নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ প্রশ্ন সহজ হওয়ায় পরীক্ষার্থীরা বুধবার ভালোভাবেই উতরে গেলো মাধ্যমিকের ইতিহাস পরীক্ষা। এদিন সকাল দশটা থেকে জেলার ১৫৩টি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হয়। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। ওইদিন বাংলা ও পরের দিন ছিল ইংরেজি। সেই দুটি পরীক্ষা নিয়েও অবশ্য কোনও অভিযোগ ছিল না পড়ুয়াদের। বেলা একটায় এদিনের ইতিহাস পরীক্ষা দিয়ে বেড়িয়েও পড়ুয়ারা খুশি। তাদের দাবি, “প্রশ্নপত্র সহজ হয়েছে।” বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু মন্ডলও বলেন, “সহজ প্রশ্ন হয়েছে। যাঁরা পড়াশোনা করেছে তারা তো বটেই, সাধারণমানের পড়ুয়ারাও ৬০ শতাংশ নম্বর পাবে।” বহরমপুর জেএনএকাডেমির শিক্ষক মিলন শেখ বলেন, “যারা খুঁটিয়ে বই পড়ে গিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বেশি নম্বর পাওয়া এই প্রশ্নে কঠিন নয়।”
২০১৭ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা বদল আনে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তারপর থেকে ইতিহাস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রেও বদল হয়েছে। বদলে যাওয়া প্রশ্নপত্রে MCQ থাকে কুড়িটি। প্রত্যেকটি প্রশ্নের মান এক করে। সবকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। আবার এক নম্বরের কখনও শূন্যস্থান পূরণ, কখনও একটি শব্দে উত্তর, কখনও বাম দিকের প্রশ্নের সঙ্গে ডান দিকের মিল করার মতো খুব সংক্ষেপে উত্তর লেখার প্রশ্ন থাকে কুড়িটি। তারমধ্যে ১৬টির উত্তর দিতে হয়। প্রত্যেকটির মান এক করে। এরপর দু নম্বরের SAQ থাকে ১১টি। ১৬টি প্রশ্নের মধ্যে থেকে বেছে উত্তর দিতে হয়। এরপর চার নম্বরের ছটি প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে হয়। ৮ নম্বরের একটি প্রশ্নের উত্তর লিখলে পুরো নম্বই নম্বরের উত্তর দিতে পারবে একজন পড়ুয়া। এই ধাঁচে চলতি বছর যাঁরা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন তাঁরা আগেই নিজেদের প্রস্তুতি যাচাই করে নিয়েছে। জীবনের সবথেকে বড় পরীক্ষায় বসার আগে স্কুলের টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছে। কৃষ্ণেন্দু বলেন, “ আমাদের স্কুলের যে প্রশ্ন এসেছিল টেস্টে, পড়ুয়ারা সেই প্রশ্নের নম্বইভাগ প্রশ্ন কমন পেয়েছে ইতিহাসে।”
তবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের বদল আনার পর ২০২০ সাল থেকে করোনা কারণে বেলাইন হয়ে যায় শিক্ষা। সরকারি নিয়মে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের পাশ ফেলের আওতায় আনা হয় না। কিন্তু নবম ও দশম শ্রেণিতে পাশ ফেল চালু আছে। করোনার কোপে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ঠাঁই হয় ভার্চুয়াল মাধ্যমে। ঘরবন্দি পড়াশোনায় অভ্যস্থ হতে হয় শুধু পড়ুয়াদের নয়, শিক্ষক থেকে অভিভাবক সকলকে।
‘নাম-কা- ওয়াস্তে’ পরীক্ষা নেওয়ায় ফেলের ভীতি কেটে যায় পড়ুয়াদের মধ্যে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের মতো পরীক্ষাও উতরে যায় ছেলেমেয়েরা কোনও প্রশ্নের মুখোমুখি না হয়ে। অবস্থার বদল যখন হল, একটু একটু করে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া শুরু হল যখন পড়ুয়াদের, শিক্ষকরা টের পেলেন, ভার্চুয়াল মাধ্যমে পড়াশোনার সুফল যতটা মিলেছে, মুঠো ফোনে আসক্তি বেড়েছে পড়ুয়াদের তার থেকে ঢের বেশি। স্বাভাবিকভাবেই একজন পড়ুয়াকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করানোর কাজটা সহজ ছিল না বলে জানাচ্ছেন বহরমপুর জেএনএকাডেমির শিক্ষক শতদল দাস তালুকদার। তাঁর দাবি, “ করোনার প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত পড়াশোনা ধীরে ধীরে সেরে উঠলেও ঝাঁকুনিটা রয়েই গিয়েছে। ” সেই ঝাঁকুনি কাটিয়ে পড়াশোনার শক্তপোক্ত ভিত তৈরির গাঁথনির কাজটি শুরু করেছেন শিক্ষকরা তবে খুব সতর্কভাবে।