বেদান্ত চট্টোপাধ্যায়, বহরমপুরঃ প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সকলেই চিন্তিত। প্রশাসন মাঝে মধ্যেই নিদান দেন প্লাস্টিক বন্ধের। তাহলে প্লাস্টিকের বিকল্প ঠিক কী? বিকল্প হতে পারে অনেক কিছুই। তবে শহরের বুকে “প্লাস্টিকের কনটেনার” কে টেক্কা দিয়ে আজও শাল পাতায় মিষ্টি খাইয়ে ক্রেতাদের আনন্দ দিচ্ছেন নিমাই মোদকের মিষ্টি।
বহরমপুর শহরের খাগড়া ফাঁড়ির ঠিক উল্টো দিকে একটা ছোট্ট ঘর। দোকানে ঢুকতেই চোখে পড়বে পাশাপাশি সাজানো পুরোনো কাঠের চেয়ার। তার উল্টো দিকেই ভিন্টেজ মডেলের একটি মিষ্টির শোকেসে সাজানো বিভিন্ন রকমের মিষ্টি। হরেক রকম বললে হয়তো ভুল হবে ; যা মিষ্টি সাজানো রয়েছে তা প্রায় সব বাঙালিই চেনেন। এই দোকানের প্রতিষ্ঠাতা নিমাই মোদক। ২০০৯ সালে নিমাই মোদক প্রয়াত হন। বর্তমানে দোকান সামলান “নিমাই ময়রার” পুত্র নিতু মোদক। “মিষ্টি কে ভালোবেসেই এই দোকানে এসেছিলাম। বাবার হাতেই শেখা মিষ্টি বানানো। বাপ- ঠাকুরদার হাতে গড়া ব্যবসা কে যত দিন পারবো আগলে রাখবো”, বলছেন নিতু মোদক।
রকমারি আর দামি মিষ্টির যুগে আজও এই দোকানে মাত্র ৬ টাকাতেই মেলে রসগোল্লা, মালাই বরফি, গোলাপজামুন আরও অনেক মিষ্টি। উপরি পাওনা শাল পাতায় মিষ্টি খাওয়া। নিতু মোদক জানাচ্ছেন, “শাল পাতায় প্লাস্টিকের থেকে কম খরচ। আর বর্তমানে প্লাস্টিক দূষণ যেভাবে হচ্ছে তাতে প্লাস্টিক আমার পছন্দ না। আর এই শাল পাতায় করে ক্রেতাদের মিষ্টি দিতে আমি ছোট থেকেই দেখে আসছি। ভালো লাগে।”
তবে মাঝে মাঝে শাল পাতার যোগান দিতে একটু মুশকিল হয় ঠিকই। তবুও এই ঐতিহ্য কে আজও বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে চলেছেন “নিতু ময়রা।”
শহরের এক প্রান্তে, খাগড়া চত্বরে ছোট্ট এই দোকান। দেওয়ালের গায়ে জমেছে কালি। তবু হারিয়ে যায়নি ঐতিহ্য। স্থানীয় বাসিন্দা অনির্বান মল্লিক বলেন, ”আমি আগে বাবার সাথে মিষ্টি কিনতে আসতাম এই দোকানে। এখনো আসি। সন্ধ্যাবেলায় আসলে উপরি পাওনা গরম মিষ্টি।” ওনার কথা শেষ হতে না হতেই নিতু বললেন, ”এখন সব দোকানেই, অনেক চাকচিক্য। আমার নেই। এই মিষ্টি বিক্রি করেই আমার পেট চলে। মিষ্টি বানাতে আর মানুষ খাওয়াতে ভালোবাসি। যতদিন সম্ভব বানাবো। এই শাল পাতাতেই মিষ্টি খাওয়াবো সবাই কে।”
এখনো হয়তো সারা পৃথিবী প্লাস্টিকে ভরে ওঠেনি, নিতু মোদকে এই দোকান সে কথাই বলে। প্লাস্টিক আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস হয়ে উঠেছে এটা সত্যি। তবে তার বিকল্পও রয়েছে। শাল পাতায় গরম গরম রসগোল্লা বা পান্তুয়া গল্প বলে পুরোনো বহরমপুর শহরের। এ যেন সত্যি নস্টালজিয়া। পরিবেশ বাঁচাতে এ যেন এক পদক্ষেপ নেওয়া। সবাই যেখানে প্লাস্টিকে মুড়ে রয়েছে। সেখানেই দেখা যাচ্ছে কিছু নিতু মোদকের মতো ব্যাতিক্রমীদের।