Murshidabad District : ১৯৪৪ সালে মুর্শিদাবাদকে “মা” ডেকে ‘মুর্শিদাবাদ বন্দনা লিখেছিলেন এই কবি

Published By: Madhyabanga News | Published On:

পবিত্র ত্রিবেদীঃ তিন টুকরো হচ্ছে মুর্শিদাবাদ জেলা। নতুন জেলা হলে কী ধরণের উন্নয়ন হবে হিসেব কষতে বসেছেন অনেকেই । জেলার নাম নিয়েও চলছে চর্চা। তবে জেলার অনেকেই বলছেন , ” ভাঙ্গুক জেলা ক্ষতি নাই, মুর্শিদাবাদ নাম থাকা চাই” । তবে এই সময়েই ফিরে আসছে বহু বছর আগে লেখা কয়েকটি লাইনঃ
” মুর্শিদাবাদ- চরণ তোমার বন্দিমা,
আজকে তোমায় কোন সুরেতে ছন্দিমা” ।
নতুন জেলায় মুর্শিদাবাদ নাম থাকতে হবে বলে পথে নেমেছে একাধিক রাজনৈতিক দল। বলা হয়, একসময় বাংলা, বিহার, ওড়িশার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ। এই জেলা নবাবের।প্রান্তিক, বিড়ি শ্রমিকদেরও স্বদেশভূমি। হাজারদুয়ারি, মুর্শিদাবাদ সিল্ক, ছানাবড়া থেকে নবাব সিরাজদউল্লা, রামেন্দ্রসুন্দরে গর্বিত মুর্শিদাবাদবাসী। ব্রিটিশ পিরিয়ডে সিপাহি বিদ্রোহের দামামা আগুনের ফুলকির মতো ছড়িয়ে পড়েছিল এখান থেকে।এই জেলায় স্কুল করে দিয়েছেন বিদ্যাসাগর, বঙ্গিয় সাহিত্য পরিষদের সম্মেলনে এসেছেন রবি ঠাকুর, প্রশাসনিক কাজে এসেছেন বঙ্কিমচন্দ্র। অবিরাম বয়ে চলা ভাগীরথীর অনেকটা ভূখণ্ড মুর্শিদাবাদ নিয়ে আবেগপ্রবন জেলাবাসী। এই জেলাকে ভেঙ্গে তিনটি জেলা করবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে উন্নয়নের স্বার্থে। প্রশাসনের এই পদক্ষেপে এটাই শাসক শিবিরের বক্তব্য। রাজনীতির বাইরে গিয়েও অনেকের প্রশ্ন, নতুন জেলাগুলির নামকরন কী হবে? কারন, নাম শুধু দুটি অক্ষর নয়। তা বহন করে ঐতিহ্য । এলাকার পরিচয় । তা নিয়ে নানা জল্পনা বাসিন্দাদের মধ্যে। অনেকের বক্তব্য, তিন জেলা হলেও প্রতিটির নামকরনে মুর্শিদাবাদ শব্দটি থাক।

পথে নেমেছে রাজনৈতিক দল। ঠিক কতটা আবেগ মুর্শিদাবাদকে নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে রয়েছে? ইতিহাসের দিকে তাকালে মুর্শিদাবাদের বিশিষ্ট কবি শৌরীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের নাম উঠে আসে । ‘মুর্শিদাবাদ বন্দনা’ কবিতাটি পড়লে তা বোঝা যায়। বহরমপুর থেকে প্রকাশিত ‘বোধোদয়’ পত্রিকার একটি বিশেষ সংখ্যায় প্রাবন্ধিক সাবিত্রী প্রসাদ গুপ্ত এই কবিতার কথা তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন।
কবি শৌরীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের “মুর্শিদাবাদ বন্দনা” কবিতায় বলা হচ্ছেঃ

” ওগো মুর্শিদাবাদ আমার সোনার মাটির মা।
ভুবন ঘুরে এমন দেশ আর কোথাও দেখতে পেলাম না।
আমার সোনার মাটি মা।
সারা বাংলার তুমি ছিলে স্বপনপু্রী মাগো,
সিরাজদৌল্লার তুমি ছিলে বুকের কলিজাগো
হিন্দু মুসলমানের তুমি মিলন মোহনা।
এই ভুবনের সকল মানিক মিলত তোমার হাটে
সুখের তপন ডুবল যে মা পলাশির এই মাঠে
শীর্না ভাগিরথী তারি বইছে বেদনা’।
১৯৪৪ সালে এই কবিতা লিখেছিলেন শৌরীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। কবি শৌরীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যর লেখা প্রবাসী, ভারতবর্ষ, মাসিক বসুমতী, দেশ ও অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কবি মুর্শিদাবাদকে মাতৃ রুপে বর্ননা করেছেন। এই যশস্বি বহুজনের অনু্রোধ সত্ত্বেও কলকাতাবাসী হননি। ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়েই কাশিমবাজারে নিজ গৃহে কাব্য রচনা করেছেন । কাশিম বাজারে ১৯০৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বঙ্গিয় সাহিত্য পরিষদের প্রথম সম্মেলনে শিল্পী শৌরীন্দ্রনাথ সভামঞ্চ, তোরণসজ্জা, অলঙ্করন এর দায়িত্ব পালন করেন।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৫৭ সালে ব্যারাক স্কয়ার ময়দানের উত্তর পশ্চিম কোনে একটি শহিদ বেদি তৈরি করে তাতে স্মারক ফলক স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। লেখার জন্যে ডাক পড়েছিল কাশিম বাজারের প্রাচীন এই চারণ কবির। বহরমপুরের সার্কিট হউসের সরকারি সভায় মুহুর্তে রচনা করলেন, ” স্বপ্ন হেথা টুটেছিল মহাস্বপ্ন আঁকি ।জীবনের মহামন্ত্রে বেঁধেছিল রাখি।পাষাণ শৃঙ্খল ভাঙি জাগিল সে নাম, শতবর্ষ পরে স্মরি রাখিনু প্রনাম”।
১৯৫৭ সালে মুর্শিদাবাদ বন্দনা সঙ্গীত রূপে পরিবেশিত হয়।
ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, জেলা ভাগ নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গেলে মুর্শিদাবাদের এইরকম গৌরবের সন্তানদের আবেগের কথা উঠে আসছে। আবার সেখানে অন্য জেলা কীভাবে ভাগ হয়েছিল সেগুলিও আলোচনাতে আনতে হব। অতীতে মুখসুসাবাদ , মুরশিদকুলি খাঁ কিংবা কী থেকে মুর্শিদাবাদ নামকরন হল তার ইতিহাস দেখতে হবে। নতুন জেলা হলে উন্নয়নে কী সুবিধা পাবেন মুর্শিদাবাদবাসী ভাবতে হবে তা নিয়েও।