রাজ্য ও কেন্দ্রকে এক বন্ধনীতে রেখে ফরাক্কায় নজিরবিহীন আক্রমণ মীনাক্ষীর

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরাক্কাঃ চেনা অস্ত্র, কিন্তু ধারালো। ফরাক্কায় সোমবার সেই অস্ত্রেই কেন্দ্র ও রাজ‍্যকে এক বন্ধনীতে রেখে তীব্র আক্রমণ শানালেন ডিওয়াইএফের রাজ‍্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। নভেম্বর বিপ্লবের মাসেই ডিওয়াইএফ তাদের নয়া কর্মসূচি “ইনসাফ যাত্রা” শুরু করেছে কোচবিহার থেকে। শনিবার থেকে মুর্শিদাবাদ জেলায় শুরু হয়েছে হক আদায়ের সেই যাত্রা। সোমবার নিউ ফরাক্কা বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রা শুরু হয়ে ধুলিয়ান হয়ে সাজুর মোড়েও পথসভা হয়। প্রায় প্রত‍্যেক সভাতেই কখনও ব‍্যঙ্গ বিদ্রুপ তো কখনও খোলা তলোয়ারের ভঙ্গিতেই সমর্থকদের মন কাড়লেন মীনাক্ষী। রাজ‍্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর নাম নিলেন না মুখে। বললেন, “রাজ‍্যের সরকার কী করবে? ও তো বান্ধবীর খাটের তলায় টাকা নিতে ব‍্যস্ত।”

ফরাক্কায় হক আদায়ের দাবিতে বাম যুবদের পদযাত্রা

গত সাতদিনে ভিন রাজ‍্যে কাজে গিয়ে জেলার একাধিক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে নানান কারণে। সেই তথ‍্য পকেটেই ছিল নেত্রীর। সুযোগ মতো তা ব‍্যবহার করতে ভুললেন না। ফরাক্কার সভায় উপস্থিত খেটে খাওয়া গ্রামবাসীদের সামনে বললেন, “ কালীপুজোর রাতে যখন সব ঘরে আলো জ্বলেছে তখন ফরাক্কার এক গ্রামে কোনও আলো জ্বলেনি। কারণ বাপও গিয়েছিল কাজে। ব‍্যাটাও গিয়েছিল কাজে। বাপ, ব‍্যাটার ডেডবডি বাড়িতে মায়ের কাছে দিয়ে ফিরে গিয়েছে আবার ভিন রাজ‍্যে।” কারণ এই রাজ‍্যে কাজ নেই। এই জেলায় কাজ নেই বলে রাজ‍্য সরকারের সমালোচনা করেন‌। “ইনসাফ যাত্রা”য় রাজ‍্য ও দেশের একাধিক ইস‍্যু থাকলেও বাম যুবরা স্থানীয় সমস‍্যাকে বেশি করে গুরুত্ব দিয়েছেন। সেই সূত্রেই এই জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষার দাবি তুলেছে তারা। মীনাক্ষী এদিন বাবা ও ছেলে একসঙ্গে ভিনরাজ‍্যে কাজে যাওয়ার কথা বলে সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন বলে মনে করছে রাজনীতি মহল।

ফরাক্কার বেনিয়াগ্রামে আম বাগান, লিচু বাগানের উপর দিয়ে  ঝাড়খন্ড হয়ে বাংলাদেশে হাইটেনশন তার নিয়ে যাওয়ার বিরোধীতা করেছিলেন গ্রামবাসীরা। তা সত্ত্বেও থেমে থাকেনি প্রকল্প রূপায়ন। রাজ‍্য সরকার সেই ঘটনায় মুখ খোলেনি। রাজ‍্য ও কেন্দ্রের মধ‍্যে বোঝাপড়ার জন্যই রাজ‍্য কিছু করেনি। কৌশলে গ্রামবাসীর আবেগ উসকে মীনাক্ষী এদিন বলেন, “যে রাস্তা দিয়ে ওই তার চলে গিয়েছে তার দু’ধারে আমার লোকের বসবাস। সেখানে দালান আছে। তুলসী মন্দির আছে। আর ঘরের বাপকে কবর দেওয়ার মাজার আছে। তার মধ‍্যে দিয়ে চলে গিয়েছে হাই টেনশন তার। একটা ভিজে কাপড় মেলতে গেলে তারে লেগে গিয়ে  ইলেকট্রিকের শক লেগে মরে যাবে।” বললেন “ শিক্ষায় রাজ‍্যের ২৩টি জেলার মধ‍্যে মুর্শিদাবাদ ১৬ নম্বরে। কেন? সরকার স্কুল তুলে দিয়ে বাচ্চাদের ইট ভাটায় পাঠিয়ে দেওয়ার ব‍্যবস্থা করছে। লেখাপড়া না শিখলে, হাতের কাজ না জানলে কাজ পাবে না। উল্টে এনটিপিসির মতো সংস্থার স্থায়ী কর্মীদের সহযোগী হবে। শ্রমিক তৈরি হবে। রাজ‍্য সরকার সেটাই করছে।”

কেন্দ্র সরকার ব‍্যঙ্ক, রেল থেকে বিএসএনএল সব যেমন বেচে দিচ্ছে তেমনি পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের ও ‘সাফাই’ করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি করেন মীনাক্ষী। নরেন্দ্র মোদীর নাম না করে বলেন, “ তোমার বাপের জমিদারি আছে যে সে ভয় দেখাচ্ছ?” এরপরেই বলেন, “ কারা নিয়ে এসেছে এদের। এদের জন‍্যই তৃণমূল চুরি করতে পারছে। চাপরাশি থেকে আইএএস, আইপিএস থেকে মন্ত্রী সেটিং করে রেখেছে। কালীঘাটে গিয়ে ২৫ শতাংশ দিয়ে আসলেই দুর্নীতি করা সহজ হয়ে যায়। দুর্নীতি করা কঠিন। চাকরি দেওয়া সহজ।” স্মার্ট মিটার বসানোর প্রতিবাদ বামেদের ঘোষিত কর্মসূচি। এদিন তাও ছুঁয়ে গিয়েছেন এই যুব নেত্রী। বারবার মুর্শিদাবাদের মাটির প্রশংসা করেছেন। বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। আর তা  বামেরাই করতে পারে। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে জেলার তিনটি আসনের মধ‍্যে একটি আসন ও যদি ভাগে পায় বামেরা সেই আসনেই জিতে আসা আপাত লক্ষ‍্য তাদের। মীনাক্ষীর আর্জি ভোটব‍্যাঙ্কে কোনও প্রভাব ফেলবে কি না তা আপাতত সময়ের উপরেই ছেড়ে দিচ্ছেন রাজনীতির কুশলীরা।