বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে আইএসএফ। রবিবার জেলা পরিষদের হিজল সভাগৃহে ছিল জেলা কমিটির বৈঠক। সেই বৈঠকের মূল সুর ছিল ২৪এর লোকসভা নির্বাচন। বিজেপি-মুর্শিদাবাদ জেলায় লোকসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারবে না বলেই ওই বৈঠকে নেতারা দাবি করেন। তবে তাঁদের মাথাব্যাথার কারণ যে আইএসএফ তা জেলা নেতৃত্বকে কেউ আড়েঠারে, কেউ সরাসরি জানিয়ে দেন। তাঁদের আশঙ্কা ভোট ব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে পারে নওসাদের দল।
হপ্তা দুই আগে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় এসেছিলেন ভাঙড়ের বিধায়ক। আইএসএফের ডাকা সেই জনসভায় অপ্রত্যাশিত ভিড় হয়েছিল। সুযোগ নষ্ট না করে নওসাদ ওই মঞ্চ থেকে নিশানা করেছিলেন তৃণমূলকে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সঙ্গে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল আঁতাত করে চলছে বলে অভিযোগও করেছিলেন তিনি। রাজ্যের শাসকদল বিরোধী সংযুক্ত মোর্চা জোটের অন্যতম মুখ নওসাদ প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, লোকসভা নির্বাচনে তিনটি আসনেই প্রার্থী দেবে আইএসএফ। সেই সভার পরে আইএসএফ চর্চার বিষয় হয়েছে মুর্শিদাবাদে।
তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক, নেতা মনে করেন “মুসলিমদের ঢালাও ভোটে বিধানসভায় জেলার ২২ টি আসনের মধ্যে ২০টি জিতেছে তৃণমূল। কিন্তু জেতার পরেই নেতাদের ভোল বদলেছে। মানুষের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। সেই ফাঁকে ভোটারদের একাংশ আইএসএফে ভরসা খুঁজতে পারে।”
হরিহরপাড়া বিধানসভা আসনটি মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসনের মধ্যে পরে। এই আসনে ২০১৯ সালে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন তৃণমূলের আবু তাহের খান। ওই ভোটে সেবার বিজেপির প্রার্থী ছিলেন তৃণমূলের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। সেবার বিজেপি হেরে গেলেও হিসেব বলছে তাদের ভোট বৃদ্ধি পেয়েছিল প্রায় দশ শতাংশ। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসন জিতেছে বিজেপি। কিন্তু পরবর্তী পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি দাঁত ফোটাতেই পারেনি জেলায়।
এই অবস্থায় দলের পক্ষে ভোট টানতে হলে আইএসএফকে হেলাফেলা করলে চলবে না বলেই মনে করেন হরিহরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মীর আলমগীর ওরফে পলাশও। তবে তিনি এদিন বলেন, “জেলায় মাটি পেতে ধর্মের সুড়সুড়ি দিচ্ছে বিজেপি, একই খেলা খেলছে আইএসএফও। এক মুদ্রার দুই পিঠ এই দুটি দল। এরা কৌশলে হিন্দু ও মুসলিমদের ভোট ভাগাভাগিতে টানছে। সেই কৌশল বাস্তবে টিকবে না।”আলমগীরের দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নওসাদ বলেন, “আইএসএফের রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে একটাও এমন শব্দের কথা তৃণমূল বলুক যার দ্বারা কোনও ধর্মকে প্রভাবিত করা বা কোনও ধর্মকে সেই শব্দ দ্বারা অবমাননা করা হচ্ছে? আইএসএফ জাত ধর্ম নির্বিশেষে নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত করবার জন্য রাজনীতিতে এসেছে। তাই সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষ আমাদের পক্ষে আসায় তৃণমূলের গাত্রদাহ হচ্ছে।” বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অপূর্ব সরকার আবার বলছেন, “একুশের নির্বাচনে সিপিএম কংগ্রেস আইএসএফকে ব্রিগেডে দেখেছি। সিপিএম- কংগ্রেস বুঝে গিয়েছে মুর্শিদাবাদে ওদের কিছু হবে না। ওদের সৈন্য কমে গিয়েছে তাই আইএসএফকে ধার করে মুর্শিদাবাদে পাঠাচ্ছে।”সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বলছেন, “ ভোটে হারবার আতঙ্ক থেকেই তৃণমূল বাজে বকছে। ওই ভয় থেকেই পঞ্চায়েতে পুলিশ দিয়ে নির্বাচন করিয়েছে। সিপিএম আছে কি নেই তা নির্বাচন এলেই টের পাবে তৃণমূল।” জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “ আইএসএফ তাদের সংগঠন বাড়াতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সভা করছে। এতেই তৃণমূল ভয় পেয়েছে। ওরা ভাবে মুসলিম ভোটে ওদের একচেটিয়া অধিকার। এটা ভুল ধারণা। রাজ্যে বাম কংগ্রেস জোটের শরিক হয়ে আইএস এফ কোথাও কোথাও লড়াই করেছে ঠিকই কিন্তু তাই নিয়ে কংগ্রেস কখনও ভয়ও পায় নি, আহ্লাদিতও হয়নি।” নওসাদ ও বলেন, “ আমাদের নিজেদের পরিচয় আছে কারও লেজুর ভিত্তিক রাজনীতি করে না আইএসএফ। এটা ঠিক একুশের নির্বাচনে সংযুক্ত মোর্চায় একটি দল হিসেবে আইএসএফ অংশ নিয়েছিল। এইটুকুই। কিন্তু জনগনের সুরক্ষার জন্য আইএসএফ যা করছে তা তার আইডোলজিকে সামনে রেখেই করছে।”