Murshidabad News উৎসবে ছুটি নেই। বহরমপুর থানার সাড়ে সাত লক্ষ বাসিন্দার নিরাপত্তার দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে। বহরমপুর শহরে পুজোর কয়েক দিন খুব ভিড় হয়। মুর্শিদাবাদ MURSHIDABAD জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই আসেন দুর্গা প্রতিমা ও মণ্ডপ দেখতে। এই সময় নাওয়া খাওয়া ভুলে পুলিসকর্মীদের পাহারা দিতে হয়। সামলাতে হয় আইন শৃঙ্খলা। তার সঙ্গে পুজোর ভিড়ের জন্যে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সরকারিভাবে এই সময় পুলিসকর্মীদের ছুটি থাকে না। অনেককেই পরিবার থেকেও দূরে থাকতে হয়।
বহরমপুর থানার আইসি উদয়শংকর ঘোষ Shri Uday Sankar Ghosh এরকমই একজন। এই সময় তিনি পরিবার থেকে দূরে। বহরমপুরবাসীর নিরাপত্তার জন্যে উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন। দুর্গাপুজোয় যাঁদের ছুটি নেই তাঁদের মধ্যে অন্যতম পুলিসকর্মীরা। পুজোর সময় কি ছোটবেলার কথা, পরিবারের সঙ্গে পুজো কাটানোর কথা মনে পড়ে না? নিয়ম শৃঙ্খলায় বাঁধা পুলিস আধিকারিকের ভাষাতেই আইসির জবাব, ”আমার থানা এলাকার সাড়ে সাত লক্ষ বাসিন্দাই আমার পরিবার। তাঁরা ভালোভাবে পুজো দেখতে পারলে আনন্দ হয়। পুজোর জন্যে দুই তিন মাস আগে থেকে পরিকল্পনা করতে হয়। সবাই যেন নিরাপদে পুজো দেখে বাড়ি ফেরে তা দেখতে হয়”।

Murshidabad News নদীয়ার গ্রাম থেকে পড়ার জন্যে গিয়েছিলেন কলকাতায়। সেসব স্মৃতি যে ভিড় করে না তা নয়। মনে পড়ে কলেজ স্কোয়ারে লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ঠাকুর দেখার কথা। মহম্মদ আলি পার্ক, বাগবাজার সর্বজনীন থেকে কলকাতায় বড়-বড় মণ্ডপে ঠাকুর দেখার কথা। সন্তানের স্কুলের জন্যে পরিবার সঙ্গে থাকতে পারে না। পুজোর সময় আত্মীয়-স্বজন যে ফোন করেন না তা নয়। ব্যস্ততার মধ্যে তাঁদের ফোন ধরাই হয়ে ওঠে না এই সময়। অষ্টমীর দিন বিকেলে ‘মধ্যবঙ্গ নিউজ’ এর প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার সময় আইসির বক্তব্য,”আমার সন্তানরা স্কুলে পড়ে। বারবার স্কুল পরিবর্তন করা সমস্যা। তারা বুঝে গিয়েছে আমার বাবা শুধু আমাদের বাবা নয়। পাবলিক সার্ভেন্ট। সবার কথা তাঁদের শুনতে হয়। অনেকের কাজ করতে হয়”। এবারের পুজো নিয়ে তিনি বলেন, ”বহরমপুরে এখনও পর্যন্ত সবাই নির্বিঘ্নে ঠাকুর দেখেছেন। শুধু বহরমপুরেই ২০০-র বেশি দুর্গা পুজো হচ্ছে। ৪০০-জনের বেশি পুলিসকর্মী (সিভিক সহ) পুজোয় নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। সকাল ৬ টা পর্যন্ত পুলিসকর্মীদের ডিউটি করতে হয়”।
শুধুই পুলিস নয়। পুজোয় ছুটি নেই দমকলকর্মী, ডাক্তারের মতো জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের। কোথাও অগ্নিকান্ড হলে দ্রুত ছুটতে হয় দমকলকর্মীদের। সেজন্যে দমকলকর্মীদের ছুটি এখন বাতিল থাকে। বহরমপুরে দমকল অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার পুজোর সময় এখনও পর্যন্ত শহরে কোনও অগ্নিকান্ড ঘটেনি। তিনটি শিফটে দমকল কর্মীরা ডিউটি করছেন। হাসপাতালে যেসব ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন তাঁদের অনেকের পুজোয় কোনও ছুটি নেই। যারা পুজো করেন, ঢাক বাজান তাঁরা অনেকেই এই পুজোর পাঁচ দিন পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারেন না। ফলে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে প্রিয়জন ছাড়াই তাঁদের কাটাতে হয়।

Murshidabad News আজ মহাষ্টমী। পুজো মণ্ডপ থেকে মন্ত্রধ্বনি ভেসে আসছে। নানা রঙের সাজে রাস্তায় নেমে পড়েছেন সবাই। অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়ার জন্যে সকাল থেকেই কে কী পোশাক পড়বেন তা নিয়ে দিনভর প্রস্তুতি চলেছে। অষ্টমীতে বহরমপুরবাসীও রাত জাগেন। বাড়তি উন্মাদনা থাকে। সন্ধ্যার পর রাস্তায় নেমে পড়বেন বাড়তি পুলিসকর্মীরা। রাতের বহরমপুরে নজরদারির জন্যে। যাতে সবার পুজো নির্বিঘ্নে কাটে। তাঁদের পরিবার তখন অন্য কোথাও প্রিয়জন ছাড়াই হয়তো পুজো মণ্ডপে থাকবেন। কারণ উৎসবে তাঁদের ছুটি নেই।