শুভরাজ সরকার, মির্জাপুরঃ বালুচরি, স্বর্ণচরির সাথে টক্কর দিচ্ছে চোখ ধাঁধানো কপার জরি। সামনেই শারদউৎসব। তার আগে হারিয়ে যাওয়া শাড়ি ফিরিয়ে আনছেন মুর্শিদাবাদের মির্জাপুরের শিল্পীরা। এই এলাকা এখনও মুর্শিদাবাদ সিল্কের প্রাণ কেন্দ্র।
টেকসই, পরিবেশবান্ধব, ঐতিহ্যশালী মুর্শিদাবাদ সিল্ক নেহাত শাড়ি নয়। মুর্শিদাবাদ জেলার সংস্কৃতির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাগে জড়িত এই শাড়ির গল্প।
ইতিহাসের অনুসন্ধিৎসুরা জানাচ্চছেন, বালুচরি শাড়ির জন্ম আসলে মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জে। রেশম সুতোয় নজরকাড়া শাড়ি বুনতেন এই গ্রামের দক্ষশিল্পীরা। তবে ইতিহাসের আঁকাবাঁকা পথে হারিয়ে গিয়েছিল বালুচরি শাড়ি। পরবর্তীকালে এই শাড়ির অন্যতম কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায় মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর। কিন্তু হাল ছাড়েননি মুর্শিদাবাদের শিল্পীরা। তাঁতশিল্পীদের শ্রম, মেধার মিশেলে ফের বাজারে যায়গা করে নিচ্ছে মুর্শিদাবাদে হ্যান্ডলুম তাঁতে বোনা বালুচরী।
মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমার মির্জাপুর গ্রামে যেতে দেখা গেল, গ্রাহকের টানতে কপার জরিতে স্বর্ণচরী বুনছেন শিল্পীরা। তাতেঁর খটরখটর শব্দে শাড়ির পাড়, আঁচলে ফুটে উঠছে শকুন্তলার ছবি। কোনটায় হরিণশিশুকে আদর করছে শকুন্তলা। আবার কোন শাড়িতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বর কনের ছবি। কালো, নীল, সবুজ হরেক রঙের উপর জরির খেলা মুগ্ধ করছে ক্রেতাদের।
মির্জাপুরে শাড়ি কিনতে আসা দাস জানাচ্ছেন, এই গ্রামের শিল্পীদের দক্ষতা, দরদের কারণেই শাড়ির গুণমান অনেক ভালো। তাই এখানে শাড়ি কিনতে আসেন তিনি।
মির্জাপুরের বিজয়পুর সিল্ক খাদি সেবা সংস্থার কর্ণধার তাপস গুচিঁ জানাচ্ছেন, এই বছর সেরা মানের মুর্শিদাবাদ সিল্কের পাশাপাশি থাকছে রঙিন গরদ, কপার জরি, বালুচরি, স্বর্ণচরি শাড়ি। তিনি জানাচ্ছেন, রেশম গুটি থেকে সুতো বের করা, সেই সুতো ব্লিচ করা সবটাই করেন গ্রামের শিল্পীরাই। তারপর হাতে টানা তাঁতে বোনা হয় শাড়ি।