Murshidabad District Library ঋত্বিক দেবনাথ, বহরমপুরঃ বর্তমান দ্রুত ডিজিটালের যুগে। মুর্শিদাবাদে এখনও এমন একটি জায়গা আছে। যেখানে বইয়ের নিরন্তর মুগ্ধতা মন এবং হৃদয়কে ছুঁয়ে চলেছে। এমন একটি জায়গা যেখানে মানুষ খুঁজে পাই ইতিহাসের গন্ধ এবং বর্তমান পরিস্থিতি এই দুটির সামঞ্জস্য। কথা হচ্ছে মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম পুরোনো গ্রন্থাগার। মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগারের।
জেলার অন্যতম পুরনো গ্রন্থাগার এটি। যদিও জেলার প্রথম গ্রন্থাগার ছিল ১৮৬৪ সালে তৈরি হওয়া ‘নিজামত লাইব্রেরি’। পান্ডুলিপি সহ প্রায় ৮০০০ বইয়ের সম্ভার ছিল সেই সময়ে। ইংরাজি সহ আরবি, ফার্সি ও উর্দুভাষার দুষ্প্রাপ্য বই নথির পাশাপাশি ছিল দেশ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত ম্যাগাজিনও।
প্রাচীনত্যের দিক থেকে দুই নম্বরে আসে ‘জেলা কালেক্টরেট লাইব্রেরি’। এই লাইব্রেরিতে প্রাচীন পুঁথি থেকে আইনি দলিল দস্তাবেজের বিপুল সম্ভার রয়েছে।
নিজামত লাইব্রেরি বা জেলা কালেক্টরেট গ্রন্থাগার, কোনটাই সাধারণের পাঠাগার ছিল না। সাধারণ মানুষের বই পড়ার কথা ভেবে জেলায় প্রতিষ্ঠা হয় ‘গ্র্যান্টহল ক্লাব লাইব্রেরি’।
এরপরে দীর্ঘ লড়াই আন্দোলনের পরে ১৯৫৬ সালে মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়, ‘মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগার’। শুরুতে এই গ্রন্থাগারের নাম ছিল ‘মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র জেলা গ্রন্থাগার’। প্রথমে এই গ্রন্থাগার বর্তমান ব্যারাক স্কোয়ারের পশ্চিম প্রান্তে ছিল না। প্রতিষ্ঠাকালে বহরমপুর শহরের উত্তরে সৈদাবাদে মহারাজা নন্দীর বাসভবনে প্রতিষ্ঠা হয় জেলা গ্রন্থাগারের। সেই সময়ে হাজার খানেক মূল্যবান বইও রাজপরিবারের তরফে দান করা হয়। শুরুতে প্রায় ১৫ হাজার বই ছিল। পরে এই গ্রন্থাগার নাম ও স্থান উভয়ই পরিবর্তন করে নতুনভাবে স্থাপিত হয় ব্যারাক স্কোয়ারের পশ্চিম পাড়ে। নাম হয় ‘মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগার’।
বর্তমানে দেড় লক্ষ্যের বেশি বই রয়েছে এই গ্রন্থাগারে। এই ডিজিটাল যুগে কাগজের পাতার স্বাদ নিতে। প্রতিনিয়ত ফিরে আসছেন পাঠকরা। ফলে প্রতি বছর বাড়ছে পাঠক সংখ্যা। জানাচ্ছেন মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান।
মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান তপন কুমার ঘোষ জানান, “দিনদিন আমাদের লাইব্রেরিতে পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে। এই মোবাইলের যুগে মানুষ প্রতিনিয়ত আসছেন এখানে বসে পড়ার জন্য। কারণ এখানে বসে পড়ার আমেজ আছে”।
২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে পাঠকের সংখ্যা বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ। এক বছরে শিশু থেকে সাধারণ পাঠকের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দু’হাজারের বেশি। প্রতিনিয়ত বাড়ছে এই সংখ্যা। লাইব্রেরী খোলা হয় সকাল ১২টা ৩০ এবং বন্ধ বিকেল ৬টা ৩০। এই ৬ ঘণ্টায় শতাধিক পাঠক বই পড়তে আসেন। পাশাপাশি বই নিয়ে যান বাড়িতে।
এই গ্রন্থাগারের রয়েছে ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেকশান। যেখানে বহু চাকরিপ্রার্থীরা বসে নিজেদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের দাবি ডিজিটাল যুগে আমরা মোবাইল ব্যবহার করি ঠিকই। কিন্তু পড়াশোনার আমেজ এখানে এসেই তৈরি হয়।
চাকরিপ্রার্থী রথীন রজক জানান, “আমরা সবাই বাড়িতে পড়াশোনা করি। কিন্তু বাড়িতে থাকলে একটানা পড়ায় মন থাকেনা। কিন্তু এখানে আসলে সম্পূর্ণ উল্টো। পড়াশোনায় মন লাগে। আমার পড়ার সাথী আছে এখানে। জাদের সঙ্গে একসাথে বসে পড়ি। পাশপাশি যেটা যেটা চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দরকার সেই সমস্ত বই এখানে হাতের কাছে পাওয়া যায়। ফলে মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগার আমদের মতন পাঠকদের খুব সাহায্য করছে”।
ডিজিটাল পিডিএফ-এর থেকে কাগজের স্বাদ বেশি পছন্দ করেন পাঠকেরা। তাই বই পড়ার টানে বারবার ভিড় জমাচ্ছেন জেলার লাইব্রেরীতে। যদিও কিছু বছর আগে পর্যন্ত পাঠকের অভাবে ধুঁকছিল এই গ্রন্থাগার। তবে বর্তমানে পাঠকের ভালোবাসা। এবং পাঠকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াই। নতুন আশার আলো দেখছেন সবাই।