রেজাউল করিম ভোটের ময়দানে নেমে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যেভাবে সৌজন্য ও শিষ্টাচার দেখিয়েছিলেন সেই ঘটনা আজও ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে। তবে ২০২৪’এর নির্বাচনে কি দেখা যাবে সেই সৌজন্যের ছবি। নাকি মুর্শিদাবাদ আছে মুর্শিদাবাদেই ? লিখলেন সাংবাদিক প্রাণময় ব্রহ্মচারী।
Loksabha Election: ১৯৭১ সাল । বহরমপুর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক রেজাউল করিম । তার বিরুদ্ধে আরএসপির ১৯৫২ সাল থেকে বারবার জিতে আসা সেই ত্রিদিব চৌধুরী । দুজনেই স্বাধীনতা সংগ্রামী । দুজনেই সজ্জন মানুষ। রেজাউল করিম ভোটের ময়দানে নেমে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যেভাবে সৌজন্য ও শিষ্টাচার দেখিয়েছিলেন সেই ঘটনা আজও ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে । কী সেই ঘটনা ? রেজাউল করিম বক্তৃতায় বলেছিলেন, “ আমাকে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে, যদি আমাকে ও আমার দলকে পছন্দ হয় তবে ভোটদেবেন । তবে আমার বন্ধু ঢাকুও ( ত্রিদিব চৌধুরীর ডাক নাম) ভোটে দাঁড়িয়েছে উনি আমার থেকেও অনেক যোগ্য ব্যক্তি, উনি গোয়া স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রণী নেতা, ওনার অনেক অবদান আছে তাই তাকেও ভোট দিতে পারেন”। এই ব্যতিক্রমী শিষ্টাচার কি এখন আশা করা যায় ?
রাজনৈতিক কুকথা, অশিষ্ট মন্তব্য, বিরোধী প্রার্থীকে শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে ইংরেজিতে below the belt শব্দাঘাত করা এমনকি অশ্লীল শব্দোচ্চারণের বন্যা বয়ে যাওয়ায় এখনকার নির্বাচনের ময়দানি ভাষার লব্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
রেজাউল করিম বক্তৃতায় বলেছিলেন, “ আমাকে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে, যদি আমাকে ও আমার দলকে পছন্দ হয় তবে ভোটদেবেন । তবে আমার বন্ধু ঢাকুও ( ত্রিদিব চৌধুরীর ডাক নাম) ভোটে দাঁড়িয়েছে উনি আমার থেকেও অনেক যোগ্য ব্যক্তি, উনি গোয়া স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রণী নেতা, ওনার অনেক অবদান আছে তাই তাকেও ভোট দিতে পারেন”।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রীকান্ত উপন্যাসের বাক্যবন্ধ ধার করিয়া বলা যায়, “কে কতো কুৎসিত ভাবে পরস্পর বিরোধী দল ও প্রার্থীদের আক্রমণ করিয়া নির্বাচন কমিশনের কতবারফ কনডাক্ট ভাঙিতে পারেন ও কেস খাইতে পারেন তাহার য়েন লড়াই চলিতেছে”।
তবে রবিবার মুর্শিদাবাদ ফের সেই শিষ্টাচার দেখলো । মুর্শিদাবাদ লোকসভার যুযুধান দুই প্রার্থীকে দেখা গেল একসঙ্গে। সিপিএমের মহম্মদ সেলিম হরিহরপাড়া বিধানসভা এলাকায় প্রচার করছেন সাথে রয়েছেন অনেক দলীয় নেতা-কর্মী, তারা শ্লোগান দিচ্ছিলেন, সেই রাস্তা দিয়েই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী আবু তাহের খান ও গাড়ি করে যাচ্ছিলেন
তাকে দেখেই সিপিএম কর্মীরা আরও গলার শিরা ফুলিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে , পুলিশের আশংকা কি হয়, কি হয়, সংঘর্ষ বাধবে না তো? কিন্তু না।
সেলিম, তাহেরকে দেখেই কর্মীদের থামিয়ে দিলেন ও তার গাড়ির মধ্যে প্রায় মাথা ঢুকিয়ে পরস্পর হাসিমুখে সাক্ষাৎ করলেন, করমর্দন করলেন ও দলীয় কর্মীদের ওনার গাড়ির কনভয় এর জন্য রাস্তা ফাঁকা করতে নির্দেশ দিলেন।
ফলে হাসিমুখেই আবু তাহের খান ও সপার্ষদ তার গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা দিলেন । পুলিশ প্রশাসন ও হাঁফ ছেড়ে বাচলো । এটাই তো চাই । এই পরস্পর শিষ্টাচার প্রদর্শন চলুক না ।
ভোট এলেই মুর্শিদাবাদ জেলা রক্তাক্ত হয়, লাশের পাহাড় ডিঙিয়ে বিজয়ীরা জয়মাল্য গলায় পরেন এটাই তো এখন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে । কিন্তু মুর্শিদাবাদে সাগরদীঘি উপনির্বাচন রক্তপাতহীন ভাবেই সম্পন্ন হয়েছিল । এবারের নির্বাচন কি সেই পথে হাটতে পারেনা ?
না কি আবার সেই কুকথা, মারপিট, বোমা গুলির আওয়াজের ফলে প্রতিবেশীর উইকেট পতনের (মুর্শিদাবাদের কথ্য ভাষায় রাজনৈতিক খুন হওয়ার পরিভাষা) সাক্ষী থাকবে আর মিডিয়া কোন দলের বেশি উইকেট পড়ল তা গুনতেই থাকবে? পুন: মূষিকো ভব : হবে? এটাই এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে!
তবে এই শিষ্টাচারের রেশ কাটতে না কাটতেই মুর্শিদাবাদে বিদায়ী সাংসদ আবু তাহের খান ভগবানগোলার হাবাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তসলিমা বিবি কে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠলো । আবু তাহের খান বলেন, “ সাত দিন সময় দিলাম তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে না আসলে ভোটের পর ভয়ংকর রুপ দেখতে বাধ্য হবে”। এই ঘটনায় সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম আবু তাহের খানের সমালোচনা করে বলেন, “ উনি ভোটে হারার আশংকায় এক মহিলা প্রধানকে হুমকি দিচ্ছেন, এটাই তো তৃণমুলের ভোটে জেতার সংস্কৃতি”। এব্যাপারে তিনি নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানিয়েছেন । প্রমাণ হলো মুর্শিদাবাদ আছে মুর্শিদাবাদেই !
প্রতিবেদক সাংবাদিক। মতামত ব্যক্তিগত।