তুলে ধরছিলেন। বলছিলেন, বাংলা ভালোবাসলেও বাণিজ্য নিয়ে পড়তে হয়েছে। বহরমপুরে রাতের কলেজে পড়তেন। এমনও হয়েছে ২০-২৫ কিমি পথ হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। জেলখানার ভিতর দিয়ে গিয়ে কীভাবে রাত ৯ টা ১৫-র বাস ধরতেন তিনি সেকথা এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে ভাগ করে নেন তিনি। জানান, এই নিয়ে বই লিখতে চলেছেন। অনুষ্ঠানে তিনি ভাষাতত্ত্ব, ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি সেক্ষেত্রে যুক্তিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজি নজ্রুল ইসলামের ‘সুন্দর পথের’ কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে পিছিয়ে থাকলেও সংস্কৃতি, শিক্ষার ক্ষেত্রে এই জেলা অনেকটা এগিয়ে। প্রদীপ প্রজ্বলনের পর ”আজি শুভ দিনে অমৃত সদনে চলো যায়” গানের মাধ্যমে এদিন অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ক্লাসে ছাত্র আসে না। এটা গভীরভাবে ভাবতে হবে। একইসঙ্গে ইন্টারনেট যুগ নিয়ে জানান, তারা ইন্টারনেটে ভিডিও দেখে নিতে পারে। বুঝে এগোতে হবে। ক্লাসে আলাপচারিতার কথা বলেন। পড়ুয়ারা কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে দেখতে হবে। তাদেরকে বোঝার উপরে জোর দেন।
Murshidabad University Programme ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১ সাল থেকে পঠন পাঠন শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক রাজীব মুখার্জী বলেন, ১৬ একর জমি রয়েছে গোপজানে। সেখানে কৃষি বা অন্য কোনও কিছু করবার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে। এছাড়া তিনি জানান বিশ্ববিদ্যালয় অনেকগুলি বিষয়ে ছাড়পত্র পেয়েছে। বর্তমান উপাচার্য যোগ দেওয়ার পর যা অর্জন হয়েছে তার একটি তালিকা তুলে ধরেন তিনি। জানান, আরও সিসিটিভি বসানো হবে। পরীক্ষা নিয়ামন বিপ্লব ব্যানার্জী বলেন, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ছাত্র ছাত্রীদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ নিয়ে আবুল বাশার
Murshidabad University Programme পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবুল বাশার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেখানকার আদালতের ফাঁসির রায় নিয়ে বলেন, বাংলাদেশকে নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে। বাঙালি ছাড়বে না। ভাষার জন্যে লক্ষ লক্ষ বাঙালি প্রাণ দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে ছিলেন কেএন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষা সুজাতা বানার্জি, গবেষক শক্তিনাথ ঝাঁ সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্টরা। এদিন রবীন্দ্রসদন চত্বর হয়ে উঠেছিল ঋত্বিকময়।

”দাদা আমি কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলাম।”
Murshidabad University Programme কয়েকজন ছাত্র ছাত্রী মেঘে ঢাকা তারা সিনেমার নীতার ওই বাঁচার আর্তির দৃশ্যটা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। সংসারের জন্যে আত্মত্যাগ করে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া বোন নীতাকে যখন তাঁর দাদা বলছেন, ”জানিস আমাদের বাড়িটায় দোতলা উঠে গিয়েছে।” পালটা নীতা জানায়, ”দাদা আমি কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলাম। সত্যি বাঁচতে চেয়েছিলাম।” তাঁরা নিজেরাই বলছিলেন, এই একটি দৃশ্যের জন্যেই অমর হয়ে থাকতে পারেন ঋত্বিক ঘটক। যতবার দেখি চোখে জল এসে যায়। এই দৃশ্য নারীর চিরন্তন সত্যের।














